দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শততম কিষান রেলের সূচনাতেও কৃষি আইনের সমর্থনে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ ভোটের দিকে নজর রেখে কিষান রেল কেন প্রয়োজন তাও তুলে ধরলেন তিনি। রাজনৈতিক কারাবারিরা যাকে বলছেন ‘এক ঢিলে দুই মারা’। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, ‘ বাংলায় ফল-সবজি উৎপাদনে কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু তা বাজারজাত করতে সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। সেই সমস্যা যাতে আর না হয়, তার জন্যই কিষান রেল।’

নয়া ট্রেনটির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের কৃষকদের অভিনন্দন জানাই। কোভিড পরিস্থিতিতেও গত ৪ মাসে কিসান রেল নেটওয়ার্কের প্রসার ঘটেছে এবং এখন ১০০তম ট্রেনটি তাতে সংযুক্ত হল। কৃষকদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের রোজগার বৃদ্ধিতে কিসান রেল একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ওই ট্রেনে হিমঘরের ব্যবস্থা থাকবে। তাতে নিরাপদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ফলমূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ সরবরাহ করা যাবে।’’

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘বাংলায় আলু, কাঁঠাল, কপি ও বেগুনের মতো সবজির ব্যাপক ফলন হয়। তাছাড়া আনারস, লিচু, আম, কলার মতো প্রচুর ফলও হয়। নোনা ও মিষ্টি জলের মাছেরও কোনও ঘাটতি নেই। তবে দেশের বাজারে ফসল পাঠানোর সমস্যা থেকে গিয়েছে। কিষান রেলের কারণে বাংলার কৃষকদের সেই সমস্যা মিটবে। রোজগার বাড়বে তাঁদের।’ উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের সাঙ্গোলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের শালিমার পর্যন্ত চলবে শততম কিষান রেল।

ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আশ্বাস এবং বিতর্কিত ৩টি কৃষি আইনের প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে এই মুহূর্তে কৃষক আন্দোলনে উত্তপ্ত দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের একাংশ। সমঝোতায় আসতে ৩০ ডিসেম্বর ষষ্ঠ দফায় কৃষকদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যেই সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কিসান রেলে প্রকল্পের ১০০তম কিসান ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর এই বক্তব্যকে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘বাংলা-ফোবিয়া ভোগার ইঙ্গিত দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী? এখন আপনার সব ভাষনেই বাংলা-বাংলা-বাংলা। আজও তাই করলেন। এবার মন দিয়ে শুনুন, আগে কৃষক বিরোধী আইন প্রত্যাহার করুন। তার আগে কৃষকদের নিয়ে একটা শব্দও আপনি আর বলবেন না। ধন্যবাদ।’

উল্লেখ্য, রবিবার বছরের শেষ ‘মন কি বাত’-এ শিখদের শেষ ধর্মগুরু গুরু গোবিন্দ সিংয়ের স্তুতি শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। বলেন শিখ সম্প্রদায়ের আত্মত্যাগের কথাও। কিন্তু কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে রা কাড়েননি। কৃষকরা আগেই বলে রেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এর প্রতিবাদ করবেন তাঁরা। হয়েছেও তাই। অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময় হরিয়ানার উপকণ্ঠে বিক্ষোভরত কৃষকরা থালা-বাটি বাজিয়ে জোরালো প্রতিবাদ করেন। থালা বাজিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের এই রেশ সিংঘু সীমানা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের সব প্রান্তে।

শুধু তাই নয়, রবিবার আত্মঘাতী হয়েছেন আরও এক বিক্ষুব্ধ কৃষক ও আইনজীবী। পাঞ্জাবের জালালাবাদের বাসিন্দা অমরজিৎ সিং এদিন টিকরি সীমানার কাছে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। প্রধানমন্ত্রীকেই এই অচলাবস্থার জন্য দোষারোপ করে সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, ‘নতুন তিন কৃষি আইন করে কর্পোরেট পুঁজির হাত শক্ত করেছেন মোদী। সরকার সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের সঙ্গে তঞ্চকতা করেছে। কৃষকরা আরও বঞ্চিত হবেন, দুর্দশা আরও বাড়বে তাঁদের।’

সিংঘুতে গত এক মাস ধরে যে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা নয়া কৃষি আইন নিয়ে প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের বড় অংশই শিখ ধর্মাবলম্বী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ, প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন, লম্বা সময় ধরে আন্দোলন চলার ফলে শিখদের সমর্থন তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই শিখ মনন ও আবেগকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছেন মোদী। যেমন, গত সপ্তাহে তিনি হঠাৎই চলে গিয়েছিলেন রাকাব গঞ্জ সাহিবের গুরুদ্বারে। আর এদিন তিনি বললেন, ‘গুরু গোবিন্দ সিংয়ের পরিবারের আত্মত্যাগ মানব সভ্যতার কাছে একটি দৃষ্টান্ত। আমাদের সভ্যতাকে রক্ষা করার কাজ করেছে এই পরিবার।’ কিন্তু গুরু গোবিন্দ সিংয়ের যে অনুসরণকারীরা তাঁরই সরকারের প্রণয়ন করা আইনের প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের কথা একটিবারের জন্যও শোনা গেল না প্রধানমন্ত্রীর গলায়!

কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী পীযূস গয়াল এবং কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরও ওই অনুষ্ঠানে অংশ দেন। তবে কিসান রেলের অবগুণ্ঠনে আসলে ২০২১-এর বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাখির চোখ করতে চাইছে বলে অভিযোগ বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদের। ডেরেকের টুইট থেকে তারই ইঙ্গিত মেলে। যদিও তাঁর এই কটাক্ষ নিয়ে কেন্দ্র বা বিজেপি নেতৃত্বের তরফে সোমবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here