দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জেএনইউ ক্যাম্পাসের ভিতরে তাণ্ডব চালাল এবিভিপির সদস্যরা! এমনই অভিযোগ উঠেছে রবিবার সন্ধেয়। আক্রান্ত ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ-সহ অনেকে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ঢুকে কোনও বিচার না করে মারধর চালায় গুন্ডারা।

জানা গেছে, মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রায় ৫০ জনের একটি দল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তাদের হাতে ছিল ব্যাট, লাঠি। আন্দোলনকারীদের সভা চলাকালীন ওই দুষ্কৃতী দল ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা চালায়। পড়ুয়াদের মারধরের পাশাপাশি হস্টেলের ভিতরে ঢুকেও ভাঙচুর চালানো হয়।


অনুমান করা হচ্ছে, ধারালো কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে ঐশীর মাথায়। গুরুতর জখম অবস্থায় এইমসের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। একটি ভিডিওয় ঐশী জানান, “মুখোশ পরা গুন্ডারা আমার উপর নৃশংস ভাবে আক্রমণ করেছে। প্রচণ্ড মেরেছে আমায়। রক্ত পড়ছে।”

ছাত্র সংসদের তরফে জানানো হয়েছে, মুখঢাকা দুষ্কৃতীরা সকলেই এবিভিপির সদস্য। সবরমতী গার্লস হস্টেলে ঢুকে রীতিমত তাণ্ডব চালানো হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে হস্টেলের সম্পত্তি। ঐশীর পাশাপাশি গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। আহত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সতীশ চন্দ্র যাদবও।

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে এবং জামিয়া মিলিয়ায় প্রহৃত পড়ুয়াদের সমর্থনে বেশ কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে জেএনইউ-তে। এই অবস্থায় গেরুয়া বাহিনীর নজরে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এমনটা অবশ্য নতুন নয়। সরকারবিরোধী যে কোনও আন্দোলনের সময়েই শাসকের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে জেএনইউ।

এবারেও অভিযোগ উঠেছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিভিপি-র গুন্ডারা ব্যাপক মুখ ঢেকে লোহার রড নিয়ে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাথা ফেটে যায় ঐশী-সহ বহু পড়ুয়ার। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা নিষ্ক্রিয় ছিল। রবিবার সন্ধ্যার এই ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ছড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, হামলার সময়ে ছাত্রীরা সবরমতী হস্টেলের মহিলা শাখায় গিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। সেখানেও ঢুকে পড়ে আক্রমণকারীরা। গোটা করিডরে ভাঙচুর চালায়। বাইরের কার পার্কিংয়েও চালানো হয় ভাঙচুর। তখনই আহত হন ঐশী।

২৫ জন আহত, ১১ জন নিখোঁজ!’ জেএনইউ কাণ্ডে পাল্টা দাবি এবিভিপির

ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকদের মারধর করার অভিযোগ ওঠার পরে পাল্টা অভিযোগ তুলল এবিভিপি। তাদের দাবি, রবিবার সন্ধেয় এই হামলা চালিয়েছে জেএনইউ-এর বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়ারাই! তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল এবিভিপির সদস্যরা।

শুধু তাই নয়, একটি বিবৃতি জারি করে এবিভিপি আরও দাবি করেছে, তাদের ২৫ জন সদস্য গুরুতর ভাবে আহত। ১১ জন নিখোঁজ।

জেএনইউ-এ এবিভিপির সভাপতি দুর্গেশ কুমার, “এবিভিবি সদস্যরা বামপন্থী সংগঠন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ-এর পড়ুয়াদের দ্বারা আক্রান্ত। ২৫ জন গুরুতর জখম, ১১ জন কোথায় জানা যায়নি। বামপন্থী গুন্ডারা হস্টেলে ভাঙচুর চালিয়েছে, এবিভিপি ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেছে।”

এবিভিপির তরফে টুইট করেও জানানো হয়েছে, “কমিউনিস্ট গুন্ডারা জেএনইউ-এর পড়ুয়াদের উপর এবং এবিভিপির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইউনিভার্সিটির ক্ষতি করেছে তারা।”


বলাই বাহুল্য, এবিভিপির এই দাবির সঙ্গে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের বক্তব্য একেবারেই মিলছে না। একাধিক টুইট করে ছাত্র সংসদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, এবিভিপির সদস্যরা মুখ ঢেকে, হাতে অস্ত্র নিয়ে জেএনইউ-এর হস্টেলে ঢুকে নির্বিচারে মারধর চালিয়েছে পড়ুয়াদের উপর। অধ্যাপকেরাও রেহাই পাননি। সবরমতী হস্টেলে ভাঙচুরও চালিয়েছে তারা, নষ্ট করেছে সম্পত্তি।

জেএনইউ ছাত্র সংসদের তরফে টুইট করে বলা হয়, “এবিভিপির আক্রমণকারীরা মুখ ঢেকেছিল। পাইপ বেয়ে হস্টেলে উঠছিল তারা। হাতে লাঠি, রড, হাতুড়ি– এ সব ছিল।”

আক্রান্ত হয়েছেন ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ-সহ অনেকে। অনুমান করা হচ্ছে, ধারালো কোনও কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে ঐশীর মাথায়। গুরুতর জখম অবস্থায় এইমসের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। একটি ভিডিওয় ঐশী জানান, “মুখোশ পরা গুন্ডারা আমার উপর নৃশংস ভাবে আক্রমণ করেছে। প্রচণ্ড মেরেছে আমায়। রক্ত পড়ছে।”

বাংলার মেয়ে রক্তাক্ত

রণক্ষেত্র নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র সংঘর্ষে গুরুতর জখম ছাত্র সংসদের সভাপতি বাংলার মেয়ে ঐশী ঘোষ। ছাত্রদের অভিযোগ, রবিবার সন্ধেবেলা সঙ্ঘ-পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে ক্যাম্পাসে। যাতে রক্তাক্ত হয়েছেন ঐশী-সহ বহু ছাত্রছাত্রী।

আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ঐশীর পরিচয় ও রাজনৈতিক উত্থান:

দুর্গাপুরের মেয়ে ঐশী। ক্লাস টেন পর্যন্ত দুর্গাপুরের কারমেল কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন ডিএভি স্কুল থেকে। তারপরে দুর্গাপুর থেকে সোজা নয়াদিল্লি। স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পর মাস্টার ডিগ্রিতে পড়াশোনার বিষয় হল: ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’। মেধাবী ঐশী এখন ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ তথা ইন্টারন্যাশনাল রিলেশলস নিয়েই এমফিলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই শুরু ছাত্র রাজনীতি। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে ঐশীর পক্ষে ছাত্র আন্দোলনে এতটা দূর যাওয়ার প্রেরণা তাঁর বাবা-মা। বাবা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের কর্মচারী। বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই সূত্রে রাজনৈতিক আবহ বাড়িতে ছিলই। সেই সুবাদেই রাজনীতিতে হাতেখড়়ি ঐশীর।

বর্তমানে সারা দেশে বিপর্যয়ের মুখে যখন বাম আন্দোলন, তখন জেএনইউ-র নির্বাচনে ঐশীর জয়কে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবেই দেখছিলেন বামপন্থীরা। ঐশী যে রাজ্যের মেয়ে, স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বছর, সেই বাংলা থেকে কোনও লোকসভায় বামেদের কোনও সাংসদ নেই। তবু ভোটে জেতার পর জেদ শোনা গিয়েছিল ঐশীর গলায়। বলেছিলেন, “মরুভূমিতে মরুদ্যান খোঁজাটাই আমাদের মতাদর্শ।”

ঐশীর আঘাত গুরুতর। জানা যাচ্ছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাত পড়েছে তাঁর মাথায়। দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে মা-বাবা ঘনঘন ফোন করছেন এসএফআই নেতাদের। মেয়ের খবর নিচ্ছেন। আর ছাত্র নেতারা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে শুয়ে ঐশী বলছেন, “আরও একটা নতুন লড়াই শুরু হবে কাল থেকে। ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নোয়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here