দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা পুরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষিত আসনের তালিকা শুক্রবার প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। তার পর নবান্ন শীর্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ পর্যন্ত কোনও অঘটন না ঘটলে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভোট গ্রহণ হতে পারে কলকাতা পুরসভায়। সেজন্য ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বা মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
নবান্ন সূত্রে এও খবর, সম্ভবত কলকাতা পুরসভায় ভোট গ্রহণ হবে ৫ এপ্রিল। কারণ, ওই দিন রবিবার। ছুটির দিন। তার পরের দিন মহাবীর জয়ন্তী। সেদিনও ছুটি। ফলে কোথাও পুনর্নিবাচন করতে গেলে সময় পাওয়া যাবে। ভোটের ফল ঘোষণা হতে পারে ১০ এপ্রিল। ওই দিন শুক্রবার, গুড ফ্রাই ডে। অর্থাৎ ছুটির দিন।
তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মধ্যে কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে প্রথম সম্ভাবনাই বেশি। তা হল, প্রথমে কলকাতা পুরসভায় এপ্রিলে ভোট হবে। তার পর সেখানে জয় নিশ্চিত করে সেই আবহে দক্ষিণবঙ্গের আরও কিছু পুরসভায় ভোট হোক তার মাস খানেকের মধ্যে। সেগুলির ফলাফল দেখে তার পর উত্তরবঙ্গের পুরসভাগুলিতে সব শেষে ভোট হবে।
কলকাতায় আগে পুরভোট করানোর নেপথ্যেও যুক্তি রয়েছে। কারণ, লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছে গোটা রাজ্যে বারো আনা পুরসভাতেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। তবে কলকাতায় বিজেপির তুলনায় এগিয়ে ছিল তারা। তা ছাড়া একে তো অন্তত চল্লিশটি ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোট নির্ণায়ক। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের কাউন্সিলরদের অনেকেই স্থানীয় ভাবে জনপ্রিয় বা তাঁদের কাছ থেকে এলাকার বহু মানুষ নানা ভাবে সুবিধা পেয়েছেন৷
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে পুর এলাকায় তৃণমূলের বিপর্যয়ের ছবিটা ছিল ভয়াবহ! গোটা রাজ্যের মোট ১২৭ টি পুরসভা ও পুর নিগমের মধ্যে ১০১ টি-তেই পিছিয়ে পড়েছিল শাসক দল। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কেন্দ্র ডায়মন্ডবারবার পুরসভাও ব্যতিক্রম নয়।
আরও স্পষ্ট করে বললে, ১২৭টি পুরসভার মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে মাত্র ২৬টিতে জিতেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস জিতেছিল বহরমপুর, মালদহ-র মতো দু-চারটে পুরসভায়। বাকি সবই চলে গিয়েছিল বিজেপি-র দিকে। অথচ মজার কথা হল, বাংলায় ৯৯ শতাংশ পুরসভায় কিন্তু নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল।
পরাজয়ের এই ভয়াবহতা উত্তরবঙ্গে অনেক বেশি। হিসাব মতো ১২৭ টি পুরসভার মধ্যে প্রায় ৫০ টি পুরসভায় লোকসভা ভোটে একটি ওয়ার্ডেও লিড পায়নি তৃণমূল। এর মধ্যে সিংহভাগই উত্তরবঙ্গের পুরসভা। যেমন, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, মালদহ ইত্যাদি। পশ্চিমাঞ্চল তথা দক্ষিণবঙ্গেও এমন কিছু পুরসভা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে এমন সব পুরসভায় হেরেছে তৃণমূল, যা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি শাসক দল। হুগলি জেলার তারকেশ্বর, শ্রীরামপুর, রিষড়া, আরামবাগের মতো পুরসভায় ডাহা হেরেছে তৃণমূল। উত্তর চব্বিশ পরগনায় তো কথাই নেই।
যদিও তৃণমূলের মধ্যে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন যে, কলকাতা পুরসভাতেই যদি ফল আশানুরূপ না হয় তখন কী হবে? তবে এই মত তৃণমূলের উপর মহলে সংখ্যালঘু। কারণ, দলের অধিকাংশ শীর্ষ সারির নেতাই মনে করেন যাই হোক না কেন কলকাতা পুরসভায় দল জিতবেই। এবং সেই জয়কে একুশে বিধানসভা ভোটের আগে সেমিফাইনালের ফল বলে তুলে ধরে একটা আবহ তৈরি করাও যেতে পারে।
বনগাঁ পুরসভার আসন পুনর্বিন্যাস:
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার জেলার বিভিন্ন পুরসভার আসন পুনর্বিন্যাসের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে এ বছরের পুর নির্বাচনে নিজের পুরনো ওয়ার্ড থেকে লড়াই করার সুযোগ পাচ্ছেন না বনগাঁ পুরসভার বর্তমান প্রধান শঙ্কর আঢ্য, উপ পুরপ্রধান কৃষ্ণা রায়, প্রাক্তন পুর প্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য।
২২ আসনবিশিষ্ট বনগাঁ পুরসভার ৯ টি আসন অপরিবর্তিত রয়েছে। পরিবর্তিত আসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১, ৯ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। ১ নম্বরের বর্তমান কাউন্সিলর শঙ্কর আঢ্য। তার আসনের পরিবর্তন হয় তিনি এবার ৩ নম্বরে, ১৭ নম্বরের জ্যোৎস্না আঢ্য ৪ এবং ৯ নম্বরের কৃষ্ণা রায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানা গেছে। অপরিবর্তিত আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩ নম্বরের দিপালী বিশ্বাস, ৫ নম্বরের মানবেন্দ্র কর্মকার, ৭ নম্বরের কার্তিক মণ্ডল, ১০ নম্বরের দিপ্তেন্দু বিকাশ বৈরাগী, ১২ নম্বরের টুম্পা রায়, ১৪ নম্বরের প্রশান্ত বালা, ১৬ নম্বরের অভিজিৎ কাপুড়িয়া, ২০ নম্বরের গীতা দাস এবং ২১ নম্বরের সাধন দাসের আসন।
উল্লেখ্য, মাস কয়েক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের ৭ জন কাউন্সিলর। এখন দেখার, পরিবর্তিত এবং অপরিবর্তিত আসনগুলিতে কাকে কাকে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ করে দেয় দলীয় নেতৃত্ব। এখন সেই দিকেই তাকিয়ে বনগাঁর সাধারণ মানুষ।