দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার রাজ্য ঘূর্ণঝড় আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবাহওয়া দফতর। এই ঝড়ের জেরে ভারী বৃষ্টি ছাড়াও ঝোড়ো হাওয়া চলবে। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা-সহ সাত জেলায় শনিবার সব স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানাল স্কুল শিক্ষা দফতর। আগেই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এই ঘোষণা করেছিল। পরে অন্যান্য স্তরের স্কুলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলায় শনিবার সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও কলকাতায় শনিবার সব প্রাথমিক স্কুল ছুটি থাকবে। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় এই নির্দেশ পাঠিয়েও দিয়েছে দফতর।
প্রথম থেকেই বুলবুলের গতিপথ নিয়ে বেশ খানিকটা ধন্দে রয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, শুক্রবার বিকেল থেকেই রাজ্যে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আগামিকাল সকালে দিক পরিবর্তন করে ঘূর্ণিঝড় কিছুটা শক্তি ক্ষয় করে ৯০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে উপকূলে।
পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে স্থলভাগের প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। আজই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বুলবুল।
শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। শনিবার ও রবিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে।
দিঘা-সহ উপকূলের সমস্ত এলাকাগুলিতেই সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, সিভিল ডিফেন্স এর লোকজন দিঘা সহ উপকূলে সতর্কতামূলক টহল দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। এই মহুর্তে পর্যটকদের জন্য ফিরে যাওয়ার কোন সতর্ক বার্তা নেই। আবহাওয়া এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও গুজব যাতে না ছড়ায় তারজন্য মাইকে প্রচার চলছে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণিতে।
আন্দামান সাগর লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হওয়া নিম্নচাপ ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিচ্ছে।বসিরহাট, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকাতেও জারি হয়েছে সতর্কতা।
বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গে। অতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূ্র্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এমনকি তা ১৩০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এর প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টির ভয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আসুন জেনে নওয়া যাক ঝড়ের সময়ে কী কী করবেন বা করবেন না–
১. যেখানে ঝড়ের তীব্রতা কম, সেখানে আশ্রয় নিন।
২. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হবেন না।
৩. পুরনো বাড়ি ও ঝুঁকিপূর্ণ দেওয়াল এড়িয়ে চলুন।
৪. ঝড়ের সময়ে গাড়ি চালাবেন না। নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকুন।
৫. রাস্তায় থাকলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যাবেন।
৬. বাড়ির জানালা-দরজা ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন।
৭. বাড়ির ইলেকট্রিক সংযোগ ঠিক আছে কিনা আগেই দেখে রাখুন।
৮. সম্ভব হলে বাড়ির সব রকম ইলেকট্রিক সংযোগ বন্ধ রাখা ভালো।
৯. ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, পানীয় জল ও ওষুধ রাখবেন।
১০. মোমবাতি বা ব্যাটারিচালিত কোনও আলো হাতের কাছে রাখুন।
বুলবুল মোকাবিলায় তৎপর নবান্ন, এক গুচ্ছ পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার:
শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে কোমর বেঁধে প্রস্তুত রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যেই উপকূলীয় জেলাগুলিকে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এদিন বুলবুলের মোকাবিলায় বৈঠক হয়েছে নবান্ন ও কলকাতা পুরসভায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যেই সেই বার্তা এসেছে রাজ্য প্রশাসনের কাছে। কেন্দ্রের তরফেও সতর্ক করা হয়েছে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গকে। প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব পি কে মিশ্র রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন দফায় দফায়।
দক্ষিণবঙ্গে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা এবং ঝাড়গ্রামের কিছু অংশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে চলেছে। এই সাত জেলার সব বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৎপর কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভাও।
ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্মের আকার নিয়েছে বুলবুল। শনিবারের মধ্যেই উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমেই পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগোচ্ছে বুলবুল। তবে বারবার গতিপথ বদলানোয় উপকূলের ঠিক কোন এলাকায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও নিশ্চিত নয় আবহবিদদের কাছে। তবে এ রাজ্যের সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে কোনও একটি জায়গায় স্থলভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা।
দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, বকখালির মতো সমুদ্রতীরবর্তী পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদের। উদ্ধারের জিনিসপত্র ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তৈরি রয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম। শুরু হয়েছে ২৪ ঘণ্টার নজরদারি।
তৎপরতা কলকাতাতেও। পুরসভা এলাকায় বুলবুলের প্রভাবে গাছ উপড়ে বা ভেঙে পড়লে সেগুলি দ্রুত সরানোর জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় পাম্পিং স্টেশনগুলি সচল রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা।
উপকূলবর্তী এলাকার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এমন এলাকায় নাগরিকদের সচেতন করার কাজও শুরু করেছে রাজ্য। চলছে মাইক প্রচার।