দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার, দু’দিনের সফরে বাংলাদেশের ঢাকায় গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ৪৯৭ দিন পর তাঁর এই বিদেশ সফর। এর আগে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ব্রাজিল সফরে যান। গত এক বছর ধরে শুধুমাত্র ভিডিও কলিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারেন প্রধানমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফরের সময় নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি এএমইউ স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্র এবং শনিবার দু’দিনের সফরে বাংলাদেশ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে মতুয়ামন জয়ের চেষ্টা করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার জারি করা তাঁর সফরসূচি তেমনই বলছে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে শুক্রবার বাংলাদেশ যাওয়ার আগে মোদী তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি খুশি যে, করোনা অতিমারির পর তাঁর প্রথম বিদেশ সফরটিই হচ্ছে বন্ধু প্রতিবেশি দেশে। শুক্রবার বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মোদী।

তিনি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতেও। ৫১ শক্তিপীঠের একটি যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরেও পুজো দেবেন মোদী। তিনি যে ওরাকান্দির মতুয়াসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, বিবৃতিতে তা-ও জানিয়েছেন মোদী। যাঁদের সঙ্গে মতুয়াদের ঠাকুর হরিচাঁদের সম্পর্ক নিবিড়।

বাংলায় ভোটের আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মতুয়ামন জয়ের এই চেষ্টাকেই ‘মাস্ট্রারস্ট্রোক’ হিসেবে বর্ণনা করছে বাংলায় বিরোধী বিজেপি শিবিরের একাংশ। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে যে অনুযোগ ছিল, তা দূর করার চেষ্টা সর্বতো ভাবে করছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও মতুয়াদের কর্মসূচিতে গিয়ে বক্তৃতা করেছেন। বলেছেন, মতুয়া এবং নমশূদ্রদের নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতুয়ামন জয়ের চেষ্টা এই প্রথম। ঘটনাচক্রে, বাংলার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৩০টির মতো আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে বলেই রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে। ফলে মোদীর বাংলাদেশের মতুয়াদের সঙ্গে বার্তালাপ রাজ্যের ভোটে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ প্রভাব ফেলতে পারবে বলেই রাজ্যের বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীএবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই শুভ সূচনা হবে ‘মিতালি এক্সপ্রেসের’‌। যা চলাচল করবে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত। এর পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীযাবেন সাতক্ষীরা, টুঙ্গিপাড়া, ওড়াকাঁন্দিতে। ওড়াকাঁন্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে সেখানকার মতুয়াদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নরেন্দ্র মোদী। সাতক্ষীরায় যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে গিয়ে পুজো দেবেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন পশ্চিম বাংলার ভোটে  এবার মতুয়াদের আর্শীবাদ পেতে বদ্ধপরিকর বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যেই এবার বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মতুয়াদের পীঠস্থানে যাবেন। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে যোগ দিতে শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছালেন। ২৬ এবং ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দু’দিনের সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনাও করবেন। বাংলাদেশের বিশেদ মন্ত্রী ডাঃ একে আবদুল মোমেন৷ দুই দেশের উন্নয়ন এবং অর্থনীতি নিয়েও কথা হবে বলে জানা গিয়েছে৷

করোনা মহামারীর উত্তর প্রতিবেশী দেশে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন মোদী৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে গভীর যোগ রয়েছে, বলেন মোদী৷ দুই দেশের মধ্যে যেমন ভাষার যোগ রয়েছে তেমনই সংস্কৃতিরও৷ ফলে এই যাত্রা খুবই সুখকর বলে মত মোদীর৷ একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং অন্যদিকে প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে বিশেষ সম্মান জানাতে মোদীর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট করেছেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দু’দেশের মধ্যে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের স্মরণে উদযাপনে অংশ নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি ট্যুইটে আরও বলেছেন, ‘নেবারহুড ফার্ট বা প্রতিদেশী প্রথম হিসেবে দেশের যে নীতি রয়েছে, তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর করার বিষয় বদ্ধপরিকর ভারত৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাকে আমরা সবসময় সমর্থন করব৷

বাংলাদেশের এই সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপক্ষা করছেন মোদী৷ একই সঙ্গে মোদীকে স্বাগত জানাতে সেজে উঠেছে বাংলাদেশও৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here