দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় লকডাউনের শর্ত যে ঠিক মতো মানা হচ্ছে না সে ব্যাপারে এক সপ্তাহে আগে রাজ্যকে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় দিল্লি। বরং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় পরিস্থিতি ‘বিশেষ ভাবে গুরুতর’। সংক্রমণের নিরিখে এই স্পর্শকাতর জেলাগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তেমনই ধারনা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। তাই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগ করে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
GoI to States:
— Spokesperson, Ministry of Home Affairs (@PIBHomeAffairs) April 20, 2020
Violations to #lockdown measures reported, posing a serious health hazard to public & risk for spread of #COVIDー19:
Incidents of violence on frontline healthcare prof; complete violations of social distancing norms; movement of vehicles in urban areas
রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দুটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছে কেন্দ্র। তারা ওই সাত জেলার পরিস্থিতি ঘুরে দেখবে। রবিবার ওই চিঠি নবান্নকে পাঠিয়ে এও জানানো হয়েছে যে, অনধিক তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছবে।
এই ৭ জেলায় কী কী খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন মোতাবেক লকডাউনের শর্ত সেখানে ঠিক মতো পালিত হচ্ছে কিনা তা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে দেখবেন, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ কেমন হচ্ছে, মানুষ সোশাল ডিস্টেন্সিং মানছে কিনা, রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত কেমন। তা ছাড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, হাসপাতালের পরিস্থিতিও সরেজমিনে দেখবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, হটস্পট জেলাগুলিতে নমুনা পরীক্ষা কত হয়েছে, তার পরিসংখ্যানও খতিয়ে দেখবে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি। প্রসঙ্গত, বাংলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ কেন্দ্রে শাসক দল বিজেপির অভিযোগ, নমুনা পরীক্ষা যথেষ্ট সংখ্যায় হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে কত জন আক্রান্ত সেই সংখ্যা সরকার গোপন করছে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারেও কোনও ছবি দেখাচ্ছে না রাজ্য সরকার। তাতে সাধারণ মানুষ আরও বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিজেপি-র আরও অভিযোগ, যেহেতু রাজ্য সরকার আক্রান্তের সংখ্যা কম করে দেখাচ্ছে, তাই বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের এই ধারণা হচ্ছে যে বাংলায় সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি। সব ভাল আছে। তাই অনেকেই লকডাউনের শর্ত ভেঙে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এই সাত জেলায় পর্যাপ্ত টেস্ট কিট রয়েছে কিনা, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকমতো পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট তথা পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি পাচ্ছেন কিনা তাও দেখবে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে থাকা শ্রমিকদের অবস্থাও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।
দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে।
প্রথম টিমটি কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর চব্বিশ পরগনায় যাবে। পাঁচ জনের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। সেই সঙ্গে থাকবেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব রমেশ চন্দ্র গন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জিলে সিংহ ভিকাল, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক আর পতি এবং উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের ডিরেক্টর সীতারাম মিনা।
দ্বিতীয় দলটি যাবে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে। তার নেতৃত্ব দেবেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত জোশী। সেই সঙ্গে থাকবেন পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক শিবানী দত্ত, বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার উপদেষ্টা অজয় গাঙওয়ার, উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের ডিরেক্টর ধর্মেশ মাকওয়ানা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি এন বি মানি।