দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘটে যাদবপুরের পড়ুয়ারা ছক ভেঙে ধর্মঘট করেছিল। রাস্তায় বসে চলেছিল দাবা, ক্রিকেট। বলা যায় মহড়াটা হয়ে গিয়েছিল গত ৮ জানুয়ারি।
শনিবার মধ্যরাতে সেটাই আরও একবার করে দেখালেন কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায়। এনআরসি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনপিআরের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরে বিক্ষোভ চলছিলই। রাত বাড়লেও তা থামল না।
প্রধানমন্ত্রী যখন বেলুড় মঠে, তখন স্তব্ধ ধর্মতলা। বন্ধ মেট্রো চ্যানেলের একটি লেনের যান চলাচল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ছাত্রছাত্রীরা। কোথাও চলছে আগুন পোহানো। সঙ্গে চলছে গান-স্লোগান। এর পাশেই আবার ভেপারের আলোয় কেউ মেতেছে ক্রিকেট খেলায়। কেউ আবার ফুটবলে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কালো পতাকা দেখাতে শনিবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জমায়েত করেছিল একাধিক সংগঠন। দিনভর কোথাও কোনও উত্তেজনা না হলেও প্রধানমন্ত্রী যখন মিলেনিয়াম পার্কে পোর্ট ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে তখন ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে। ব্যারিকেড ভেঙে দেয় পড়ুয়ারা। পুলিশের সঙ্গে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের।
মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ধর্মতলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চে ফিরে যেতেই বাম ছাত্রদের তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। রানি রাসমনি রোডে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় শনিবার রাতে।
‘মমতা গো ব্যাক’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রানি রাসমনি রোড চত্বর। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি এক পড়ুয়া প্রশ্ন করেন, “দিদি প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দিলেন কেন বাংলায়?” মাইক হাতে মমতা বলেন, “উনি নিজে এসেছেন। তোমাদের আন্দোলন করার হলে দিল্লিতে গিয়ে করো।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেত্রী উষসী পাল বলেন, “শনিবার সারাদিন কলকাতা উত্তাল ছিল নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে। কিন্তু আমরা দেখেছি, রবীন্দ্রসদনের সামনে পুলিশ সাধারণ ছাত্র মিছিল আটকেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতে। সেটিং-এর রাজনীতি স্পষ্ট। আজ যখন সন্ধেবেলা তাঁকে ছাত্রছাত্রীরা জিজ্ঞেস করল, কেন মোদীকে ঢুকতে দিলেন? জবাব দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।”
রাত জাগা পড়ুয়াদের বক্তব্য, মোদী-মমতা কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো আর বাংলার গণতন্ত্র—দুটোই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। লড়াই তাই দুটোকেইরক্ষা করার।
বাম ছাত্রদের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার তারা সর্বশক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর চেষ্টা করবে। তাতে পুলিশ যদি আক্রমণ করে, তাহলে তা প্রতিহত করতে তারা প্রস্তুত।
যদিও বাম ছাত্রদের এ হেন কাণ্ডকারখানা নিয়ে তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, “ওরাই আসলে বিজেপির দালালি করছে। আন্দোলনকে ভেঙে দিতে চাইছে।” তাঁর কথায়, “ওদের ভোটগুলো সব বিজেপির ঝুলিতে চলে গেছে। এবার সংগঠনের যতটুকু পড়ে আছে সেটাও গেরুয়াশিবিরের হাতে বন্ধক দিতে চাইছে।”