মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে তৃণমূল

0
561

দেশের সময়: -গত লোকসভার পর এ রাজ্যে তৃণমুল আবার তার জায়গা শক্ত করেছে অনেকটাই।গোটা দেশ জুড়ে নতুন নাগরিক সংশোধনী আইন ও সিএএ নিয়ে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে এনআরসি বিরোধী হাওয়া ভাল করেই বিজেপির বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পেরেছেন।সেই কারণেই রাজ্যের তিনটি উপনির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের কাছে একেবারে গো হারা হেরেছে।

রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের একটা বড় অংশই মনে করছেন এ রাজ্যে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে বিজেপি এখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।গত লোকসভার পরে বিজেপির পক্ষে এ রাজ্যে যে হাওয়া ছিল তা এখন একেবারেই ঘুরে গেছে।হিন্দু মুসলমানের যে বিভাজন তৈরি করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি এ রাজ্যের মানুষের এনআরসি ভীতি সেই কৌশলকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে।বিজেপি গত কয়েক মাসে এ রাজ্যের মানুষের কোন দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে বা রাজ্য সরকারের কোন দূর্নীতি নিয়ে পথে নামে নি।

জিনিস পত্রের লাগামছাড়া দাম ও কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়গুলিতে শাসক দলের দখলদারি কোন কিছুর বিরুদ্ধেই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কোন জুতসই অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেনি।তাদের একটাই হাতিয়ার হিন্দু মুসলমানের বিভাজন ও মন্দির বানানোর হুঙ্কার।বলা বাহুল্য এই সব বিষয়গুলি কোনভাবেই মামুষের রোজকার জীবন যাপনের সঙ্গে যুক্ত নয়।অপর দিকে বিজেপির অন্দরমোহলেও নানা দ্বন্দ্ব রয়েছে।

বিজেপির ভেতরেই অনেকে মনে করেন দিলীপ ঘোষের মত অশিক্ষিত ও কুকথা বলা লোককে আবার রাজ্য বিজেপির মাথায় বাসানোর ফলে শিক্ষিত রুচিশীল বাঙালি কিছুতেই বিজেপিকে বাংলায় মেনে নেবে না।

বিজেপির অন্দরমোহলের এই অশান্তির খবর দেশের সময় এর গত সংখ্যাতেই জানিয়ে দিয়ে ছিলাম।তবু প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টাকে উল্লেখ করা হল ফের,এই কারণে যে বিজেপি রাজ্য নির্বাচনে অনেকটা পেছিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শাসক তৃণমূল এখনও খুব নিশ্চিত হতে পারছে না তাদের আগামী নির্বাচনে সাফল্য নিয়ে।মুখে বলছেন অবশ্য এ রাজ্যে মমতার কোন বিকল্প নেই তবু ভেতরে ভেতরে তৃণমূলকেও একটা দুশ্চিন্তা গ্রাস করতে শুরু করেছে।

না এবার তৃণমূল শুধু বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে না,তৃণমূলের একটা ভয় এবার অন্য কারণে।সেই কারণটাই সম্প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে ব্যাখ্যা করেছেন বোট কৌশলী প্রশান্তকিশোর।সূত্রের খবর এমনটাই।এখন প্রশ্ন হল কী সেই ব্যাখ্যা যা শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত পোড় খাওয়া রাজনীতিকও আশঙ্কিত হয়ে পড়ছেন?

শোনা যাচ্ছে এখানকার ভোটারদের মানসিকতা পর্যালোচনা করে প্রশান্তকিশোর বার বার বলছেন এবার মুশলিম ভোট ভাগ হওয়ার একটা আবহ তৈরি হয়েছে।যেটা বাস্তবায়িত হলে তৃণমূলের পক্ষে খুবই বিপদ হয়ে যাবে।

গত লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তৃণমূল মূলত মুসলিম ভোট এককাট্টা করে ধরে রাখতে পেরেছে।এবার সেই মুসলিম ভোটাররা যেন কিছুটা হলেও মমতার উপর আস্থা হারাবার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে।যে ভাবে সারদা নারদা তদন্ত গতি হারিয়েছে,যেভাবে মমতা দিল্লিতে গিয়ে মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলে আসার পর রাজীব কুমার গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হলেন তাতে বিজেপি মমতার একটা গোপন বোঝাপডা আছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

আর এটাকে বেশী করে প্রচারে নিয়ে আসছে রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস।তারা সাধারণ মানুষকে লাগাতার এটা বুঝিয়ে চলেছেন যে মমতা আসলে শেষ পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গেই থাকবেন।মোদী শহরে আসার পর গোটা রাজ্য যখন বিরোধিতায় উত্তাল তখন মমতার রাজভবনে গিয়ে মোদীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক মানুষ যে ভাল ভাবে নেন নি তা কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় নি কারোর।

যে ভাবে খোদ কলকাতার বুকে মমতাকে ঘেরাও করে রেখে ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাল তা এক কথায় নজির বিহীন।ঠিক এই মুহূর্তে এ রাজ্যের দিকে যে এআরসি বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভ চলছে তাতে শাসক দলের সঙ্গে সংস্রব না রেখেই অনেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

সবচেয়ে বড় কথা এনআরসি বিরোধী লড়াইকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আর শুধু মাত্র ভোটের লড়াই বলে ভাবতে রাজি নয়।তারা চাইছেন এটাকে তাদের অস্তিত্বের লড়াই বলে মেনে নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন এগিয়ে আসুক।এটা আসলে একটা স্বাধীনতার লড়াই বলে মনে করছেন তারা।এখানেই তৃণমূলের ভোটের লড়াইকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইছে মানুষ।

মমতা যেভাবে তাঁর দলের পতাকা ও প্রতীক নিয়ে আন্দোলনে নামছেন তা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না মানুষ।তারা চাইছেন এটাকে যে কোন রাজনীতির উর্দ্ধে সমবেত স্বাধীনতার লড়াই বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।তৃণমূল এখনও সেই উদারতা দেখাতে পারেনি।তাই যে সব জায়গায় কোন রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া আন্দোলন হচ্ছে সেখানে ব্রাত্য হয়ে পড়ছে রাজ্যের শাসক দল।

আর সেই কারণেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের ভিতও ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে।এই অবিশ্বাস যদি ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হয় তবে কিন্তু শাসক দলের বিপদ।

আর একটা বিপদের কথা শোনা যাচ্ছে শাসক দলের অন্দরে,এ রাজ্যে নাকি হায়দ্রাবাদের আসাউদ্দিন ওয়াইসির দল মিম ক্রমশ তার ডাল পালা বিস্তার করছে।এই দলটি মুসলিম ভাবাবেগ নিয়ে কাজ করে।বিজেপি যদি হিন্দুত্বের জিগির তোলে তবে মিম মুসলিম জিগির তুলতে ওস্তাদ।সেই দলটা নাকি এবার এ রাজ্যে মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে পারে।

তা যদি সত্যি হয় তবে মমতার জন্য তা খুবই বিপদের কথা হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।সার অংকটা হল এই রকম মুসলিম ভোট যদি এককাট্টা হয়ে মমতার ঝুলিতে আসে তবে বিজেপির কোন আশা নেই আর মুসলিম ভোট যদি কোন ভাবে বিরোধীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় মমতার বিপদ অনিবার্য।

এআরসি নিয়ে বিজেপি এ রাজ্যে বিপদে পড়লেও মুসলিম ভোটের ভাগ হয়ে গেলে তাদের ভাগ্যে শিঁকে ছিড়তে পারে,এখানেই আশঙ্কা ও ভয় কাজ করছে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে।

Previous articleরাশিফল: আজকের দিন আপনার রাশির জন্য কেমন জানুন
Next articleProtest

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here