দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ পে কমিশনের সুপারিশ তিনি যতটা মনে করবেন, ততটাই করবেন। এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই কার্যত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মমতা।
আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে পাঁচবার সময়সীমা বৃদ্ধি পাওয়া ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ। এর আগে মমতা জানিয়েছিলেন, পে কমিশন সময় বাড়াতে বলায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। সেই অভিযোগ অবশ্য বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার অস্বীকার করেছিলেন। এর পরে সরকারি কর্মীদের মনে আশা তৈরি হয় যে, ডিসেম্বরের আগেই জমা পড়বে রিপোর্ট। আর সুপারিশ মেনে আগামী ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে ষষ্ঠ বেতন কমিশন এবং বেতনবৃদ্ধি আশানুরূপ ববে। কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে বললেন তাতে একাংশের মধ্যে কতটা কী বেতন বাড়বে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এমনটা যে তিনি এই প্রথমবার বললেন তা অবশ্য নয়। এর আগেও তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর আগে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টত বলেন, “যারা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে চান, তারা কেন্দ্রে চলে যান। কেন্দ্রে চাকরি করলে কেন্দ্রের মতো (বেতন) পাবেন, রাজ্যে করলে রাজ্যের মতো।”
তিনি যে সামর্থ্য মতো বেতন বাড়াতে চান সেই ইঙ্গিত দিয়ে গত জুন মাসে বলেন, “কমিশন রিপোর্ট সাবমিট করলে যতটা সামর্থ আছে ততটা করব। বেশি করতে পারব না। খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী বন্ধ করতে পারব না। সেটা বজায় রেখে যতটা পারি করব।”
পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
পার্শ্ব শিক্ষকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা নিয়ে যে তিনি রুষ্ট, ওঁদের দাবিকে তিনি যে অযৌক্তিক মনে করেন, কোনও রাখঢাক না করে তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা টিচার যদি বলে স্ট্রাইক করব, কালো ব্যাজ পরব, তাহলে বাচ্চারা কী শিখবে? শিক্ষকদের সম্মান করি। কিন্তু ওরা কী ভাবে? লাফিয়ে লাফিয়ে মাইনে বাড়বে?”
সমকাজে সমবেতন দেওয়ার দাবি-সহ একাধিক দাবি নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আন্দোলনের রাস্তায় নেমেছেন রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার পার্শ্ব শিক্ষক। শনিবার রাতে কল্যাণী সেন্ট্রাল বাস টার্মিনালে পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলে দেন, অনেক মাইনে বাড়ানো হয়েছে। এক্ষুণি আর সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “গত বছরই পার্শ্ব শিক্ষকদের মাইনে ৪ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি করা হয়েছে।”
পার্শ্ব শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টাকাটা দেব কোথা থেকে? এই তো ক’দিন আগে এসএসকে-এমএসকে শিক্ষকদেরটা করে দিলাম। আজ এ, কাল সে, রাস্তায় বসে পড়ছে। সব টাকা রাজ্য থেকে কেন্দ্র তুলে নিয়ে যায়। সেস তুলে নিয়ে যায়। ইনকাম ট্যাক্স তুলে নিয়ে যায়। আমি দেবটা কোথা থেকে? রাজ্যে একটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক করে দিন। সব দিয়ে দেব।”
বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের আন্দোলনে গত কয়েক মাসে উত্তাল হয়েছে রাজ্য। কয়েকদিন আগেই বিকাশ ভবনে টানা অনশনের শেষে দাবি আদায় করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এ বার আন্দোলনে পার্শ্ব শিক্ষকরা। এত ধরনের শিক্ষক আন্দোলনে যে সরকারের নাজেহাল হওয়ার অবস্থা হয়েছে, তা-ও কার্যত স্বীকার করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “পার্থদার একটা এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট নিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রোজ রাস্তায় বসে পড়ছে।”
মমতার এই কথা শুনে আন্দোলনকারী পার্শ্ব শিক্ষকদের একজন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তিনি আমাদের যুক্তির দিকটা বুঝতে পারছেন না। বুঝলে আমাদের আন্দোলনকে এবং আমাদের আবেগকে এ ভাবে অবজ্ঞা করতেন না।”