দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ
চিটফান্ড মামলায় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের উপর থেকে রক্ষাকবচ সরিয়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন জন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে জানিয়ে দিল, রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে যে অন্তবর্তী রক্ষাকবচ তাঁরা দিয়েছিলেন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। সিবিআই এ বার তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারে।
আইনজ্ঞদের মতে, এর স্পষ্ট অর্থ হল,- সিবিআই চাইলে এ বার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পারে। প্রয়োজনে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরাও করতে পারে। তবে রাজীবও চাইলে সাত দিনের মধ্যে উপযুক্ত আদালতে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন বলে এ দিন রায় দানের সময় জানিয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এবং এই সাত দিনের মধ্যে রাজীবকে গ্রেফতার করা যাবে না।
এর আগে সিবিআইয়ের টিম গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাজীব কুমারের বাসভবনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে বাধা দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। সিবিআই অফিসারদের হেনস্থাও করা হয়েছিল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গিয়েছিলেন রাজীব কুমারের বাড়িতে। রাজীবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অফিসার বলে তকমা দিয়ে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে মমতা ধর্মতলায় সত্যাগ্রহে বসে পড়েছিলেন।
কিন্তু আদালতের এই রায়ই বুঝিয়ে দিল, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে যে সব তথ্য ও প্রমাণ আদালতে পেশ করেছিল সিবিআই, তাতে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা সন্তুষ্ট। কেন না, সিবিআই যখন রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার জন্য আদালতে আর্জি জানিয়েছিল তখন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বারবার বলেছিলেন, কীসের ভিত্তিতে এই দাবি আপনারা করছেন? চিটফান্ড কাণ্ডে রাজীব কুমার যে তথ্য ও প্রমাণ লোপাট করেছিলেন সে ব্যাপারে অকাট্য ও সন্তোষজনক প্রমাণ আদালতে পেশ করুক সিবিআই।
প্রধান বিচারপতির ওই নির্দেশের পরই সিবিআই মুখবন্ধ খামে রাজীবের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রমাণ পেশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টে। তা একবার নয়, বেশ কয়েকবার। এবং ওই খাম হাতে পেয়ে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ একদিন শুনানির সময় তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, আপনারা (সিবিআই) যে অভিযোগ করছেন তা গুরুতর, এর পর আদালতও চোখ বুজে থাকতে পারে না।
ফলে এ দিন রায় ঘোষণার পর ধরে নেওয়া যেতে পারে সিবিআইয়ের সেই বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য ও সন্তোষজনক বলে মনে করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজীব কুমারের বাসভবনের সামনে সিবিআইয়ের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ধস্তাধস্তির পর দিনই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল এই কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি। যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তাঁরা চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত করছেন, তাই তাদের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ও রাজীবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তা ছাড়া চিটফান্ড কাণ্ডে রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তখন অন্তর্বতী রায়ে জানিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইয়ের সামনে উপস্থিত হতে হবে রাজীব কুমারকে। তবে গ্রেফতার করা বা তাঁর বিরুদ্ধে সে রকম কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। আদালতের ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই এর পর শিলংয়ে সিবিআইয়ের দফতরে টানা পাঁচ দিন ধরে জেরা করা হয়েছিল রাজীবকে। কিন্তু তার পরেও সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে বলে, তদন্তে সহযোগিতা করছেন না রাজীব। তিনি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাচ্ছেন, বা উত্তর দিচ্ছেন না। অথচ চিটফাণ্ড কাণ্ডে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিমই যে তথ্য ও প্রমাণ লোপাট করেছিল সে ব্যাপারে সিবিআই ষোলো আনা নিশ্চিত।
রাজীব কুমার ও রাজ্য সরকারের তরফে বারবার আদালতে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে রাজীব কুমারকে হেনস্তা করা হচ্ছে। নইলে শিলংয়ে জেরার সময় সিবিআইয়ের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন রাজীব। দু’পক্ষের এই যুক্তি শোনার পর গত ২ মে শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পর শুক্রবার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করল সর্বোচ্চ আদালত।ভোটের মধ্যে বড় ধাক্কা খেল নবান্ন।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় নবান্ন তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।