
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সম্প্রতি রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলের একটাই স্লোগান ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। কিন্তু এত গেল দলীয় প্রচারের গল্প। কিন্তু সত্যিই কি বাংলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চায়? এবিপি ও সিএনএক্স-এর জনমত সমীক্ষায় যে পূর্বাভাস সামনে এসেছে সেখানে দেখা গিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ‘বাংলার মেয়ে’ মমতাকেই চাইছে।

সোমবার যে জনমত সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রশ্ন ছিল পশ্চিমবঙ্গ পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাকে চায়? সমীক্ষা থেকে যে উত্তর পাওয়া গিয়েছে তা হল- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাইছে- ৪৩ শতাংশ, দিলীপ ঘোষকে চাইছে- ২৮ শতাংশ, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইছে ৮ শতাংশ, কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি পেয়েছেন ৫ শতাংশের সমর্থন, বাম নেতা সুজন মুখোপাধ্যায়কে চাইছে ৪ শতাংশ বঙ্গবাসী।
আসন্ন ভোটে ২৯৪-আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা কে দখল করবে, এই প্রশ্নের উত্তরে দু দফার জনমত সমীক্ষায় এখনও কিন্তু এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে সিএনএক্স-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৮ শতাংশ মমতাকে পছন্দ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীপদে। দিলীপ ঘোষকে পছন্দ ছিল ১৯ শতাংশের। শুভেন্দু অধিকারী (১০ শতাংশ), অধীর চৌধুরী (৫ শতাংশ), সুজন চক্রবর্তী (৪ শতাংশ), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (৪ শতাংশ), মুকুল রায় (৩ শতাংশ)। গেরুয়া শিবিরে বাকিদের থেকে দিলীপ এগিয়ে থাকলেও মমতাকে এখনও ছুঁতে পারেননি।

সিএনএক্স-এর জনমত সমীক্ষায় এও দেখা গিয়েছে যে বাংলার মানুষ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই আস্থা রেখেছে। যেমন- বিজেপি না তৃণমূল ক্ষমতায় এলে কে বেকার সমস্যার সমাধান করবে? এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে তথ্য দেখাচ্ছে তৃণমূলে আস্থা রাখছে ৪৪%, বিজেপির প্রতি আস্থা রেখেছে ৩৮%, দু দলই সমস্যার সমাধান করবে একথা জানিয়েছে-৫ %, কেউ পারবেন না ২%, বলতে পারব না ১১%।
তৃণমূলের আসন বাড়ার ইঙ্গিত, আসন কমতে পারে বিজেপির— সিএনএক্স-এর দ্বিতীয় দফা জনমত সমীক্ষায় সামনে এল এই ফল:

রাজ্যে ২৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৭টি বেছে নিয়ে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। তখনও পর্যন্ত কোনও দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়নি। মোট ৯ হাজার ৩৬০ জনের মতামতের ভিত্তিতে সিএনএক্স- এবিপি আনন্দ সমীক্ষায় যে ইঙ্গিত উঠে এসেছে, তাতে তৃণমূলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা স্পষ্ট। বলা হয়েছে, তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৬৪। বিজেপি জিততে পারে ১০২ থেকে ১১২। বাম – কংগ্রেস পেতে পারে ২২ থেকে ৩০ এবং অন্যেরা পেতে ১ থেকে ৩ আসন।

এই ধরনের সমীক্ষার ফল অনেক সময়ই মেলে না। তবে ভোট- ভবিষ্যৎ বোঝার ক্ষেত্রে এই ধরনের জনমত সমীক্ষা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি।
এ রাজ্যের ভোট নিয়ে সিএনএক্স প্রথম সমীক্ষাটি করেছিল মাসখানেক আগে। সেখানে আসন-সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছিল, তৃণমূল পেতে পারে ১৪৬- ১৫৬। বিজেপি পেতে ১১৩- ১২১। বাম- কংগ্রেস ২০- ২৮ এবং অন্যেরা ১- ৩।
একক গরিষ্ঠতা পেতে হলে যে কোনও দল বা জোটকে কমপক্ষে ১৪৮ আসন পেতে হবে। সে দিক থেকে সিএনএক্স-এর প্রথম সমীক্ষায় তৃণমূলের নূন্যতম আসন সম্ভাবনা ১৪৮ ছোঁয়নি। এ বার তাদের দ্বিতীয় সমীক্ষায় সেই সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে কমপক্ষে ১৫৪-তে পৌঁছেছে। সর্বোচ্চ আসন পাওয়ার সংখ্যা ১৫৬ থেকে ১৬৪-তে পৌঁছতে পারে, বলছে সমীক্ষা। অন্য দিকে, প্রথম সমীক্ষায় বিজেপির ন্যূনতম আসন ধরা ছিল ১১৩, এ বার তা কমে ১০২। একই ভাবে সর্বোচ্চ আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনাও ১২১ থেকে কমে হয়েছে ১১২। বাম- কংগ্রেসের অবস্থান দুই সমীক্ষাতেই মোটামুটি এক। গত সমীক্ষায় ছিল ২০- ২৮। এ বার ২২- ৩০।

ভোট শতাংশে অবশ্য দুই সমীক্ষাতেই তৃণমূল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে— ৪২%। তবে বিজেপির ভোট শতাংশ ৩৭ থেকে কমে ৩৪% হতে পারে বলে সমীক্ষায় ইঙ্গিত। তবে বাম- কংগ্রেসের ভোট শতাংশ ১৭ থেকে বেড়ে ২০ হতে পারে সমীক্ষায় ধরা পড়েছে।
জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বারের মতো এ বারেও এগিয়ে। কিন্তু দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের ক্ষেত্রে তাঁর দলের খুব ভাল ছবি সমীক্ষায় ফুটে ওঠেনি। তৃণমূলের দুর্নীতির কথা বলেছেন ৫৯%, পরিবারতন্ত্রের দিকে আঙুল তুলেছেন ৬৯% আর সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন ৪০%। বিজেপির ক্ষেত্রে আবার সাম্প্রদায়িকতার তকমা দিয়েছেন ৬০%, দুর্নীতি ৪১% আর পরিবারতন্ত্র ৩১%।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৮% মানুষ মনে করেন মমতা ‘এটা আমার ভোট’ বলায় লাভবান হবেন। ৩৩% মনে করেন, তাতে লাভ হবে না। আবার মতামত জানাতে পারেননি ২৯% উত্তরদাতা। একই ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগে তৃণমূল ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন ৪৯%। আর ৩২% মনে করেন তা হবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, ১৯% মানুষ এই প্রশ্নে কোনও স্পষ্ট মত দেননি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যে পরিমাণ উত্তরদাতা সরাসরি উত্তর দেননি, তাতে সামান্য হেরফের হলেও মূল ছবিটি অনেক বদলে যেতে পারে। এই সমীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে পছন্দ করেছেন শতকরা ৪৩ জন। বিজেপির দিলীপ ঘোষ ২৪%-এর সমর্থন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে। আর ৬১% ভোটার এই সমীক্ষায় জানিয়েছেন, বিজেপি সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করলে ভোটে লাভবান হতে পারে।
