দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শারীরিক অসুস্থতার কারণে ব্রিগেডে উপস্থিত থাকতে পারছেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন তিনি। বুদ্ধবাবুর বলেন, ‘ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্নভাবে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গেছেন। বড় সমাবেশ হবে। এরকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন, আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দী যা কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।’ দেখুন ভিডিও:

https://www.facebook.com/cpimwbpc/videos/2827935680789271/

হাইলাইটস্

  • বাম-কংগ্রেসের যৌথ ব্রিগেড
  • থাকছে আইএসএফ সহ অন্যান্য দল
  • শারীরিক অসুস্থতার কারণে থাকছেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
  • দলে দলে যোগ কর্মী সমর্থকেরা
  • বাম-কংগ্রেসের যৌথ ব্রিগেড। গতকাল রাত থেকে সমাবেশ উপলক্ষে জমতে শুরু করেছে ভিড়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন কর্মী সমর্থকেরা। তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য এবং বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। এছাড়াও এদিনের সমাবেশ থাকছে আইএসএফ সহ অন্যান্য দল।

ব্রিগেডে হুঙ্কার আব্বাসের:

যেন এলেন, বললেন আর জয় করলেন। তিনি পা রাখতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ব্রিগেড। সংক্ষিপ্ত অথচ জোরাল বক্তব্যে মঞ্চ কাঁপালেন আব্বাস সিদ্দিকি । বললেন, ‘যেখানে যেখানে বাম প্রার্থীরা দাঁড়াবেন, বুকের রক্ত দিয়ে তাঁদের জেতাব।’ পাশাপাশি, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন কংগ্রেসকে। ‘তোষণ নয়, ভাগীদার’ হতে এসেছেন বলে সাফ বার্তা দিলেন হাত শিবিরকে। বন্ধুত্ব করতে এলে তাঁর দরজা খোলা রয়েছে বলেও এদিন ব্রিগেড মঞ্চ থেকে বলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা। জোটের ব্রিগেড থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন আব্বাস। তাঁর কথায়, ‘মমতাকে জিরো করে দেখিয়ে দেব।’

এদিন অধীর চৌধুরীর বক্তব্য চলাকালীনই ব্রিগেডে প্রবেশ করেন ভাইজান। সমর্থকদের উল্লাশের জেরে মাঝমধ্যে বক্তব্য থামাতে হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে। এরপর অভিনেতা বাদশা মৈত্র তাঁর নাম ঘোষণা করতেই করতালিতে ফেটে পড়ে ব্রিগেড। শুরু থেকেই ঝাঁঝালো বক্তৃতা রাখেন আব্বাস সিদ্দিকি। মহম্মদ সেলিম ও বিমান বসুকে ‘ভালোবাসার মানুষ’ বলে সম্বোধন করে আগাগোড়াই বামেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন পীরজাদা। বলেন, ‘আমরা যা আসন দাবি করেছিলাম, তার অধিকাংশই মেনে নিয়েছেন তাঁরা। তাই যেখানে যেখানে বামেরা প্রার্থী দেবেন, কথা দিচ্ছি বুকের রক্ত দিয়ে জেতাব।’ একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘যদি এই সমঝোতা আরও এক সপ্তাহ আগে হত, তাহলে দ্বিগুণ মানুষের জমায়েত করতাম। কারণ বাংলার মানুষ মমতার সরকারের উপর ক্ষিপ্ত।’

ব্রিগেড মঞ্চ থেকে এদিন কংগ্রেসকে স্পষ্ট বার্তা দেন পীরজাদা। তিনি বলেন, ‘ভাগীদার হতে চাই। তোষণ নয়।’ ব্রিগেড থেকেই কার্যত প্রদেশ ভবনকে জোট নিয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে দেন আব্বাস। যদিও অধীর চৌধুরী নিজের বক্তব্যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট সম্পর্কে একটি বাক্যও খরচ করেননি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশেও তীব্র আক্রমণ শানান আব্বাস সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘মমতাকে জিরো করে দেখিয়ে দেব।’ বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথা স্মরণ করিয়ে এদিন তিনি বলেন, ‘বিজেপি-কে তাড়াতে হবে। সঙ্গে তাদের বি-টিম তৃণমূলকেও তাড়াতে হবে।’ তাঁর কথায়, ‘মমতার রাজত্বে সমস্ত শালীনতা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ রাজ্যে পার্শ্বশিক্ষক, সিভিক ভলেন্টিয়ার সকলেই বিপদে রয়েছেন। সকলের অধিকার খর্ব হয়েছে।’ আগাগোড়া বক্তব্যেই সংখ্যালঘুদের অধিকারের সুর শোনা যায় আব্বাসের বক্তব্যে।

গেরুয়া শিবিরের দিকেও এদিন তোপ দাগেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা। আব্বাসের কথায়, ‘এটা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলা। এখান থেকে বিজেপি-র কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’

দিদি -বিজেপি এক হলে অবাক হব না’, কটাক্ষ ইয়েচুরির:

মোদী দিদি আসলে এক। তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই সামনে।’ সামনে এত লড়াই পিছনে বন্ধুত্ব। একুশের ব্রিগেড মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে মোদী-শাহের বিজেপি ইয়েচুরির নিশানায়। ব্রিগেডের সভামঞ্চে ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে ব্রিগেডে আসছেন কিন্তু এত বিপুল জনসমাগম আগে দেখিনি। এতেই ইঙ্গিত ২১-এ আসছে বড় পরিবর্তন।’

লড়াই খুব সহজ নয়, ব্রিগেডে অধীর:

ব্রিগেড সমাবেশে এসে বক্তব্য রাখতে উঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী । শুরুতেই তিনি বলেন, ‘এত বড় সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার জীবনে এই প্রথম।’ তবে লড়াই যে খুব সহজ নয়, তা কিন্তু একপ্রকার মেনে নিলেন অধীর। বলেছেন, ‘সহজ রাস্তায় হবে না, ওদের টাকা আছে, পয়সা আছে, পুলিশ আছে, হিম্মত ধরতে হবে।’

এদিন অধীর বক্তব্য রাখার মাঝেই সমাবেশে এসে পৌঁছান ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের আব্বাস সিদ্দিকি। মাঠে উচ্ছ্বাসের জেরে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বক্তব্য থামাতে হয় অধীরকে। এরপরে আবার আব্বাসের বক্তব্যে প্রথম কয়েক মিনিট কংগ্রেসের নামই নেন না তিনি। পরে যদিও কংগ্রেসকে নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। সব মিলিয়ে এই গোটা পর্ব এদি ছিল যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ন।

অধীর বলেন, ‘যারা বলছে, বাংলায় দুটো শক্তির মধ্যে নির্বাচন হবে, আজ এই সভা প্রমাণ করল আরও একটা শক্তি থাকবে। আগামী দিনে তৃণমূল-বিজেপি থাকবে না, শুধু সংযুক্ত মোর্চা থাকবে। আজকের সভায় বলে দিচ্ছে সে কথা।’

তাঁর বার্তা স্পষ্ট বার্তা, ‘এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। জয় নিশ্চিত করতে হবে। মাঠে রঙবেরঙের পতাকা উড়ছে।’ বাংলার তৃণমূলনেত্রী মমতার এই সভা দেখে আমাদের ক্ষমতা বোঝা উচিত।’ সভা নিয়ে তিনি বলেছেন, ইয়ে স্রেফ ঝাঁকি হ্যায়, সরকার বদলনা বাকি হ্যায়।

একযোগে বিজেপি -তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, ‘এদের পার্থক্য কী? ২০১৪ সালে তেলের দাম কত ছিল, এখন কত হয়েছে। আর ওই এক টাকা কমানোয় কী হয়েছে। বিরাট কোহলি আর নরেন্দ্র মোদী তেলের দামে দুজনেই সেঞ্চুরি হাকিয়েছে।’ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় এসে এঁরা গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরছেন, দিল্লিতে মোদী বলেন, বিরোধী শূন্য চাই, এখানে দিদিও তাই বলেন, অভিযোগ অধীরের। তবে সিদ্দিকির সঙ্গে জোট নিয়ে কথা খরচ করেননি অধীর। বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকির জোট হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ল।

দিদি এমন ‘বলেছেন’ যে পুরো দলটাই বিজেপি হয়ে গিয়েছে, কটাক্ষ সূর্যকান্ত মিশ্রের:

যারা বলেন বামেদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে, তারা এসে এই সমাবেশ দেখে যান। উদ্বোধনী ভাষণেই ব্রিগেডের সাফল্যের ঝলক বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর গলায়। যতদূর চোখ যায় শুধু উড়ন্ত লাল নিশান ও মানুষের মাথা। সমর্থকদের বেঁধে দেওয়া সুরেই বিরোধীদের আক্রমণ সূর্যকান্ত মিশ্রের। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দেগে বামফ্রণ্ট রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘প্রথমে শুরু করলেন দিদিকে বলো, তারপর পাড়ায় পাড়ায় সমাধান, দুয়ারে সরকার। সব মিলিয়ে এত বললেন যে পুরো দলটাই বিজেপি হয়ে গেল।’

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই জোট বেঁধে মসনদের লড়াইয়ে সামিল হাত-কাস্তে। ২১-এর যুদ্ধে ব্রিগেড ত্রিফলা । আপাতত জোটের জট সরিয়ে রেখেই বাম-কংগ্রেসের রবিবাসরীয় ব্রিগেডে সামিল আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টও। সেই সভামঞ্চ থেকেই ঝাঁঝালো আক্রমণ সূর্যের। তিনি বলেন, ‘কাজ চাই চাকরি চাই। দাবি জানাতে গেলেই শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-যুবরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সারাক্ষণ বিভাজন তৈরি শাসন চলছে। আমরা কাজ চাই, বিকল্প চাই। অবিলম্বে সরকারে এসে সমস্ত শূন্যপদ পূরণের দরকার।’ একইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘আমাদেরই বিকল্প নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। আমাদের কথা নয়, মানুষের সঙ্গে কথা হবে, বার্তা ছড়াবে, জানতে হবে কী চান তাঁরা।’

‘একদিকে দলবদল আর অন্যদিকে দিনবদলের লড়াই’, ব্রিগেডে সেলিম:

একুশের মহাযুদ্ধে ব্রিগেডের মঞ্চে এসে সভার আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ালেন বাম নেতা মহম্মদ সেলিম। এক টিলে তাঁর নিশানায় বিজেপি-টিএমসি। প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য ও বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে সেলিমের তোপ,’গতবার যে বলেছিল লাল ঝাণ্ডা থাকবে না, সে নিজেই আজ তৃণমূলের ঝান্ডা ছিঁড়ে ন্যাকড়া বানিয়ে অমিত শাহের জুতো পালিশ করছে।’

তৃণমূল কংগ্রেসের দলবদল ট্রেন্ডকে কটাক্ষ করে বাম নেতার কটাক্ষ, ‘একদিকে দলবদলের লড়াই আর দিকে দিনবদলের লড়াই। কাকের বাসায় কোকিলের ডিম ফুটছে। চিটফাণ্ডের টাকা লুঠ করে এখন বিজেপিতে আশ্রয় নিয়েছে।’

সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি হবে না। প্রতি বছর হবে শিক্ষক নিয়োগ, শূন্যপদ অনুযায়ী সরকারী চাকরিতে ভর্তি চলবে নিয়ম মতো ব্রিগেডের মাঠ থেকে প্রতিশ্রুতি বাম নেতা সেলিমের। একইসঙ্গে চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারির কথা তুলে জোড়াফুল শিবির সহ উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে একসঙ্গে লড়তে হবে, তেমনই তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলেও এক হতে হবে।সারদায় টাকা ফেরত হয়নি। বরং যারা লুঠ করেছিল তারা ঝপাং করে বিজেপিতে চলে গিয়েছে। ক্ষমতায় এলে যারা লুঠ করেছে তাদের বাড়ি, সে ‘শান্তিনিকেতন’ হলেও নিলাম করব।’

মইদুল আলি মিদ্যার মৃত্যু প্রসঙ্গ তুলে সেলিমের বার্তা, ১০ বছরে ২৫০ কমরেডকে খুন করেছে তৃণমূল। মইদুল, সুদীপ্তকে মেরে পার পাবে না তারা। জোড়াফুল শিবিরের নতুন স্লোগানকে কটাক্ষ করে সিপিআইএম নেতার তোপ, ‘ কেউ কেউ এখন বলছে খেলা হবে। সারা লকডাউন আমরা ২০-২০ খেলেছি, এখন ওরা বলছে খেলা হবে। আর মোদিজী তো স্টেডিয়ামই দখল করে নিলেন। ভোট আসলেই বলছেন সব করে দেব। ভোটের সময় কাজী, কাজ ফুরোলেই কিষেণজি। ‘

ব্রিগেডে জনসমাগম দেখে বাম নেতা বলেন, ‘ ব্রিগেডে আসতে গেলে চার্টার্ড প্লেন লাগে না। আমরা এখানে খেলা করতে আসিনি, এবার দিদিমণিকে মাঠ থেকে নকআউট করতে হবে। ঝরাপাতার দিন শেষ। বসন্ত এসে গিয়েছে। ব্রিগেড বলছে লাল ফুল ফোটা কেউ আটকাতে পারবে না। ‘ পদ্ম ও ঘাসশিবিরের উদ্দেশে সেলিমের হুঙ্কার,’এমন তাপ বাড়াব তৃণমূল আইসক্রিমের মতো জল, বিজেপি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে।’

সেলিমের বক্তব্যে উঠে আসে জেএনইউ-তে ঐশীর উপর হামলার ঘটনা। সেই প্রসঙ্গ টেনে তুলে আনেন যাদবপুরের বিশৃঙ্খলার ঘটনা। বলেন, ‘বিজেপি-তৃণমূল শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। তাই তো ওখানে জেএনইউ এখানে যাদবপুরে হামলা চালানো হয়েছে।’

‘ওদিকে তৃণমূল-বিজেপি, এদিকে আমরা সবাই’ বিমান:

২০১৬ সালের ভোটের সেদিন ফল ঘোষণা হচ্ছে। প্রাথমিক ট্রেন্ডে যখন বোঝা যাচ্ছিল তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে, তখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম রাজ্য দফতরের নীচে দাঁড়িয়ে বিমান বসু বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘জোট না ঘোঁট হয়েছে!’
তারপর লোকসভা ভোট এল। উনিশের সেই ভোটে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার আলোচনার মধ্যেই সিপিএম একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিল। বিমান বসু বলেছিলেন, “টেবিলের তলায় মানির খেলা হয়েছে!”
কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত সেই বিমান বসু জোটের ব্রিগেডে সব জড়তা যেন এক লহমায় কাটিয়ে ফেললেন। বললেন, “একদিকে তৃণমূল-বিজেপি, অন্যদিকে আমরা সবাই।”

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান আরও বলেন, “এই ব্রিগেড ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব। অতীতের কোনও ব্রিগেডের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। এর আগে কখনও বামপন্থী, জাতীয় কংগ্রেস, আইএসএফ-এর ব্রিগেড হয়নি।” তৃণমূলের উদ্দেশে টিপ্পনি কেটে বিমান বসু বলেন, “যাঁরা বলছিলেন দূরবীন দিয়ে বামপন্থী আর জাতীয় কংগ্রেসকে দেখতে হবে, তাঁদের বলছি, দূত পাঠিয়ে দেখে যান ব্রিগেড কী ইতিহাস তৈরি করেছে বাংলার মানুষ।”

এমনিতে বিমানবাবুর সততা, নিষ্ঠা নিয়ে বিরোধীরাও প্রশ্ন তোলেন না। কিন্তু তাঁর আলটপকা কথার জন্য সিপিএমকে বহুবার বিপাকে পড়তে হয়েছে। এদিন যখন মঞ্চে বিমান বসু সভাপতি হিসেবে বক্তৃতা করছিলেন, তখন দেখা যায় এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্য মিশ্ররা। বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর অনেক সিপিএম নেতাই বলছেন, বিমানদা আজ অন্য ফর্মে ছিলেন।
একুশের এই ব্রিগেড সব অর্থেই মাইলফলক বটে। ষোলোর ভোটে কংগ্রেস বলেছিল, জোট যখন হয়েছে তখন যৌথ সভা হোক। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর তাতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু আপত্তি ছিল বিমান বসু, রবীন দেবদের। শেষে বাঁ হাতে ফুল দেওয়ার মতো সপ্তম দফার ভোটের আগে পার্ক সার্কাস ময়দানে যৌথ সভা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাহুল গান্ধী। আর আজ একুশের যৌথ প্রচার শুরু হচ্ছে ব্রিগেড থেকে।

যদিও পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মাঝে পাঁচ বছর সময় নষ্ট করে ফেলেছে এই জোট। উপ নির্বাচন থেকে রাজ্যসভার নির্বাচনে নানান সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করেছে। সেই শূন্যস্থানে ঢুকে পড়েছে বিজেপি। ফলে এই ব্রিগেড হয়তো প্রতীকী। কিন্তু এর আশু নির্বাচনী প্রভাব কতটা হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকলই।

https://www.facebook.com/cpimwbpc/videos/1093641254461475/

২১-এর ব্রিগেড ত্রিফলা ৷ নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জন্য রবিবাসরীয় ব্রিগেড সমাবেশ অনেকটা লিটমাস টেস্টের মতো। বুদ্ধবার্তা সঙ্গে নিয়েই ময়দানে নামছে বামফ্রন্ট। অন্যদিকে, যৌথ ব্রিগেডে এই প্রথম বক্তব্য রাখবেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। চোখ রয়েছে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দিকেও। একদিকে, টুম্পা, ফ্ল্যাশ মবের মতো অভিনব প্রচার আর অন্যদিকে, শিক্ষা-কর্মসংস্থানের দাবি এদিনের ব্রিগেডকে অন্য মাত্রা দেবে বলেই আশাবাদী নেতৃত্ব।

রবিবারের সমাবেশে বক্তার সংখ্যা ১০। জানা গিয়েছে, এদিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। শরিক দলগুলির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন দেবব্রত বিশ্বাস, নরেন চট্টোপাধ্যায়রা। তারুণ্যের উপর ভরসা রাখলেও কোনও ছাত্র-যুব নেতার নাম অবশ্য বক্তার তালিকায় নেই।

এদিকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে থাকছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এদিনের ব্রিগেডে স্টার বক্তা হিসেবে অবশ্যই এগিয়ে রয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। অন্যদিকে, কথা দিলেও ব্রিগেডে উপস্থিতির সম্ভাবনা কম তেজস্বী যাদবের। কলকাতায় এলেও কর্মী সম্মেলন নিয়েও ব্যস্ত থাকার কথা লালুপুত্রের।

শনিবার বেশি রাত পর্যন্ত রাজ্য সিপিএম জানিয়েছিল, রবিবাসরীয় ব্রিগেডে বলবেন বিহার ভোটের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তেজস্বী যাদব। কিন্তু সকাল বেলা জানা গেল তরুণ আরজেডি নেতা বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেডে আসছেন না। একই সঙ্গে জল্পনা কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে। জানা গিয়েছে, এই গোটাটা সমন্বয় করছে সিপিআইএম লিবারেশন।
বিহারে তেজস্বীদের জোট শরিক লিবারেশন। ফলাফলের দিনই দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছিলেন, বাংলার বামপন্থীরা মূল শত্রু চিহ্নিত করতে ভুল করছে। তাঁর বক্তব্য ছিল কখনওই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। বিহারে যে ভাবে সমস্ত এনডিএ-র বাইরের দল জোট বেঁধেছিল তেমন বাংলায় হোক বলে প্রস্তাব ছিল লিবারেশনের।

তা ছাড়া সিপিএমের সঙ্গে জোট আলোচনায় কলকাতার দুটি আসন এন্টালি ও জোড়াসাঁকো আরজেডিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা জামুড়িয়াও দাবি করছিল বলে সিপিএম সূত্রে খবর। কিন্তু আলিমুদ্দিন তাতে রাজি হয়নি। সেই থেকেই জট পাকাতে শুরু করে।

২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ব্রিগেডে যে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সমাবেশ হয়েছিল তাতে তেজস্বী ছিলেন বক্তা। সপ্তাহ দুয়েক আগে অধীর চৌধুরী, বিমান বসু জানিয়েছিলেন জোটে আরজেডি, জেডিএস, এনসিপির মতো ছোট দল আসতে চাইছে। এখন দেখার বাংলার ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে আরজেডি আসন সমঝোতা করে কিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here