দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভাল আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাঁর। পায়ের ফোলা ভাব একটু কমেছে, ঘাড়, কাঁধ, কবজির ব্যথাও একটু কম। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি।
আজ, শুক্রবার সকালে এসএসকেএম সূত্রের খবর, গত রাতে ভাল ঘুমিয়েছেন তিনি। খাওয়াদাওয়াও স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তবে এখনই হয়তো হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে না মুখ্যমন্ত্রীকে। এই সপ্তাহটা পর্যবেক্ষণেই রাখা হতে পারে। আরও খানিকটা সুস্থ হয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে ফের দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন তিনি। কবে ছাড়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে মেডিক্যাল বোর্ড আলোচনা করবে। আজ দিনভর মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখবেন চিকিৎসকরা।
গতকাল, বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বেডে শুয়েই ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। তাতে তিনি বলেন, “আমি আশা করি দু-তিন দিনের মধ্যে নিজের ফিল্ডে ফিরে যেতে পারব। তবে হয়তো পায়ের প্রবলেম থাকবে। কিন্তু আমি ম্যানেজ করে নেব।” তিনি এও বলেন, “আমার মিটিংগুলো আমি কিছুই নষ্ট করব না। কিন্তু হয়তো আমাকে কিছুদিন হুইল চেয়ারে ঘুরতে হবে। সেটা নিয়ে আপনাদের সহযোগিতা চাইব।”
বুধবার সন্ধ্যায় ঠিক কী হয়েছিল এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন তাও এদিন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সবাইকে বিশেষ করে আমার কর্মী ভাই বোন ও সাধারণ মানুষকে বলছি—এটা ঠিক যে কাল আমার খুব জোরে লেগেছিল। আমার হাত পায়ে চোট আছে। হাড়ে চোট আছে, লিগামেন্টে আছে। কাল আমার মাথা ও বুকে খুব ব্যথাও হয়েছে। বনেটের উপর দাঁড়িয়ে আমি নমস্কার করছিলাম, তখন এমন জোরে চাপ আসে, তাতে পুরো গাড়িটা চেপে যায় আমার পায়ের উপরে। এই অবস্থায় আমার কাছে যা ওষুধ-টষুধ ছিল সেগুলো খেয়ে আমরা কলকাতার পথে রওনা হই, তার পর থেকে ডাক্তারদের চিকিৎসাতেই আছি। আমি অনুরোধ করব সকলের কাছে যে সকলে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন, ভাল থাকুন। আর এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের অসুবিধা হয়।”
বুধবার নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে আঘাত পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সেখান থেকে গ্রিন করিডর করে কলকাতায় নিয়ে এসে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কাল রাতেই। প্রথমে তাঁর পায়ের এক্স-রে সহ একাধিক পরীক্ষা করা হয়। পরে এমআরআই করানোর জন্য বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমআরআই করানোর পর তাঁকে ফের নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।
এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল প্রেস কনফারেন্স করে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে এমআরআই করার পরেই তাঁর পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হাড়ে ঠিক কী ধরনের চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে তিনি বলেন, “হাড়ের চোট অনেক রকমের হতে পারে। তাতে ক্র্যাক হতে পারে, বোন অ্যাব্রেসন (হাড় ঘষে যাওয়া) হতে পারে। এটা হল হাড়ে চোট, যার মানে অনেক কিছুই হতে পারে।” মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে কোনও সার্জারি করার দরকার হয়নি বলেও জানান তিনি।
এসএসকেএম-এ মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসায় নিয়োগ করা হয়েছে ৭ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। সূত্রের খবর, ওই টিমে আছেন, এসএসকেএম-এর অর্থপেডিক বিভাগের প্রধান মুকুল ভট্টাচার্য, মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান সৌমিত্র ঘোষ, নিউরো সার্জারি বিভাগ প্রধান শুভাশিস ঘোষ। আছেন জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক বিমানকান্তি রায়, এন্ডোক্রনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ এবং অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট সর্বাণী সহাইকা। এছাড়াও পরামর্শ নেওয়া হয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট গোপালকৃষ্ণ ঢালীর।