দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অরিন্দম ভট্টাচার্য যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন যুব কংগ্রেসের নির্বাচনের সময় সে কি ধুন্ধুমার। সেই বিতর্কের এপিসেন্টারে ছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন অরিন্দম।
তার পর ষোলো সালের ভোটে তাঁর ইচ্ছা ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনায় প্রার্থী হওয়ার। দল তাঁকে টিকিট দেয় শান্তিপুরে। তা নিয়েও অভিমান। অথচ সেই শান্তিপুরে নদিয়া কংগ্রেসের কিংবদন্তী নেতা শঙ্কর সিংয়ের আশীর্ব্বাদ নিয়ে আর বামেদের বিপুল সমর্থনে জিতে যান।
কিন্তু কিছুদিন যেতেই অরিন্দম অনুপ্রাণিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে। একা নয়, তিনি শঙ্কর সিংকে সঙ্গে নিয়েই যান তৃণমূলে।
অরিন্দমের দেবদ্বিজে ভক্তি বরাবরই। এ বার একুশের ভোটের আগে অরিন্দমকে গঙ্গাসাগরে ডুব লাগাতে দেখেই অনেকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ অনুমান করছিলেন, অরিন্দম বিজেপিতে যাচ্ছেনই।
যাঁরা অনুমান করছিলেন তাঁদের একশোয় একশো পাওয়া হয়তো নিশ্চিত। কারণ-
একুশের ভোটের দিন যত এগোচ্ছে, দলবদল ঘিরে ততই সরগরম হয়ে উঠছে বঙ্গ রাজনীতি। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারও তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন। বিজেপি-তে যোগ দিলেন শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। দিল্লি গিয়ে বাংলায় বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেন শান্তিপুরের বিধায়ক।
বিজেপি-তে যোগদানের পর অরিন্দম ভট্টাচার্যবলেন, ‘আমাদের মতো শিক্ষিতরা যখন রাজনীতিতে পা রাখেন, তাঁদের তখন অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়। মানুষ ভুগবে এটা কখনও চাই না। মানুষের স্বার্থে কাজ করতে পারিনি তৃণমূল কংগ্রেসে। অনেক আশা নিয়ে বাংলায় পরিবর্তনের সরকার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, এখন শুধু দুর্নীতি জুড়ে গিয়েছে এই সরকারে। আজ বাংলার যুবকদের জন্য কাজ নেই। বাংলায় শুধু ব্যক্তি আক্রমণের রাজনীতি চলছে। মোদীর নেতৃত্বে আত্মনির্ভর বাংলা তৈরি হবে’।
জানা যাচ্ছে, শান্তিপুরে দীর্ঘদিন ধরে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চলছিল। একদিকে, অরিন্দম ভট্টাচার্যের গোষ্ঠী, অন্যদিকে, শান্তিপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অজয় দে’র গোষ্ঠী। যদিও সম্প্রতি ব্লক কমিটি গঠনের পর অরিন্দম গোষ্ঠীর পাল্লা কিছুটা ভারী হয়। এদিকে, একাধিক দলীয় বৈঠক বয়কট করতে থাকেন অজয় দে। এরই মধ্যে অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিজেপি-তে যোগদানে সরগরম শান্তিপুর ব্লক। শাসকদলের একাংশের মতে, অরিন্দম বিজেপি-তে গেলে তৃণমূলেরই সুবিধা হবে। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে যে ভোট কাটাকুটির সম্ভাবনা ছিল তা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে অজয় দে’ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
Arindam Bhattacharya, who was elected MLA on Congress ticket & later joined TMC, joins BJP in presence of party leader Kailash Vijayvargiya in New Delhi.
— ANI (@ANI) January 20, 2021
"I was elected on Congress symbol but extended support to TMC so that development happens but it didn't," he says. https://t.co/RcFHyZIBKK pic.twitter.com/gNEZ3hlwEY
এদিন, BJP-তে যোগ দিয়েছেন CPM-এর রবি বাণিক, শ্রীমন্ত হাতি ও তৃণমূল কংগ্রেসের কল্পনা বিশ্বাস। এছাড়াও BJP-তে যোগ দিয়েছেন আদিত্য বিড়লা গ্রুপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ইন্টারনাল মেডিসিনের এমডি ডা. দেবাশিস মোদক।
West Bengal: Ranjan Banerjee, senior Vice-President of Aditya Birla Group, joins BJP in Kolkata.
— ANI (@ANI) January 20, 2021
"I thank BJP for giving me this opportunity to serve the people of the state. We need to bring industries here so that people can get employment," he says. pic.twitter.com/ZCulTuLrse
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ লগ্নে টিএমসি ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর দলবদল ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। শুভেন্দুর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল। অন্যদিকে, এই দলবদলের পাশাপাশি শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে ‘বেসুরো’ হতে দেখা গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে অন্যতম বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ারা৷
দলত্যাগীদের নিশানা করে মমতা পুরুলিয়ার সভায় বলেছেন, ‘যাঁরা চলে যাচ্ছেন, বুঝবেন আপদ বিদেয় হয়েছে। তিন ধরনের লোক রয়েছে রাজনীতিতে। লোভী, ভোগী, ত্যাগী’। উল্লেখ্য, সোমবার নন্দীগ্রামের সভাতেও তৃণমূলনেত্রীর গলায় এই মন্তব্য শোনা গিয়েছে। এবার, শুভেন্দু অধিকারীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নন্দীগ্রামে ভোটে লড়ার কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। যা ভোটের বাংলায় নয়া মাত্রা যোগ করেছে।
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একের পর এক নেতারা যেভাবে BJP-তে যোগ দিচ্ছেন, তাতে এবারের ভোটযুদ্ধ শাসকদলের কাছে নয়া চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
অন্যদিকে, এদিন সকালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন সিএবি-র প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে। ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পিরিট দেখেই যোগ দিলাম’, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া বিশ্বরূপ দে’র। তাঁর সঙ্গে আরও ১২৫ জন সাধারণ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিলেন বলে জানান সিএবি-র প্রাক্তন সচিব।