দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:বুধবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী রকম বহুস্তরীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পর বেশিক্ষণ কাটল না। রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলা পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্রের পাঠানো আন্তঃমন্ত্রক টিম যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে বাংলার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
উদ্বেগের বিষয়গুলি এক, দুই করে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব। তা হল-
১) বাংলায় কোভিড মোকাবিলা কেমন হচ্ছে তা কয়েকটি বিষয় দিয়েই আন্দাজ করা যায়। একে তো জনসংখ্যার নিরিখে কম সংখ্যক টেস্ট হচ্ছে। সেইসঙ্গে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গে—১৩.২ শতাংশ। চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ ছড়ানোর উপর নজরদারি যে দুর্বল, রোগ নির্ধারণ ও টেস্টিং যে কম হচ্ছে এটা তারই প্রতিফলন। সুতরাং টেস্ট আরও বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে ক্লাস্টারগুলিতে র্যান্ডম টেস্টিং করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনও বলেছেন যে, এটা ঠিক যে গোড়ায় রাজ্যে টেস্ট কম হচ্ছিল। কারণ, আইসিএমআর অনুমোদিত ল্যাবরেটরি তখন ছিল মাত্র ১ টি। কিন্তু এখন স্বীকৃত ১৫টি ল্যাব রয়েছে। এখন গড়ে প্রায় আড়াই হাজার টেস্ট হচ্ছে রোজ। তা ছাড়া এনআরএস ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজেও টেস্টের পরিকাঠামো রেডি হয়ে আছে। শুধু অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষা। ওই দুটি ল্যাবরেটরি ছাড়পত্র পেলে টেস্টের সংখ্যা দৈনিক আরও বেড়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
২) অজয় ভাল্লা চিঠিতে আরও বলেছেন, নজরদারি ও পজিটিভ কেসগুলোর কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের (আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন) মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তা ছাড়া পাহাড়ে টেস্টিংয়ের বিশেষ পরিকাঠামো নেই। সব জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে শিলিগুড়িতে পাঠানো হচ্ছে। এতে অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছে। তাতে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়েও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
৩) মুখ্যসচিবকে দেওয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় টিম রিপোর্টে জানিয়েছে যে কলকাতা ও হাওড়ায় নির্দিষ্ট এক গোষ্ঠী লকডাউনের শর্ত ভাঙছে। এমনকি ‘করোনা যোদ্ধা’ পুলিশের উপরেও তারা হামলা করেছে। এই পরিস্থিতি কঠোর ভাবে দমন করা উচিত। তা ছাড়া স্বাস্থ্য কর্মীদের কোথাও কোথাও এক ঘরে করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই বলেও দেখা গিয়েছে।
৪) অজয় ভাল্লা চিঠিতে বোঝাতে চেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে বহু কন্টেইমেন্ট জোনে লকডাউন ও সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং ঠিক মতো মানাই হচ্ছে না। বাজারে ভি়ড় হচ্ছে, ছেলেরা মাঠে ক্রিকেট খেলছে, রাস্তায় রিকশ চলছে, মুখে মাস্ক না পরে বহু মানুষ ঘুরছে, নদীতে স্নান করছে—এসবই চলছে কন্টেইনমেন্ট জোনে। এতেই প্রমাণিত যে সরকারের নজরদারি খুবই দুর্বল। এবং রাস্তায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে ঠিকমতো ব্যবস্থা নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোভিড সংক্রান্ত অভাব অভিযোগের কথা শোনার জন্য রাজ্য সরকারকে একটা গ্রিভেন্স রিড্রেসাল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তার মাধ্যমে মানুষকে টেস্টিং সংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া যায় তাও দেখতে হবে।
এর আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল যে রাজ্যকে সাহায্য করার জন্যই কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হয়েছে। এদিনও মুখ্যসচিবকে দেওয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, কেন্দ্রীয় টিমের যে বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা অবিলম্বে শুধরোতে হবে রাজ্যকে। কোভিড মোকাবিলায় রাজ্য যাতে সহযোগিতা করে সে কথাও চিঠিতে জানিয়েছেন অজয় ভাল্লা।