দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে বিশেষজ্ঞরা বারং বার বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সামাজিক সংস্রব এড়িয়ে হাত ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাই সংক্রমণ প্রতিরোধের অন্যতম পথ। সবাই যেন এ ব্যাপারে সচেতন হন এবং দায়িত্বশীল আচরণ করেন। নবান্নে বসে একাধিক বার সাংবাদিক বৈঠক করে পাখি পড়ানোর মতো করে সে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অথচ তার পরেও রাজ্য সরকারের এক জন পদস্থ আমলা কীভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছেন তা নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা এ কথা ভেবে উদ্বিগ্ন যে, ওই তরুণ এবং তাঁর মা, বাবা, গাড়ির চালক গত বাহাত্তর ঘণ্টায় কতজনের সঙ্গে মিশেছেন। কোথায় কোথায় গিয়েছেন। কারণ, ওই তরুণের শরীর থেকে তাঁদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটা অসম্ভব নয়। তার পর তাঁরাও ভাইরাসের বাহক হয়ে উঠতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ওই মহিলা আমলাই ছেলেকে নিয়ে বাঙুর হাসপাতালে চেক আপের জন্য গিয়েছিলেন। তার পর সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি নবান্নে এসে পুরোদস্তুর অফিস করেন। ফলে নবান্নে তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসেছে। বুধবার থেকেই সেল্ফ কোয়ারেনটাইন শুরু করেছেন খোদ স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
তা ছাড়া ওই যুবক ও তাঁর পরিবার দক্ষিণ শহরতলির বাইপাস সংলগ্ন একটি আবাসনের বাসিন্দা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা এখন ওই পরিবারের বাকি বাসিন্দাদের সতর্ক হতে বলেছেন। ওই আবাসনের অনেকেরই এদিন চেকআপ হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। তাঁদের লালারসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
বুধবার নবান্নে এক অনুষ্ঠানে ওই তরুণ ও মহিলার নাম না করে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার ঘরে যে নিয়ম আপনার ঘরেও সেই নিয়ম। এখানে কোনও ভিভিআইপি-এলআইপি (পড়ুন লেস ইমপর্ট্যান্ট পার্সন) নেই। সবার জন্য এক ব্যবস্থা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবক গত রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন। পরের দিন এমআর বাঙুর হাসপাতালের ডেপুটি সুপারের সঙ্গে দেখা করে সেখানেও চেক আপ করান। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রথমে বিমানবন্দর ও পরে বাঙুরের চিকিৎসকরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু তিনি তা করেননি। উল্টে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছেন। একটি সূত্রের মতে, তাঁর মা-র সঙ্গে নবান্নেও গিয়েছিলেন ওই তরুণ।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, সব থেকে আশ্চর্যের হল এঁরা শিক্ষিত পরিবার। ওই তরুণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তাঁর নবান্নের পদস্থ আমলা। বাবা পেশায় চিকিৎসক। এঁরা অবিবেচকের মতো কাজ করলে সমাজ সংসারের বাকিরা কী করবেন।
এ ব্যাপারে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবারের একজন কেউ প্রভাবশালী বলে বিদেশ থেকে এসে কেউ শপিং মলে পার্কে ঘুরে বেড়াবেন—এ ধরনের অবিবেচকের মতো কাজ বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, ভুলে গেলে চলবে না এপিডেমিক আইন বাংলায় বলবৎ হয়েছে। রোগ গোপন করে সংক্রমণ ছড়ালে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
রোগ গোপন করে সংক্রমণ ছড়ালে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এই নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রামিত হওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে সার্স বা মার্স ভাইরাস যত দ্রুত ছড়িয়েছে, তার থেকে বেশি হারে সংক্রামিত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে নভেল করোনা ভাইরাসের। সন্দেহ নেই, কলকাতায় ফেরার পর ওই তরুণ যে রকম বহালতবিয়তে ঘুরে বেরিয়েছেন তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর বিস্তর ঝুঁকি রয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর বাবা, মা সহ পরিবারের ৬ জনকে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে নাইসেডে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে করোনা আক্রান্ত যাওয়ায় নবান্নে শুরু হয়েছে সাফাইকাজ। গোটা ভবনটি পরিস্কারের পাশাপাশি ওই আমলার ঘরটিও সিল করে দেওয়া হয়েছে।