দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ কোভিড বিধি মেনে এ বছরের ৭২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হল দিল্লির রাজপথে। যদিও এবছর ভাইরাস সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনেক অনুষ্ঠানই কাটছাঁট করা হয়েছে। কুচকাওয়াজের পথও সংক্ষীপ্ত। মাস্ক পরেই প্যারেড করেছেন সেনা জওয়ানরা। তবে এ বছরের কুচকাওয়াজে নতুন কিছু সংযোজন হয়েছে, যেমন নজর কেড়েছে লাদাখ ট্যাবলো। আরও এক আকর্ষণ হল কুচকাওয়াজে পা মিলিয়েছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী।

কলকাতায় রেড রোডে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়-সহ হাতে গোনা কিছু অতিথি।

নেতাজির জন্মদিনকে দেশনায়ক দিবস হিসেবে পালন করার কথা আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানও নেতাজিকেই উৎসর্গ করা হচ্ছে বলে সকালেই টুইট করেন তিনি। তাতে লেখেন, ‘ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্ব’, সংবিধানের এই আদর্শকে রক্ষা করতে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের। প্রজাতন্ত্র দিবসে সকল ভারতীয়কে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। আজকের কলকাতার কুচকাওয়াজ দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করা হয়েছে’।


ফ্রান্স থেকে ভারতে আসার পরে এই প্রথমবার প্রজাতন্ত্র দিবসে অংশ নিল রাফাল ফাইটার জেট। ফ্রান্সের সঙ্গে ৩৬টি রাফালের জন্য চুক্তি হয়েছে ভারতের। এখনও অবধি ১১টি বায়ুসেনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আরও ১৫টি এয়ারক্রাফ্ট অংশ নিয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে। যার মধ্যে ৫টি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট, ২১টি হেলিকপ্টার ও ভিনটেজ ডাকোটা বিমান। ১৯৭১-এর যুদ্ধে এই বিমানটি ব্যবহার করা হয়েছিল। বায়ুসেনা জানিয়েছে, ফ্লাইপ্লাস্ট চলার সময় বিভিন্ন ফর্মেশন গড়ে উড়বে এয়ারক্রাফ্টগুলি। ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যে ৩ জন মহিলা চালকের স্থান হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ভাবনা কান্থ প্রথম মহিলা ফাইটার জেট চালক হিসাবে এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন।

এদিনের সেরা আকর্ষণ বায়ুসেনার লাইট কমব্যাট তেজস এয়ারক্রাফ্ট (এলসিএ), লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার (এলসিএইচ), সুখোই-৩০ এমকেআই ফাইটার জেট। আকাশ সুরক্ষায় বায়ুসেনার বড় হাতিয়ার এলসিএ তেজস। হ্যালের থেকে ৮৩টি এলসিএ তেজস কেনার চুক্তি করেছে বায়ুসেনা। ডবল ইঞ্জিন, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো দ্বিতীয় যুদ্ধবিমান। লাদাখ সীমান্তে এই মুহূর্তে পাহারায় রয়েছে হ্যালের তৈরি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার। আমেরিকার অ্যাটাক কপ্টারের চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক এই এলসিএইচ কপ্টার। প্রজাতন্ত্র দিবসের লাদাখ ট্যাবলোয় এই কপ্টারও আজকের অন্যতম আকর্ষণ। মোট ৩৮টি বায়ুসেনার বিমান এদিন অংশ নিয়েছে ফ্লাইপাস্টে।

লাদাখ ট্যাবলোর আরও একটা সেরা আকর্ষণ হল টি-৯০ ভীষ্ম যুদ্ধট্যাঙ্ক, ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল বিএমপি-২ সরথ, মোবাইল লঞ্চার, ব্রাহ্মস মিসাইল সিস্টেম, মাল্টি-লঞ্চার রকেট সিস্টেম পিনাকা ইত্যাদি। লাদাখের চুমার ও ডেমচকে এখন সীমান্ত পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। রাশিয়ার থেকে কেনা ট্যাঙ্ক এখন আরও বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। ভারতে এই টি-৯০ ট্যাঙ্কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভীষ্ম’ । বিএমপি-২ ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল জলে ও স্থলে দু’জায়গাতেই চলতে পারে। এই আর্মড ভেহিকল থেকে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তিও আছে।

এই প্রথমবার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। ১২২ জন সেনা পা মিলিয়েছেন প্যারেডে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথম ফ্রান্স ও আরব আমিরশাহির সেনারা কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here