বিভূতিভূষণের জন্মদিনে যুবতীদের চটুল নাচ,ক্ষুব্ধ সাহিত্যপ্রেমীরা

0
1324

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি-বিজড়িত এলাকায় তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সেজে উঠেছিল সাহিত্য মেলা। অথচ সেই স্মৃতি মঞ্চেই আয়োজিত হল যুবতীদের চটুল নাচ!

নাচের তালে দর্শকাসনে কোমর দোলালো এলাকার মদ্যপরা। সাহিত্য মেলায় এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাহিত্যপ্রেমীরা। অনেকেই বলছেন, এটি বাংলা সাহিত্যের জন্য অত্যন্ত লজ্জার একটি কালো দিন৷

উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁর গোপালনগর থানার শ্রীপল্লি এলাকায় রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি-বিজড়িত বাড়ি। এই বাড়িতে তিনি কাটিয়েছেন স্কুলজীবন। রচনা করেছেন বহু সাহিত্যও। পরবর্তীকালে তিনি গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতাও করতে যেতেন এই বাড়ি থেকেই। সেই কারণে বাঙালি সাহিত্য প্রেমীদের কাছে বনগাঁর শ্রীপল্লি এলাকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

সূত্রের খবর, বিভূতিভূষণের জন্মদিন উপলক্ষ্যে গত ২৩ বছর ধরে শ্রীপল্লির মাঠে আয়োজিত হয় ‘বিভূতিভূষণ সাহিত্য মেলা ও লোকসংস্কৃতি উৎসব’। মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা, এমনকী বাইরের রাজ্য থেকেও বহু সাহিত্যপ্রেমী আসেন এখানে। বিভূতিভূষণের নামাঙ্কিত মঞ্চে চলে বিভূতি সাহিত্য-আলোচনা, বাউল গান-সহ বাংলার নানা প্রাচীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে বসে বিভিন্ন দোকান। বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন এ বার মেলাটি ২৪ বছরে পড়ল। দীর্ঘদিন মেলাটির দায়িত্ব সামলেছেন প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ এবং বর্তমান বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসরা। এ বার মেলার কমিটি বদল হয়েছে। নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় সৌমেন দত্ত, ইয়ান আলি মণ্ডল, অশোক হালদাররা। আর তারপরেই এই ছন্দপতন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সাহিত্যপ্রেমীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরের মতো এ বারও তাঁরা মেলায় হাজির হয়েছিলেন। মঞ্চের অনুষ্ঠান উপভোগও করছিলেন। রাত ন’টা নাগাদ হঠাৎই ছোট পোশাকে যুবতীরা চটুল নাচ শুরু করে। তা দেখতে ছুটে আসে মদ্যপ যুবকরা। মোবাইল উঁচিয়ে ভিডিও করতে থাকে তারা। সেই নাচে তালও মেলাতে থাকে। চটুল নাচের অনুষ্ঠান চলে বেশ কয়েক ঘণ্টা।

বিভূতিভূষণের নামাঙ্কিত মঞ্চে চটুল নাচের খবর পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন সাহিত্যপ্রেমীরা। এক সাহিত্যিকের কথায়, বিভূতিভূষণের গ্রামকেই কলঙ্কিত করলেন মেলা কমিটির লোকেরা। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বনগাঁর ভূমিপুত্র পথের পাঁচালী’র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি-বিজড়িত এলাকায় তাঁর জন্মদিনে চটুল নাচ আমাদের কাছে লজ্জার। কিছু মানুষ দায়িত্ব নিয়ে মেলাটিকে কলুষিত করল।”

বিভূতিভূষণের জন্ম দিবস পালনের নামে যে অপসংস্কৃতির ঘটনা ঘটেছে তা স্বীকার করে নিয়ে গোপালনগর এলাকায় তৃণমূল নেতা সৌমেন দত্ত জানিয়েছেন, এই সংস্কৃতি সিপিএমের আমলে সৃষ্ট। তখন থেকেই যেভাবে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে সেই ধারাকে বজায় রেখেই আমাদের কর্মীরা সেই অনুষ্ঠান পালন করেছেন।

আগামী দিনে ভুলভ্রান্তি দূর করে সঠিকভাবে অনুষ্ঠান পালন করার চেষ্টা করব। অন্যদিকে আরেক তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন ,

বনগাঁয় অনেক সাহিত্যিকের আনাগোনা থাকলেও তারা কখনোই বিভূতিভূষণের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানটি কি করে সুন্দর করা যায় তার জন্য পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেননি । তাহলে হয়তো সাহিত্যিকের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানটি আরো সুন্দর হতে পারে। আশা করবো ভবিষ্যতে সেই সুযোগ আসবে এবং স্থানীয় মানুষের সাথে সেই সমস্ত বুদ্ধিজীবিরাও একত্রিত হয়ে এই অনুষ্ঠানকে ত্রুটি মুক্ত করে তুলতে সাহায্য করবেন৷

Previous articleDESHER SAMAY E PAPER
Next articleঅমর কবি বিনয় মজুমদারের জন্মদিনের প্রস্তুতিতে কবিতা আশ্রম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here