ভারত আমাদের পাশে ছিল, আমরাও ভারতের পাশে থাকব: বাইডেন: অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর পাঠাচ্ছে ফ্রান্স

0
810

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এবার করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে দাঁড়াল ফ্রান্সও। ভারতকে ভেন্টিলেটর, তরল অক্সিজেন এবং আইসিইউ-এর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে এই দেশ। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে সবরকমভাবে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে ফ্রান্স।

সংশ্লিষ্ট দেশের অ্যাম্বাস্যাডর ইমানুয়েল লিনেন জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতে ৮টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন জেনারেটর পাঠাবে ফ্রান্স। যা বছরভর ২৫০টি বেডের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়াও ২০০০ জন রোগীর জন্য তরল অক্সিজেন এবং ২৮টি ভেন্টিলেটর এবং আইসিইউ-এ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠানো হবে ভারতকে।

ভারতের পাশে থাকার বার্তা আগেই দিয়েছিল ইংল্যান্ড। শুধু তাই নয়, ভারতকে ভেন্টিলেটর এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠাচ্ছে এই দেশ। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইজরায়েল এবং জার্মানিও ভারতকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতকে ১৪০টি ভেন্টিলেটর দিচ্ছে ইংল্যান্ড। এছাড়াও ৪৯৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠানো হবে ভারতে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, ‘করোনার সঙ্গে লড়াই করার জন্য ভারতকে সবরকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত ইংল্যান্ড। বিশ্বকে করোনা মুক্ত করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবে ইংল্যান্ড।’

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইরসালা ভোর দির লিয়েন জানান, ‘ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত। আমরা সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। ভারতকে করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, ভেন্টিলেটর দিয়ে সাহায্য করব। আমরা ভারতবাসীর পাশে রয়েছি।’ প্রসঙ্গত,প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়ছে দেশজুড়ে। হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এরই মধ্যে অক্সিজেনের অভাব আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। সেই অভাব মেটাতে এবার ট্রেনে করে দেশের এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় অক্সিজেন পৌঁছ দেওয়ার অভিনব ব্যবস্থা নিয়েছে ভারতীয় রেল মন্ত্রক। চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন ও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটবে অক্সিজেন এক্সপ্রেস ।


অন‍্যদিকে,মার্কিন মুলুকে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রশাসনে সেই পরিবর্তন নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক বন্ধু সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলল না। বরং কোভিড মোকাবিলায় ট্রাম্প জমানায় ভারত যে ভাবে আমেরিকার পাশে ছিল, তার যথাযথ প্রতিদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হল বাইডেন প্রশাসনও।

সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে দীর্ঘ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল রবিবার। গতকাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। ডোভালকে তিনি জানিয়েছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে এই মুহূর্তে ভারতের কী কী প্রয়োজন তা চিহ্নিত করেছে বাইডেন প্রশাসন। অবিলম্বে ভারতকে ওষুধ, পিপিই কিট, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন এবং কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কাঁচা উপাদান সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন।


এর পরই সোমবার সন্ধ্যায় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ফোনে কথা হয়। সাউথ ব্লক সূত্রে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন যেভাবে সাহায্যের অঙ্গীকার করেছে সে জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবার মোদীকে বাইডেনও জানিয়েছেন, সংকটের সময়ে নয়াদিল্লি যেভাবে আমেরিকার পাশে থেকেছে তাতে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতা পেয়েছে।


এদিন সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইট করেও লিখেছেন যে, “মহামারীর গোড়ার দিকে আমাদের হাসপাতালগুলো সংকটে পড়ায় ভারত যেভাবে সাহায্য পাঠিয়েছিল, আমেরিকাও ভারতের সংকটের এই সময়ে সেভাবেই পাশে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফের টুইট করে লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় আমেরিকা যে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত তা জানিয়েছি। আমাদের পাশে (পড়ুন সংকটের সময়ে) ভারত ছিল, আমরাও ওদের পাশে থাকব”।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই টুইট করার পাশাপাশি হোয়াইট হাউজও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তাদের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে।

কোভিড মহামারী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর তার সব থেকে বেশি অভিঘাত দেখা গিয়েছিল দুটি দেশে। ইতালি ও আমেরিকা। সেই সময়ে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল কোভিড নিরাময়ে হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন কার্যকরী হতে পারে। সেই ওষুধের অন্যতম উৎপাদক দেশ হিসাবে কাল বিলম্ব না করে তা আমেরিকা, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানি, ব্রিটেনে পাঠিয়েছিল ভারত।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যতবারই কোনও মহামারী গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে ততবারই কোনও না কোনও দেশ বড় দাদার ভূমিকা পালন করে অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। আর এখন গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কেউ কারও থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কেউ গা বাঁচিয়ে চলতে পারবে না। পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া এই বিশ্বজোড়া সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। সেদিক থেকে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু পরিণত নয়, সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত।

Previous articleবাড়বে তাপমাত্রার পারদ! আগামী মাসের শুরুতেই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
Next articleএবার ভোটে জিতে কোন বিজয় মিছিল নয়, নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here