নীলাদ্রি ভৌমিক:কলকাতা: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহধন্য কানন ওরফে শোভন চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের ভারপ্রাপ্ত আবাসন মন্ত্রী এবং কলকাতা পুরনিগমের মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। যদিও, এ সংক্রান্ত সংবাদ আগেই আমাদের দেশের সময় -এর সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বিষনজরে পড়ায় বাধ্য হয়েই, শোভনবাবু এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত, মমতার ভাই কানন তাঁর দিদি তথা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত পথ থেকে ক্রমেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। শোভন পদত্যাগ না করলে, তাঁকে এমননিতেই ছাটাই করা হত। বৈশাখীদেবীর সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ্যে আসাতেই, তৃণমূল এবার চড়ম বিড়ম্বনায় পড়ে ছিল। উল্লেখ্য, শোভন নিজে এর আগে তিনবার ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও, তা গ্রহণ করা হয় নি। এবার আবাসন দপ্তর সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে বিধানসভায় আবাসন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে শোভনবাবুর উতপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তারপরেই আবাসন মন্ত্রী পদত্যাগ পত্র পেশ করেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে তা গৃহীত করা হয়। একই সঙ্গে কোলকাতার পুরনিগমের মেয়র এর পদ থেকেও তিনি অব্যাহতি চান বলে দলীয় সূত্রের খবর৷ এখন দেখার রাজনৈতিক আর্বর্তে কোথায় তাঁর অবস্থান।নতুন মেয়র কে হবেন? তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পুর চেয়ারম্যান মালা রায়ের বাড়িতে তৎপরতা তুঙ্গে৷ আগামীকাল, মেয়র পদের ইস্তফা পুরনিগমে ছুটি থাকা সত্ত্বেও পৌঁছে দেবেন, শোভন বাবু। অন্যদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রীত্বের দফতর দেখবেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

এমনিতেই ক্রমাগত দলের অন্দরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন শোভনবাবু। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। দলের মধ্যে নানা কারণে তাঁকে নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছিল। দমকল দপ্তর সক্রিয় ছিল না বলেও নানা মহলে অভিযোগ উঠছিল। সেই অভিযোগ পৌঁছেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তারপরও সময় দিয়েছিলেন শোভনকে। কিন্তু তাতেও ফল হচ্ছিল না। তাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের পার্সোনাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালকে ইস্তফাপত্র দেন তিনি।বিধানসভায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। তারপর নবান্নে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও মনোমালিন্য ঘটে শোভনের। তাতেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ইস্তফাপত্র দেবেন। আর ইস্তফাপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। এমনকী সূত্রের খবর, তাঁকে মেয়র পদ থেকেও ইস্তফা দিতে বলা হয়। তবে তিনি তা করেননি। তিনি শুধু দমকল ও আবাসন মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। যা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজভবনে। শোভনের ইস্তফার পর মুখ খুলেছেন তাঁর স্ত্রী রত্না। তাঁর কথায়, ‘কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা কলকাতা এবং গোটা রাজ্যের মানুষ জানেন। মমতাদি ওঁকে বারবার বুঝিয়েছেন। কিছু নোংরা মানুষের জন্য শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সব শেষ হয়ে গেল। আমার স্বামীকে আকাশ থেকে মাটিতে পড়তে হল। মমতাদি ওঁকে জনসেবার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু উনি তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন না। কী যে মোহ ওঁকে ঘিরে ধরল, তা বলতে পারব না। কিন্তু এটা আমার কাছে খুব দুঃখের দিন।’ রত্নার বাবা, শোভনের শ্বশুর তথা মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাসের কথায়, ‘ওঁকে ওঁর কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হল।’ যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এত আলোচনা এবং জল্পনা, সেই বৈশাখী এদিন মুখ খোলেননি। ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত কোন যোগাযোগ করা যায়নি, প্রসঙ্গত, বৈাশাখীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শোভন বলেছিলেন, ‘আমি ওঁকে আমার বুক দিয়ে আগলাব।’ যে প্রসঙ্গে রত্নার কটাক্ষ, ‘তিনি বুক দিয়ে বাঁচাবেন বলেছিলেন। এখন ওঁকে কে বাঁচায়, তা দেখতে হবে!মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, দুটি পদ থেকেই শোভনের পদত্যাগ করার আবেদন সরকার গ্রহণ করেছে। আপাতত ওই দুই দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here