পিয়ালী মুখার্জী, কলকাতা: দীপাবলীর পরের দিন, কার্তিক মাসের প্রতিপদায় গোবর্ধন পুজো করা হয়। এই পুজো অন্নকূট মহোৎসব বলে সুপরিচিত। চলতি বছর ৫ই নভেম্বর গোবর্ধন পুজো।
এদিন গোরু ও গোর্বধন পর্বতের পুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। এদিন গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের আকৃতি তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি গোরু ও গোয়ালাদেরও আকৃতি বানানো হয়। সেখানেই কৃষ্ণকে প্রতিষ্ঠিত করে পুজো করা হয়। গোবর্ধন পুজোর কারণ হিসেবে পৌরাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।

অন্নকূট প্রধানত বৈষ্ণবদের উৎসব হলেও অনেক শাক্ত পরিবারে ও মন্দিরে এর চল আছে। এ পুজোর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। বৃন্দাবনবাসীরা ৫৬ রকম পদের ভোগ দিয়ে বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্রের পুজো করত। কৃষ্ণ এক বার বৃন্দাবনবাসীদের ইন্দ্রপূজা করতে নিষেধ করেন। এতে দেবতা ইন্দ্র রেগে গিয়ে বৃন্দাবনের উপরে মুষলধারে বর্ষণ করেন। বৃন্দাবনবাসীদের ওই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে বৃন্দাবনের উপরে ছাতার মতো করে ধরে থাকেন। ইন্দ্র পরাজিত হন। তার পর থেকে কৃষ্ণের নির্দেশে বৃন্দাবনবাসী কার্তিক মাসে অমাবস্যার পরদিন ‘গিরি গোবর্ধন’-এর পুজো আরম্ভ করে। সেই পুজোই অন্নকূট উৎসব।

কলকাতার অনেক মন্দির ও পরিবারে অন্নকূট উৎসব হয়। সেগুলির মধ্যে সব থেকে বড় উৎসব হয় বাগবাজারের মদনমোহন মন্দিরে। বাগবাজার-কুমোরটুলি এলাকার মদনমোহনতলা অঞ্চলে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোকুলচন্দ্র মিত্র। ১৭৬১তে গোকুলচন্দ্র তাঁর এক বিঘারও বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি বাড়ির দোতলায় কুলদেবতা ‘মদনমোহন’-এর জন্য ‘দরবার কক্ষ’ (মন্দির) তৈরি করলেন। একতলায় তৈরি হল ঠাকুরদালান ও নাটমন্দির। কার্তিক মাসের শুক্লা-প্রতিপদ তিথিতে নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ১৫৭ রকম পদ তৈরি হয়। পুজো শেষে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয় ওই অন্নভোগ।

উত্তর কলকাতার বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের ভট্টাচার্য় পরিবারের অন্নকূট উৎসবে ছবিগুলি তুলেছেন -ধ্রুব হালদার৷

উত্তর কলকাতার বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের ভট্টাচার্য় পরিবার প্রতি বছরের মতো এবারেও আয়োজন করেছে অন্নকূট উৎসব।

প্রায় পঁচিশ বছর আগে শ্যামপুকুরের বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের বাড়িতে অন্নপূর্ণা মূর্তি ও শ্রীধর (শালগ্রাম শিলা) স্থাপন করেন ভূপতি ভট্টাচার্য। অন্নকূট উৎসবে ১১৫ রকম রান্না করা পদ ও ১২০ রকম মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। এখানে মোচা, থোড়, কুমড়ো ইত্যাদি সব্জি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের পাশাপাশি ভোগ হিসেবে ফুচকা, আইসক্রিম, কোল্ড-ড্রিংকসও দেওয়া হয়। ভট্টাচার্যবাড়ির অন্নকূটে জাতিভেদ মানা হয় না, যে কোনও বর্ণের মানুষ এসে রান্না করতে পারেন। রানি রাসমণির কন্যা জগদম্বাদেবী ১৮৭৫-এ ব্যারাকপুর তালপুকুরের অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব হয় অন্নপূর্ণাপুজোর দিনে। ওই দিন সকালে মূল পুজো, কুমারীপুজো ও হোমের পরে হয় অন্নকূট। একুশ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ৫১ রকম পদ দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে।

মধ্য কলকাতার  এক বনেদি বাড়ির জগন্নাথ মন্দিরে অন্যান্য বারের মতো এবারও পালিত হলো অন্নকূট মহোৎসব।ছবি তুলেছেন- ধ্রুব হালদার৷

মধ্য কলকাতার এক বনেদি বাড়ির জগন্নাথ মন্দিরে অন্যান্য বারের মতো এবারও পালিত হচ্ছে অন্নকূট মহোৎসব।

বনগাঁর চাঁপা বেড়িয়া অঞ্চলের রামকৃষ্ণ মঠেও অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। উৎসবের দিন পিতলের পরাতে প্রায় আড়াই মণ চালের ভাত দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে। চুড়ো করে সাজানো ভাতের গায়ে সব্জি দিয়ে কালীর মুখ আঁকা হয়। সঙ্গে থাকে ১৫৫ রকম নিরামিষ পদ।

দ্বাপর যুগে মানব অবতার কৃষ্ণের রূপ ধারণ করেন ভগবান বিষ্ণু। তাঁর এই কৃষ্ণ অবতারে নানান লীলাখেলায় ব্রজবাসীর মন জয় করেন তিনি।

একদা এক উৎসবের দিনে মা যশোদা ও বাবা নন্দকে উৎসবের কারণ জিগ্যেস করেন তিনি। উত্তরে, কষ্ণ জানতে পারেন, ইন্দ্রকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই উৎসবের আয়োজন, কারণ ইন্দ্রের বর্ষার কারণে জল পান তাঁরা, যার ফলে ফসল উৎপন্ন হয়। শুনে কৃষ্ণ বলেন, এ সবই ইন্দ্রের কর্তব্য। তাই গোবর্ধন পর্বতের পুজো করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন কৃষ্ণ। কারণ গোবর্ধন পর্বতেই তাঁদের গোরু চরতে যায়। সেই পর্বত থেকেই ফল, ফুল ও সবজি পাওয়া যায়।

এর পরই ব্রজবাসী গোবর্ধন পর্বতের পুজো করেন। একে ইন্দ্র নিজের অপমান মনে করেন ও মুসলধারে বৃষ্টিপাত ঘটান। ব্রজবাসীকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ৭ দিন পর্যন্ত গোবর্ধন পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুলে তুলে নেন। এর পর সমস্ত ব্রজবাসী ওই পর্বতের তলায় আশ্রয় নেন। তখন নিজের কৃতকর্মে লজ্জিত ইন্দ্র কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই কারণে গোবর্ধন বা অন্নকূট উৎসব পালিত হয়। এই ভাবেই সেই যুগ থেকে এই বিশেষ দিনে পালিত হয়ে আসছে অন্নকূট উৎসব।

দীপাবলীর পরের দিন, কার্তিক মাসের প্রতিপদায় গোবর্ধন পুজো করা হয়। এই পুজো অন্নকূট মহোৎসব বলে সুপরিচিত। চলতি বছর ৫ই নভেম্বর গোবর্ধন পুজো। এদিন গোরু ও গোর্বধন পর্বতের পুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। এদিন গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের আকৃতি তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি গোরু ও গোয়ালাদেরও আকৃতি বানানো হয়। সেখানেই কৃষ্ণকে প্রতিষ্ঠিত করে পুজো করা হয়। গোবর্ধন পুজোর কারণ হিসেবে পৌরাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।

দ্বাপর যুগে মানব অবতার কৃষ্ণের রূপ ধারণ করেন ভগবান বিষ্ণু। তাঁর এই কৃষ্ণ অবতারে নানান লীলাখেলায় ব্রজবাসীর মন জয় করেন তিনি।

একদা এক উৎসবের দিনে মা যশোদা ও বাবা নন্দকে উৎসবের কারণ জিগ্যেস করেন তিনি। উত্তরে, কষ্ণ জানতে পারেন, ইন্দ্রকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই উৎসবের আয়োজন, কারণ ইন্দ্রের বর্ষার কারণে জল পান তাঁরা, যার ফলে ফসল উৎপন্ন হয়। শুনে কৃষ্ণ বলেন, এ সবই ইন্দ্রের কর্তব্য। তাই গোবর্ধন পর্বতের পুজো করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন কৃষ্ণ। কারণ গোবর্ধন পর্বতেই তাঁদের গোরু চরতে যায়। সেই পর্বত থেকেই ফল, ফুল ও সবজি পাওয়া যায়।

এর পরই ব্রজবাসী গোবর্ধন পর্বতের পুজো করেন। একে ইন্দ্র নিজের অপমান মনে করেন ও মুসলধারে বৃষ্টিপাত ঘটান। ব্রজবাসীকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ৭ দিন পর্যন্ত গোবর্ধন পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুলে তুলে নেন। এর পর সমস্ত ব্রজবাসী ওই পর্বতের তলায় আশ্রয় নেন। তখন নিজের কৃতকর্মে লজ্জিত ইন্দ্র কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই কারণে গোবর্ধন বা অন্নকূট উৎসব পালিত হয়। এই ভাবেই সেই যুগ থেকে এই বিশেষ দিনে পালিত হয়ে আসছে অন্নকূট উৎসব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here