দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ সরকার গঠন নিয়ে মহারাষ্ট্রে মহা নাটক ৷ সেই নিয়ে প্রথম থেকে চুপই ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ অবশেষে মুখ খুললেন বিজেপি সরকার পতনের পরে। তবে তাতেও বিজেপিকে খুব একটা আক্রমণ করেননি। বরং বেশি করে তাঁর নিশানায় মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের ভূমিকা ৷
এদিন মহারাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ফ্রিডম অ্যাট মিড নাইট শুনেছি ৷ গভর্নমেন্ট অ্যাট মিড নাইট শুনিনি৷ মহারাষ্ট্র আজ পথ দেখিয়েছে ৷ ভয় দেখিয়ে কিছু হবে না৷’
মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের পর থেকেই নাটকের পরে নাটক চলেছে। কিন্তু তা নিয়ে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন, তৃণমূল কংগ্রেসও ছিল চুপ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও কোনও মন্তব্য আসেনি রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে। এনিয়ে নানা মহলে ছিল জল্পনা। অবশেষে মুখ খুললেন তিনি দেবেন্দ্র ফড়নবিশ পদত্যাগ করার পরে। ফড়নবিশ সরকারের শপথ ও তার তিনদিন বাদেই ইস্তফা ৷
এমন জটিল পরিস্থিতির জন্য মহারাষ্ট্রে সরকার গড়া নিয়ে বিজেপিকে এদিন কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মুখ্যমন্ত্রীর মতে রাজ্যপালের ভূমিকা সঠিক ছিল না ৷
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে দিনের পর দিন চলেছে রাজনীতির পট পরিবর্তন ৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই মহানাটকীয় পরিবর্তন। রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। তার আগে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান অজিত পওয়ার।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা অসম্ভব বুঝেই সিদ্ধান্ত সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “দেশের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি ৷ আস্থা ভোট করতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ মাঝরাতে সরকার গড়ার কী দরকার ছিল ৷ রাজ্যপালের ভূমিকা ঠিক ছিল না ৷ সংবিধান মেনে কাজ করা উচিত ৷ কাউকে না জানিয়ে সরকার গড়া হল ৷ এভাবে সরকার গড়া ঠিক নয় ৷”
রবিবার শপথ মহারাষ্ট্রে,
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসছেন উদ্ধব
আগামী রবিবার ১ ডিসেম্বর শপথ। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন উদ্ধব ঠাকরে। যে ৫০:৫০ সমীকরণ নিয়ে বিরোধের জেরে দীর্ঘ দিনের শরিক বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল শিবসেনা, শেষমেশ তাতেই জয় পেলল তারা।
পাঁচ বছরের জন্য মহারাষ্ট্রের তাদের হাতেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ তুলে দিল এনসিপি এবং কংগ্রেস। সরকার গড়ার দাবি নিয়ে রাজভবনে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের ট্রাইডেন্ট হোটেলে বৈঠকে বসেন তিন দলের নেতারা। সেখানেই সর্বসম্মতিক্রমে ‘মহা বিকাশ আঘাদি’ জোটের নেতা এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উদ্ধব ঠাকরের নাম চূড়ান্ত হয়।
মহারাষ্ট্রের মহানাটকের অবসান হতে চলল। মঙ্গলবার উদ্ধব ঠাকরেকে দলনেতা হিসেবে বেছে নিলেন শিবসেনা–এনসিপি–কংগ্রেসের জোট ‘মহা বিকাশ আখাড়ি’–র বিধায়করা। অর্থাৎ এবার তিন দলের এই জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। সভায় উপস্থিত সমস্ত বিধায়করাই এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নিয়েছেন।
অর্থাৎ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন উদ্ধব। যা কিনা কেবল সময়ের অপেক্ষা। নবাব মালিক পরে সাংবাদিকদের জানান, এদিন রাতেই রাজ্যপালের সঙ্গে গিয়ে দেখা করবেন উদ্ধব ঠাকরে। সরকার গঠনের দাবি জানাবেন। রাজ্যপাল সেই দাবি মেনে নিলে আগামী ১ ডিসেম্বর শিবাজী পার্কে শপথ নিতে পারেন মহারাষ্ট্রে নতুন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সেই সঙ্গে শপথ নেবেন এনসিপি এবং কংগ্রেসের দুই উপমুখ্যমন্ত্রীও। এছাড়াও ওই দিন শপথ নেবেন মন্ত্রীরাও।
এদিনের সভায়, হবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উদ্ধবের নাম প্রস্তাব করেন এনসিপির জয়ন্ত পাটিল। তারপর সবাই তাঁর সেই প্রস্তাব মেনে নেন। এরপরই সভায় উপস্থিত শারদ পাওয়ার উদ্ধবের হাতে পুস্পস্তবকও তুলে দেন। পরে বক্তৃতা দিতে উঠে সোনিয়া গান্ধী–সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে উদ্ধব বলেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন কোনওদিন দেখিনি। আমি সোনিয়া গান্ধী–সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একে অপরের উপর বিশ্বাস রেখে আমরা দেশকে একটি নতুন পথ দেখালাম।’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘দেবেন্দ্র ফড়নবিশের তোলা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি প্রস্তুত। আমি কোনওকিছুতেই ভয় পাই না। মিথ্যে কথা বলা কখনই হিন্দুত্বের মধ্যে পড়ে না। আপনারা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমি গ্রহণ করলাম। আমি একা নই। আমার সঙ্গে আপনারাও মুখ্যমন্ত্রী। সবাই মিলে রাজ্যের কৃষকদের দুঃখ দূর করব। শিবাজী মহারাজ যে মহারাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা সেই মহারাষ্ট্রই তৈরি করব।’
এর আগে সকালেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মাত্র তিনদিন আগে শপথগ্রহণ করা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে নিজের ইস্তফাপত্র দিয়েও আসেন। এদিকে, উপমুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর আবার শারদ পাওয়ারের বাড়িতে গেলেন অজিত পাওয়ার।