আশঙ্কা ছিলই। আর সেটাই সত্যি হলো রবিবার। বাংলাদেশের একাদশ সাধারণ নির্বাচনে দিনভর চলল সংঘর্ষ। রবিবার সন্ধে পর্যন্ত খবর, সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৪ জনের।
সংঘর্ষ এবং রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হল বাংলাদেশের ভোট। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটে পর্যন্ত হয় ভোটদান। সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামি লিগ এবং বিএনপি–র মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে মৃত্যু হল মোট ১২ জনের। জখম ৬৪ জন। তার মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিসের গুলিতে। বাকিরা মারা গিয়েছেন সংঘর্ষে। পুলিসের তরফে একথা জানানো হয়েছে। কুমিল্লায় দুজন, চট্টগ্রাম, রাজশাহি, দিনাজপুর, রাঙামাটি, কক্স বাজার এবং বগুরায় একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এক পুলিসকর্মীর উপর আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠি নিয়ে বিএনপি সমর্থকরা চড়াও হলে মৃত্যু হয় তাঁর। কুমিল্লার চাঁদিনার একটি বুথে বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালালে বাধা দিতে গেলে তাদের উপরই চড়াও হয় হামলাকারীরা। পুলিসের দাবি, আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালালে মারা যান জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সমর্থক মুজিব। কুমিল্লারই মুরগাঁওয়ে ভোটবুথে শাসক–বিরোধী সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে বিএনপি–র বাচ্চু মিঞার।
রাঙামাটির কাউখালি উপজেলায় আওয়ামি লিগ–বিএনপি সংঘর্ষে যুব লিগের গাগরা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ বশিরুদ্দিনকে মাথায় লাঠির বাড়ি মারলে মৃত্যু হয় তাঁর। জখম হয়েছেন আরও ১০ জন। দিনাজপুর এবং চট্টগ্রামের পশ্চিম মালিয়াপাড়াতে দুই দলের সমর্থকদের গন্ডগোলের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয় দুই সাধারণ নাগরিক ৬৩ বছরের কিনা মহম্মদ এবং যুবক আবু সাদেকের। রাজশাহির মোহনপুরে আওয়ামি লিগের মেরাজুদ্দিনকে খুনের অভিযোগ বিএনপি–র বিরুদ্ধে। কক্স বাজার–১–এর রাজাখালি মাতব্বরপাড়ার ভোট কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলিগের নেতা, ২৩ বছরের মহম্মদ আবদুল্লা মারা যান বিএনপি–র সঙ্গে সংঘর্ষে। নোয়াখালিতে একটি প্রাথমিক স্কুলের ভোট বুথে জামাত এবং শিবির দলের গন্ডগোল থামাতে গিয়ে মৃত্যু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আনসার বাহিনীর সদস্য নুরুনবির।
এদিন সকাল আটটায় ভোটদান শুরু হতেই ঢাকা সিটি সেন্টার ভোটবুথের প্রথম ভোটার হিসেবে ভোট দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই কেন্দ্রে আওয়ামি লিগের প্রার্থী হাসিনার আইনজীবী ও আত্মীয় ফজলে নুর তাপস।
সকাল সকাল মেয়ে পুতুল ও বোন রেহানার সঙ্গে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার সিটি কলেজ কেন্দ্রে তিনি ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়ে বেরানোর সময় সংবাদ মাধ্যমে তিনি বিজয় চিহ্ন দেখিয়েছেন। সেইসঙ্গে এও বলেছেন, জনগনের রায় মাথা পেতে নেবেন। আওয়ামী লিগ সুপ্রিমো শেখ হাসিনা লড়াই করছেন গোপালগঞ্জ থেকে।এ দিকে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের পোলিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। ফলে সব পোলিং স্টেশনে প্রার্থী দিতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন বিরোধীরা। ১৩ অক্টোবর বিএনপি ও আরও কয়েকটি বিরোধী দল মিলে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে। তার নেতা কামাল হোসেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁকে সবাই ধর্মনিরপেক্ষ, উদার মানসিকতার মানুষ বলেই জানে। দেশের সংবিধান রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি বিরোধী জোটের নেতা হলেও ভোটে লড়ছেন না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও জেলে। তাঁর ছেলে তারিক রহমানের নামেও গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তিনি এখন লন্ডনে থাকেন। দেশে ফিরলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।
এই নির্বাচনের আরেকটি দিক দিয়ে গুরুত্ব রয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। তাই যে দল এই নির্বাচনে জিতবে, তারাই ৫০ বছরের উদযাপন করবে। নিজের ক্ষমতা ধরে ব্যাপারে আশাবাদী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছেন, জনগন ভোট দিতে পারলে তাঁরাই জিতবেন। এখন দেখার ওপার বাংলার মানুষ কার দিকে বিধান দেন।