দেশের সময়, বনগাঁ: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল রতন ঘোষের বিরুদ্ধে। বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার জানান, ‘‘বনগাঁ ও গোপালনগর থানায় রতন ঘোষের বিরুদ্ধে ৪টি আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’’ রতন বলেন, ‘‘এত দিন অভিযোগ উঠল না। একদিনের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ উঠেছে। মানুষ এর জবাব দেবেন।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, রতন ঘোষের পুলিশি নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা গোপালনগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীনই গত বুধবার বিকেলেই জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা রতন ঘোষ। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র জেলা পরিষদের সভাধিপতির অফিসে এবং জেলাশাসকের দফতরে জমা দেন। পদের পাশাপাশি দল থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। আর প্রত্যাশামতোই শুক্রবার তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তবে, উত্তর ২৪ পরগনায় নয়, এদিন কলকাতা হেস্টিংসের বিজেপি কার্যালয়ে গেরুয়া শিবিরে পতাকা হাতে তুলে নিলেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সায়ন্তন বসুদের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন রতন ঘোষ। তবে শুধু তিনি নন, তাঁর সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা যোগ দেন বিজেপি শিবিরে। এছাড়াও হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের কংগ্রেস নেতা সরোজরঞ্জন কারার-সহ বেশ কয়েকজনও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।
তবে, কী কারণে হঠাৎ তাঁর এই পদক্ষেপ, তার জবাবে তিনি জানান,জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকলেও তিনি সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারছিলেন না। সূত্রের খবর, দলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল রতনের। বিক্ষুব্ধ বিধায়ক, মন্ত্রী ও নেতাদের নিয়ে যখন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নাজেহাল, তখন জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদ ও দলীয় সদস্যপদ থেকে রতনের পদত্যাগ ও বিজেপিতে যোগদান নিঃসন্দেহে শাসকদলের অস্বস্তি বাড়াবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গোপালনগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা শেষ বুধবার বিকেলে দলের কাউকে না জানিয়ে বারাসতে চলে আসেন বনগাঁর পোড় খাওয়া নেতা রতন। বারাসতে জেলা পরিষদ ও জেলাশাসকের দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তাঁর অনুগামীদের সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা থাকলেও, জেলা তৃণমূলের একাংশের কাজকর্মে রতন ক্ষুব্ধ ছিলেন। জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকলেও স্বাধীন ভাবে তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। দলকে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি বলেই তিনি শেষমেশ পদত্যাগের পথেই হেঁটেছেন জানান রতন।
এদিকে রতন দল থেকে সরে আসার পর দলের একাংশের নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে সূত্রের খবর,গুঞ্জন শুরু হয়েছে রতনের পর আরও তিন জনের নামের প্রস্তাব গিয়ছে পদ্ম শিবিরে, চলতি মাসেই হয়তো তাঁরাও পা রাখবেন গেরুয়া শিবিরে এমনটাই দাবি রতন ঘোনিষ্ঠদের৷ যদিও রতন এ বিষয়ে বলেন সময় মতো সব বলব।
রতনের সিদ্ধান্তে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘রতন চলে যাওয়ায় তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ দলের অনেকেই অবশ্য বলছেন, ‘‘রতন বিজেপিতে যাওয়ায় তৃণমূলের বড় ক্ষতি হলো। কারণ তিনি একজন দক্ষ সংগঠক।
রতনের দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আগেই বলেছিলেন, ‘‘কেউ স্বেচ্ছায় দল ছাড়তে চাইলে কী বলার থাকতে পারে।‘‘রতনের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। তাঁকে আগেই সতর্ক করেদেওয়া হয়েছিল,আমরা সবসময় দলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের রাখতে চাই।’’
এ বিষয়ে রতন জানিয়েছেন, ‘‘এক সঙ্গে দীর্ঘ ২২ বছর দল করলাম। বারো বছর একই জেলা কমিটিতে কাজ করার পরে আমি যেই দল ছাড়লাম, তখন দুর্নীতির কথা মনে পড়ল? তাঁর (জ্যোতিপ্রিয়) বিরুদ্ধেও তো অনেক অভিযোগ আছে।’’
রতনের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই দলে তাঁর গুরুত্ব ছিলনা বলে মনে করেন তিনি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হলেও তাঁকে পদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছিল না। কয়েক মাস দলীয় বৈঠকেও তাঁকে ডাকা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ।
জেলা তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর গোপাল শেঠ অবশ্য রতনের এই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, প্রাইমারীতে স্কুল শিক্ষকের চাকরী দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে,তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে৷এখন সেই সব টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় তার জন্য তৃণমূল দল ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে,এই ধরনের জালিয়াতী করা বা মানুষের সাথে প্রতারণা করা বেক্তির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে জায়গা নেই৷
এদিকে বিজেপির জন্য রতনের দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি দেবদাস মণ্ডল, তিনি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী ও দাগি অপরাধী ছাড়া সকলের জন্য আমাদের দলের দরজা খোলা আছে। আমরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পর্ণ মানুষদেরকে নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে চাই। তিনি আরও বলেন, রতন ঘোষ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিল এটা সর্বজন স্বীকৃত, তৃণমূল দল প্রতিষ্ঠার হওয়ার পর যাঁদের হাত ধরে তৃণমূল বনগাঁয় শক্তিশালী হয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন রতন কিন্তু তাঁকে ওই দলটা কোন দিনই সম্মান দেয়নি বলেই রতনের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের, এখন দল ছেড়েছে বলেই হয়তো কুৎসা ছড়াচ্ছে , যদি টাকা তচ্ছরুপের কোন ঘটনা থাকে তার জন্য আইন -আদালত আছে সেটা প্রমাণসাপেক্ষ ব্যপার। ’’
রতন ঘোষ যদিও গোপাল বাবুর কথার কোন জবাব দেননি, শুধু বলেছেন আগামী বিধান সভার ব্যালট বক্স-এ এর উত্তর পাওয়া যাবে আর একটু ধৈয্য ধরুন। ওই দলটাই মান চিত্র থেকে মুছে যাবে।