দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার কাশ্মীরে শ্রীনগর, জম্মু ও লেহ বিমানবন্দরে অসামরিক বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে পঞ্জাবের দু’টি বিমানবন্দরও বন্ধ রয়েছে। সেগুলি হল চণ্ডীগড় ও অমৃতসর। উত্তরাখণ্ডে দেরাদুন বিমান বন্দরও বন্ধ রয়েছে। আরও পরে জানা যায়, পঠানকোট, কুলু, সিমলা, ধর্মশালা বিমান বন্দরও বন্ধ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে পাকিস্তানেও কয়েকটি বিমান বন্দর বন্ধ করা হয়েছে বলে জানা যায়। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ‘অপারেশনাল’ কারণে এয়ার স্পেস বন্ধ রাখা হয়েছে। এর বেশি তিনি কিছু বলেননি। অনেকের মতে, যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে এয়ার স্পেসে সেনাবাহিনীর বিমান চলাচল বেড়ে যায়। অনেক সময় যুদ্ধবিমান রানওয়ে ব্যবহার করে। এই সময় বাণিজ্যিক বিমান চলাচল করলে সাধারণ মানুষের বিপদ ঘটতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বন্ধ রাখা হয় অসামরিক বিমান চলাচল।

শ্রীনগরে এয়ারপোর্ট অথরিটির মুখপাত্র বলেছেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই বিমানবন্দর থেকে অসামরিক বিমানের ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতি বলতে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন জানাননি। জম্মু, লেহ ও শ্রীনগরগামী কয়েকটি বিমানকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার ভোররাত থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাবর্ষণ করতে থাকে পাকিস্তানি সেনা। ভারতীয় সেনাও পালটা জবাব দেয়।

মঙ্গলবার ভোররাতে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জইশ প্রশিক্ষণ শিবিরে আঘাত হেনেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান। তার ২৪ ঘণ্টা পরে এ বার দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামানো হলো বলে দাবি করা হয়েছে পাক বায়ুসেনার তরফে। তাদের দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার এক পাইলটকেও নাকি আটক করেছে পাক বায়ুসেনা।

পাক রেঞ্জার্স-এর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট করে জানিয়েছেন, বুধবার সকালেও ভারতীয় বায়ুসেনার দুটি বিমান নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানে ঢোকার চেষ্টা করে। পাক বায়ুসেনা দুটি বিমানকেই গুলি করে নামিয়েছে। একটি বিমান পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ও অন্যটি ভারতীয় সীমানার মধ্যে পড়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার এক পাইলটকেও আটক করেছে পাক বায়ুসেনা।

সব পাইলট সুরক্ষিত,মিথ্যে খবর ছড়াচ্ছে পাকিস্তান, দাবি ভারতীয় বায়ুসেনার

বুধবার সকালে পাকিস্তান দাবি করে, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ঢোকার চেষ্টা করলে পাক বায়ুসেনা তাদের গুলি করে নামায়। একটি বিমান পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও অন্যটি ভারতীয় সীমানার মধ্যে গিয়ে পড়ে। পাকিস্তানের এই দাবিকে অস্বীকার করলো ভারত। জানিয়ে দেওয়া হল, ভারতীয় বায়ুসেনার সব পাইলটরা সুরক্ষিত রয়েছেন। দিশেহারা হয়ে গিয়ে মিথ্যে খবর ছড়ানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের দাবির পর ভারত জানায়, বুধবার ভারতের তরফে কোনও মুভমেন্ট করা হয়নি। যা করেছে পাক বায়ুসেনা করেছে। বুধবার ভোরে একটি পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাকে গুলি করে নামানো হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই মিথ্যে খবর প্রচার করছে পাক সংবাদমাধ্যম। অন্যদিকে বুধবার সকালেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। কাশ্মীরের এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী পরিকল্পনা ছকতেই এই বৈঠক বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বুধবার ভোরে ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করে একটি পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। কিন্তু ভারতীয় বায়ুসেনার তৎপরতায় পিছু হটতে বাধ্য হয় সেটি। যদিও পালানোর সময় পুঞ্চ ও রাজৌরি সেক্টরে বোমাবর্ষণ করে ওই যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ার পর প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে গুলি করে নামানো হয়েছে ওই বিমানকে।

এই ঘটনায় পাক বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ড. মহম্মদ ফয়জল জানিয়েছেন, বুধবার পাক বায়ুসেনা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আঘাত হেনেছে। এটা ভারতের আক্রমণের প্রত্যাঘাত নয়। পাক যুদ্ধবিমানকে বলা হয়েছিল, ভারতীয় সেনা ও মানুষকে নিশানা না করে অন্য জায়গায় আঘাত হানতে। এই যুদ্ধবিমান পাঠানোর প্রধান কারণ ছিল ভারতকে দেখানো, যে পাকিস্তান সব ধরণের আক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি।

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসলামাবাদ কোনও রকমের যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না। কিন্তু যদি বাধ্য করা হয়, তাহলে আমরা তৈরি। এটা দেখানোর জন্যই দিনের আলোয় নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে পাক যুদ্ধবিমান। ভারত যেভাবে রাতের অন্ধকারে কোনও রকম প্রমাণ ছাড়া ( জইশ প্রশিক্ষণ শিবিরের ) পাকিস্তানে আক্রমণ চালিয়েছে, আমরা সেই রাস্তায় হাটতে চাই না। আমরা শান্তি চাই। সেই সুযোগই আমরা ভারতকে দিচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here