দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে গেছে পাঁচ রাফাল ফাইটার জেট। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নামবে আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। পাঁচ রাফালকে স্বাগত জানানোর জন্য আম্বালা এয়ারবেসে রয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদুরিয়া।

ভারতের আকাশসীমায় ঢোকার পরে পাঁচ রাফালকে আম্বালা অবধি উড়িয়ে আনছে দুটি সুখোই-৩০ এমকেআই ফাইটার জেট। যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে রাফালকে।

সোমবার ফ্রান্স থেকে যাত্রা শুরু করেছিল পাঁচটি রাফাল ফাইটার জেট। ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটরা এই রাফাল উড়িয়ে এনেছেন ফ্রান্স থেকে। সূত্রের খবর, আজ সকালে একবার সাময়িক বিরতি নিয়েছে আবু ধাবির আস ধাফরা এয়ার বেসে। সেখান থেকে ফের উড়ান শুরু করেছে সকাল ১১ টা নাগাদ। আবু ধাবি থেকে ওড়ার পরেই রাফালের সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা। রাফাল কম্যান্ডারকে অডিও বার্তায় আইএনএসের ডেল্টা ৬৩ অ্যারো লিডার  বলেন, “ভারত মহাসাগরে স্বাগত। গরিমা নিয়ে আকাশে ডানা মেলো।”

আম্বালা এয়ারবেসের ‘গোল্ডেন অ্যারো’ ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে রাফালগুলিকে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় এই স্কোয়াড্রনের দায়িত্বে ছিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বিএস ধানোয়া। আজ ফের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হবে বলেই জানিয়েছেন বায়ুসেনা আধিকারিকরা।

আম্বালা এয়ারবেস ও তার লাগোয়া চারটি গ্রামে গতকাল থেকেই জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। এয়ার ফোর্স স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বিকেল ৫টা অবধি রাস্তা বন্ধ থাকবে।  রাস্তাঘাটে লোকজনের জমায়েত, বাড়ির ছাদে উঠে প্রস্তুতি দেখার অনুমতি নেই কারও। রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। এয়ারবেস ও লাগোয়া চত্বরে আকাশে চক্কর কাটছে ড্রোন। চারদিক থেকেই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তিও যুক্ত করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। যে পাঁচটি রাফাল আসছে ভারতের হাতে সেগুলি থেকে মেটিওর ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে।  রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর জন্য ফ্রান্স থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দেশের ১২ জন পাইলটকে। সূত্রের খবর, এয়ারবাস ৩৩০ মাল্টিরোল ট্যাঙ্কার ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট উড়িয়ে কীভাবে মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরতে হবে সেই ট্রেনিং নিয়েছেন পাইলটরা। এই এয়ারক্রাফ্ট ফরাসি বায়ুসেনারা ব্যবহার করেন। রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর পদ্ধতি ও মাঝ আকাশে জ্বালানির ভরার প্রক্রিয়া জানতে আরও ৩৬ জন বায়ুসেনার পাইলটের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাও ফ্রান্সে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন।

৩৬টি রাফাল ফাইটার জেটের জন্য ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরেই। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ভারতের জন্য ১০টি রাফাল জেট তৈরি রেখেছে ফরাসি সংস্থা। তার মধ্যে পাঁচটি চলে আসবে এ বছরেই। মে মাসেই প্রথম চারটি রাফাল ভারতের হাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এই সময় পিছিয়ে যায়।

ডবল ইঞ্জিন মল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রাফাল আকাশ থেকে ভূমিতে ও সমুদ্রেও নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারে। ৯ টনের বেশি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে রাফাল। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইল যোগ করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। মেটিওর ও স্কাল্প মিসাইল বানিয়ছে ইউরোপিয়ান অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএ।

মেটিওর হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল।  প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। প্রতিটি মেটিওর মিসাইলের দাম ২০ কোটি টাকা। ‘স্কাল্প’  হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। দৈর্ঘ্যে ৫.১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কিলোগ্রাম। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল। আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায় এই মিসাইল। এটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও ফরাসি বায়ুসেনা। প্রতিটি স্কাল্প মিসাইলের দাম ৪০ কোটি টাকা। চিনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ফ্রান্স থেকে হ্যামার মিসাইল সিস্টেমও আনতে চলেছে ভারত।

হাইলি অ্যাজাইল মডিউলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ’ মিসাইল সিস্টেম আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায়। ৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এই মিসাইল সিস্টেমের পাল্লা ৬০ কিলোমিটার। উঁচু পার্বত্য এলাকা, সমতলভূমি যে কোনও জায়গা থেকে আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে ছোড়া যায়। একসঙ্গে অনেকগুলো নিশানায় আঘাত করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here