দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার বিজেপি-র সমস্ত গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান শান্তনু। এ বার করণীয় কী, তা স্থির করতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতুয়া বিধায়কদের নিয়ে রণকৌশল-রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
শান্তনুর ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন সুব্রত ঠাকুর, অশোক কীর্তনীয়া, অসীম সরকার, অম্বিকা রায় এবং মুকুটমণি অধিকারী, আশিস বিশ্বাস এবং বঙ্কিম ঘোষের মতো বিজেপি বিধায়কেরা।
যদিও তাঁরা মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিও বটে। বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার বলেন, ‘কী বিষয়ে বৈঠক, তা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। ঠাকুরমশাইকে আমরা মানি। উনি ডেকেছেন, তাই চলে এসেছি।
তবে মঙ্গলবার শান্তনুর ডাকা এই বৈঠকের বিষয়সূচি যে মতুয়া সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে তার ইঙ্গিত মিলেছে অসীম বাবুর কথায়। তিনি বলেন, ৮৩টি আসনে মতুয়া-ভোট নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। তা হলে রাজ্য কমিটি করতে গেলে বা জেলা সভাপতি করতে গেলে মতুয়া প্রভাবিত যে বিধানসভাগুলো আছে সেখানে একটু আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল। কোনও আলোচনা হয়নি বলেই মনে হয় এই ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
ঠাকুরমশাই (শান্তনু ঠাকুর) বলেছেন, ‘গোঁসাই আসতে হবে’,তাই আমি গ্রুপ ত্যাগ করেছি। তার পর বিএল সন্তোষজি বলেন, যা কিছু হয়েছে ঘরোয়া ব্যাপারে। সমস্ত কিছু আমরা মিটিয়ে নিচ্ছি।আমি তখন ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলাম। আমি সব সময় ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে আছি। তবে আমারও ব্যক্তিগত বিষয় আছে। আমি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিষয়টি দেখব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,সোমবার বিজেপি-র গ্রুপ ছাড়ার পর শান্তনু বলেন, “বঙ্গ বিজেপি-র বর্তমান নেতৃত্বের শান্তনু ঠাকুর বা মতুয়া সমাজের ভোট নিষ্প্রয়োজন। তাই আমারও ওই সব গ্রুপে থাকার দরকার নেই। সময় মতো সব জবাব দেব।” সোমবার রাতেই তাঁর সঙ্গে কথা হয় বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শান্তনুর এই বৈঠক তলব। সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিজেপি-ও ।
সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন অথবা বিজেপি-তে নিজের জায়গা মজবুত করতে এরকম হুমকি দিচ্ছেন। শান্তনু ঠাকুরের দলীয় হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপ ত্যাগ নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি ৷তাঁর কটাক্ষ, ‘কে বিজেপি-র নেতা আর কে তৃণমূলের নেতা, তা গুলিয়ে গিয়েছে দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের বারবার দলবদলে।’
সম্প্রতি বাবুল সুপ্রিয় ও ঘনিষ্ঠদের পথে হেঁটেই বিজেপি-র সমস্ত অফিসিয়াল হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপ ত্যাগ করেছেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। যদিও এর কারণ তিনি এখনও স্পষ্ট করেননি। এই বিতর্ক নিয়ে সাংসদ বলছেন, বাজি ফাটাবেন না, বোমা ফাটাবেন তিনি।
তবে তিনি বোমা ফাটানোর আগেই বারাসতে এক অনুষ্ঠানে এসে বোমা ফাটিয়ে দিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি! শান্তনু ঠাকুর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে অবাক হবেন না জানিয়ে নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের রাজনীতি করছেন বিজেপি ও তৃণমূলের নেতারা।
কে তৃণমূল আর কে বিজেপি তা আমরা ঠিক করতে পারছি না। জনসাধারণও বুঝতে পারছে না।’ বাবুল সুপ্রিয়, সব্যসাচী দত্তর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘শান্তনু ঠাকুরেরও একই অবস্থা। হয়ত ধর্মীয় স্বার্থ বা ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন বা পদত্যাগ করবেন বলে ব্ল্যাকমেইল করে চাপে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে বিজেপি-তে যোগ দিলে বিশেষ কিছু ভাবব না। এরকম ঘটনা ইতিমধ্যে দেখেছি।’ একইসঙ্গে বিজেপি-কে কটাক্ষ করে তাঁর সংযোজন, ‘শান্তনু ঠাকুর কী করলেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিজেপি যে মোহ দেখিয়েছিল, সেটা যে বাস্তবে কিছুই নয়, তা আজ মানুষ বুঝতে পারছে।