দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক টানা বৃষ্টিতে নাজেহাল কলকাতা সহ উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, বনগাঁ, মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রবিবার রাত থেকেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে বৃষ্টি আরও বেড়েছে। এর জেরে জল জমতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাস্তায়। সপ্তাহের শুরুর দিনেই কাজে যেতে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জলমগ্ন শহর কলকাতার একাধিক এলাকা। গত তিন’দিনে সারা দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টি পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপর রাজ্য সরকার।

রবিবার থেকে টানা বৃষ্টির জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় জমেছে জল। উপকূল এলাকার পাশাপাশি জেলার শহরতলির বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থার জেরে ডায়মন্ড হারবার, সোনারপুর, বারুইপুর, মহেশতলার বিভিন্ন এলাকা এখনও জলবন্দি। এই বৃষ্টির জেরে সুন্দরবন এবং সংলগ্ন গ্রামগুলিতে চাষের জমিও জলমগ্ন হয়েছে। সুন্দরবনের সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ এবং বিভিন্ন দ্বীপে জল জমে থাকলেও বাঁধ ভাঙার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে বারুইপুর পুরসভার পঞ্চাননতলা থেকে অক্ষয় সংঘ পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং মাস্টারপাড়া, মাটারাট-বাদামতলা মোড়ও জলে ডুবে। রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বৈকুন্ঠপুর, নরেন্দ্রপুর, সুভাষগ্রাম স্টেশন, সুভাষ পার্ক, নন্দন কলোনি, মিশনপল্লী এলাকাতেও হাঁটু সমান জল। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে জল জমে থাকায় ভোগান্তির মুখে পড়েছেন রোগী এবং রোগীদের আত্মীয়রা।

আমপানের সময় নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। ইয়াসের সময়েও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ফের সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। রবিবার রাত থেকে বিরামহীন বৃষ্টির জেরে ভাসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকা। সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় যান মিমি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের হাতে তুলে দেন খাবার।

নবান্নের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে দুর্যোগের বলি হয়েছেন মোট ১৪ জন। এঁদের মধ্যে কেউ জলে ডুবে, কেউ দেওয়াল চাপা পড়ে, কেউ আবার তড়িদাহত হয়ে মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ৭ জনই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। একজন মারা গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরে অরবিন্দ জানা নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজ্যে এই মুহূর্তে ৫৭৭টি ত্রাণ শিবির চলছে। ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ সেখানে রয়েছেন। মোট ১ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। বিলি করা হয়েছে ৬০ হাজার ত্রিপল। নবান্নের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে প্রত্যেক জেলাশাসককে আপাতত আপৎকালীন ফান্ড দেওয়া হয়েছে। নবান্নে চলছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম, যার টোল ফ্রি নম্বর হল ১০৭০২২১৪৩৫২৬।

সূত্রের খবর, এখনও রাজ্যের ৪৭টি ব্লগ এবং আটটি পুরসভা জলমগ্ন রয়েছে। জলবন্দি রয়েছেন মোট ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৩২৮ জন মানুষ। এছাড়া গত কয়েকদিনের দুর্যোগে প্রায় ১ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর।

হাওয়া অফিস বলছে দুর্যোগ  এখনই কমছে না। বরং বুধবার পর্যন্ত রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টি হবে। 

সোমবার সারা দিন দফায় দফায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে গোটা দক্ষিণবঙ্গে।  তবে কলকাতায় মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। 

গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপরে অবস্থান করছে ঘূর্ণাবর্ত । এছাড়াও মৌসুমী অক্ষরেখা  গিয়েছে কলকাতার ওপর দিয়ে। যেই কারণে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এখনও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি রেখেছে আবহাওয়া দফতর ।
 

হাওয়া অফিস বলছে,  এই মুহূর্তে একটি ঘূর্ণাবর্ত  গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের  উপর অবস্থান করছে। এই ঘূর্ণাবর্ত স্থলভাগ থেকে উপরে ৫.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া মৌসুমী অক্ষরেখা গয়া থেকে কলকাতার উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।  এই দুয়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতে ২১ তারিখ অর্থাৎ আজ মঙ্গলবারও  হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আজ  ঘূর্ণাবর্ত সরছে পশ্চিম দিকে। ফলে  কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনায় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আজ থেকে পশ্চিমের জেলাগুলিতে বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ।
 

সেইসঙ্গে বজ্রপাত নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করছে আবহাওয়া দফতর।  বজ্রপাতের সময় মানুষজনকে পাকা বাড়ির নীচে থাকবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতার ভারী বৃষ্টির কারণে বিপজ্জনক বাড়িগুলোতে মানুষজনকে না থাকার কথা বলা হয়েছে।
 

 বৃষ্টির ফলে নদীতে জল স্তর বৃদ্ধি পেতে পারে।  । পুরসভাগুলির নীচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। মাঠে থাকা সবজির ক্ষতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৎস্যজীবীদের সাগরে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। 
 

আজ মঙ্গলবার  উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং নদিয়া জেলার কোনও কোনও জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা।
 

বুধবার  বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ায়। বাকি জেলাগুলিতে বর্ষার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। 
 

এদিনও কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই  আকাশ মেঘলা থাকবে।
 

 আজ কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা  ২৪.৪  ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ২ ডিগ্রি কম। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬.২  ডিগ্রি  ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ৭ ডিগ্রি কম। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ  ৯৮   শতাংশ। সর্বনিম্ন  ৯৬   শতাংশ। 

দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চললেও  বুধবার সকালের মধ্যে উত্তরবঙ্গের কোনও জেলাতেই ভারী বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস নেই। তবে সবকটি জেলারই কোথাও না কোথাও বর্ষার বৃষ্টি হিসেবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। 

এদিকে পূর্ব মধ্য এবং সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ২৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি সম্ভাবনা। যা পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিমে ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা। এর জেরে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ওড়িশা ও সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here