ভরা বর্ষার দিনে দুপুর হোক বা রাত্রি খিচুড়ি পছন্দ করে না এমন বাঙালি নেই বললেই চলে।আর সঙ্গে যদি থাকে ইলিশমাছ ভাজা তাহলে তো কোথায় নেই৷ তবে শুধু বাঙালি নয় খিচুড়ি আমাদের দেশের একটি অতি জনপ্রিয় উপাদেয় এবং সহজলভ্য খাবার যা বানানোও সহজ। অতি প্রাচীনকাল থেকেই খিচুড়ি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের সঙ্গে পরিচিত । অনেক ঐতিহাসিক ও মুঘল আমলের অনেক লেখায় এই চাল ও ডাল মিশ্রিত একপ্রকার খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়৷
সাধারণত আমরা বাঙালিরা গোবিন্দ ভোগ চাল আর মুগ ডাল অথবা সিদ্ধ চাল দিয়ে মুসুর ডালের খিচুড়িই খেয়ে থাকি; তবে সংস্কৃতিক বৈচিত্রের কারণে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রদেশে খিচুড়ির নামও যেমন ভিন্ন আবার রাঁধার পদ্ধতিও ভিন্ন। অনেকে আবার পুজো অথবা কোনো উপবাসের দিনে চালের বদলে ডালিয়া, সাবুদানার খিচুড়িও খেয়ে থাকেন।
এবারের বর্ষা স্পেশাল দেশের রান্নাঘরে রইলো বিভিন্ন ধরণের কয়েকটি খিচুড়ির রেসিপি।
হায়দ্রাবাদি খিচুড়ি :
উপকরণ: ২ কাপ বাসমতি চাল, ১ কাপ মুসুর ডাল, ৪ বড় চামচ তেল, গোটা গরম মশলা, ২ টো তেজপাতা, ২টো মাঝারি মাপের পিয়াঁজ, ২ বড় চামচ আদারসুন বাটা, ১ চা চামচ গোটা জিরে, ১ চা চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, ২ চা চামচ হলুদগুঁড়ো, ২ চামচ ঘি, ২ চামচ নুন, দই দেড় কাপ, জল ৬ কাপ৷
প্রণালী: চাল ও ডাল একসাথে মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে ২-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে ৷হাঁড়ি অথবা তৎসম বড় কোনো পাত্রে তেল গরম করে গোটা গরম মশলা ও তেজ পাতা ও জিরে ফোড়ন দিতে হবে৷ পিয়াজ মিহি করে কুচিয়ে ভেজে নিতে হবে, পিঁয়াজে সোনালী রং ধরলে এরমধ্যে আদা রসুন বাটা, দই, নুন, হলুদ ও লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে ভালো করে কষতে হবে৷ তেল বের হলে ভেজানো চাল ডাল জল ঝরিয়ে কষা মশলার মধ্যে দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে৷ এরপর জল দিয়ে চাপা দিতে হবে৷ জল শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে এলে ঘি ছড়িয়ে কিছুক্ষন চাপা দিয়ে রেখে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে৷
শাহাজানী খিচুড়ি :
উপকরণ: সাড়ে ৩ কাপ বাসমতি চাল, সাড়ে তিন কাপ গোটা মুগকরাই, দেড় বড় চামচ ঘি, ১ বড় চামচ জিরে, ৩ কোয়া রসুন, ১টা লম্বা দারচিনির কাঠি, ৩টি ছোট এলাচ, হাফ চা চামচ গোটা গোলমরিচ, ৪-৫ টা কারিপাতা, ১ মাঝারি মাপের পিয়াঁজ মিহি করে কুচানো, ৪-৫ টা কাজু বাদাম কুচানো, ১ বড় চামচ কাঁচালঙ্কা বাটা, ১ বড় চামচ নারকেল কোৱা, ২ বড় চামচ নুন, ৪ কাপ জল৷
প্রণালী: চাল ও গোটা মুগের ডাল ভালো করে ধুয়ে ২-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে৷ প্রেসারকুকারে ঘি গরম করে জিরে ফোড়ন দিয়ে গন্ধ বেরোলে, দারচিনি, এলাচ, গোটা গোলমরিচ, কারিপাতা, কাজুবাদামের কুচো দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে৷ এরপর পিয়াঁজ হালকা ভেজে নিতে হবে ৷এরমধ্যে জল ঝরানো চাল ও ডাল, কাঁচালঙ্কা বাটা, নুন, নারকেল কোৱা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে গরম জল ঢেলে প্রেসারকুকার চাপা দিতে হবে৷ তিনটে সিটি হলে নামাতে হবে৷ টক দই ও সেঁকা পাঁপরের সাথে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে৷
গুজরাটি খিচুড়ি:
উপকরণ: ১ কাপ চাল, ১ কাপ অহর ডাল, ১ কাপ গোটা মুগডাল, ১ টা আলু, ১ টা গাজর, ১ টা টমেটো, ৬-৭ টা ফ্রেঞ্চ বিনস, ১ কাপ কড়াইশুঁটি, আধখানা ফুলকপি, ২ টো পিয়াঁজ, ১ বড় চামচ হলুদ, ১ বড় চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, ২ বড় চামচ নুন, ১ টা দারচিনি, ২-৩টে ছোট এলাচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, ২ বড় চামচ তেল, জল ৪ কাপ, গোটা জিরে হাফ চা চামচ, গরমমশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, ৪-৫ টা কাজুবাদাম কুচানো, ৪-৫ টা কিসমিস
প্রণালী: চাল ও দুইরকম ডাল একসাথে মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে৷ আলু, গাজর, ফুলকপি, বিনস, টমেটো ধুয়ে মো করে কেটে নিতে হবে৷ পিয়াঁজ মিহি করে কুচিয়ে নিতে হবে। প্রেসার কুকারে তেল গরম করে গোটা জিরে, এলাচ, দারচিনি ফোড়ন দিতে হবে৷ এরপর পিয়াঁজ দিয়ে সোনালী করে ভেজে নিতে হবে৷ পিয়াঁজ ভাজা হয়ে গেলে আদাবাটা, নুন, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো ও টমেটো দিয়ে কষতে হবে। তেল ছাড়তে শুরু করলে সব রকম সবজি দিয়ে কষে, ভেজানো চাল ডাল জল ঝরিয়ে নিয়ে দিতে হবে। সবকিছু ভালো করে মশলার সাথে মিশিয়ে ৪ কাপ গরম জল দিয়ে প্রেসার কুকার বন্ধ করতে হবে। ২-৩ টি সিটি দিয়ে নামাতে হবে৷ প্রেসারকুকারের ঢাকনা খুলে ওপর থেকে কাজু কিশমিশ ছড়িয়ে মিশিয়ে দিতে হবে ৷গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।