দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলার ভোটে দিদি যে স্লোগানকে কার্যত তৃণমূলের স্লোগানে পরিণত করে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের সেই যুগান্তকারী স্লোগান এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখেও—‘জয়বাংলা।’

গাঢ় লাল ব্যাকড্রপ। তার মধ্যে হাত তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। পাশে লেখা-‘মুজিব চিরন্তন।’ পরনে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর কালো হাফ স্লিভ কোট। যেমন পরতেন বঙ্গবন্ধু।

শুক্রবার ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে সেই ব্যাকড্রপের সামনে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন মোদী। তাঁর পরনেও ছিল সেই একই পোশাক। সাদা পাঞ্জাবি এবং কালো হাফ স্লিভ কোট। নিজের বক্তৃতায় একাধিক বাংলা বাক্য উচ্চারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে জোর দিলেন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীতে, নয়াদিল্লি ও ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর।

এর মধ্যে মোদী এবং শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছিলেন গত ৯ মার্চ। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের তিন বছর পূর্তিতে দক্ষিণ ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মৈত্রী সেতু উদ্বোধনে মিলিত হয়েছিলেন দুই প্রধান। এদিন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণেই দু’দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন মোদী।

গত ১৭ মার্চ ছিল শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ। যার উদযাপন শুরু হয়েছে এদিন। সেদিন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও সোনার বাংলা গড়ায় পূর্ণ মদতের কথা বলে নিজের বার্তা শেষ করেছিলেন। নয়াদিল্লিও সবরকম ভাবেই ঢাকার পাশে রয়েছে। কোভিডের ১২ লক্ষ ভ্যাকসিনও দিয়েছে বাংলাদেশকে। তা ছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ধারাবাহিক ভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে ভারত। কিন্তু শি জিনপিংয়ের মতো সোনার বাংলার কথা বলায় সমস্যা অবশ্যই রয়েছে মোদীর। কারণ সেই স্লোগান তো পশ্চিমবঙ্গের জন্য তুলেছে দীন দয়াল উপাধ্যায় মার্গ। তাই পূর্ব বাংলার জয় হোক।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে গিয়ে জেলেও যেতে হয়েছে তাঁকে। শুক্রবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূ্র্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। এমনকী তাঁর দাবি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই ছিল তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের প্রথম প্রতিবাদ-আন্দোলন।

প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর যোগ অত্যন্ত নিবিড়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। এমনটাই দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন,’বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন আমার জীবনে চিরস্মরণীয় ঘটনা। আমি ও আমার সহকর্মীরা ভারতে সত্যাগ্রহ করেছিলাম। তখন আমার বছর কুড়ি বয়স। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সত্যাগ্রহ করায় আমাদের গ্রেফতারও হতে হয়।’

এখানেই শেষ নয়, তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য যেসব জওয়ানরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের অবদান ভোলার নয়। যেসব ভারতীয়রা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন তাদের অবদানও ভোলার নয়।’ বাংলাদেশের জাতীয় দিবসে ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এমন দিনের এই অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান মোদী।

টানা এক বছর পর শুক্রবার ফের বিদেশ সফরে গেলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূ্র্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবারও ওখানে থাকবেন তিনি। সূত্রের খবর, বঙ্গের বিধানসভা ভোটে নজর রেখে বাংলাদেশে গিয়েও মতুয়াদের মন পেতে মরিয়া মোদী। সেখানকার মতুয়াদের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। পুজো দেবেন মতুয়াদের মন্দিরেও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here