দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতার পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে ডবল ডেকার বাসের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর আগেই শহরে নতুন এই পরিষেবা চলে এল।

  • চালু করা হল কলকাতা কানেক্ট পর্যটন ২০২০।
  • লন্ডনের ধাঁচে হুডখোলা বাস চালু হল কলকাতায়। উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • বিশেষ জায়গার তালিকায় থাকবে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নও।

জানা গেছে, দিনে দুবার এই বাস চলবে শহরে, সকাল সাড়ে ১০টা এবং সকাল সাড়ে ১১টা। অনলাইনে টিকিট বুক করতে হবে, আপাতত সীমিত সংখ্যক যাত্রী চড়তে পারবেন। বাসের মধ্যে বিভিন্ন জেলার লোকশিল্পীরা থাকবেন যাত্রীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিতি ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। নবান্নের সামনেই উদ্বোধন করা হয় দোতলা বাসের।

সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, কলকাতার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী অচেনা স্থানগুলিকে জনমুখী করে তোলার উদ্দেশে ডাবল ডেকার বাস পরিষেবা শুরু হল। কলকাতা ভ্রমণসূচিতে থাকছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফোর্ট উইলিয়াম, সেন্ট জন্স চার্চ, জিপিও, ডালহৌসি, কার্জন পার্ক, টাউন হল, ইডেন গার্ডেন্স, লালদিঘি, প্রিন্সেপ ঘাট, বাবুঘাটের মতো জায়গাগুলি।

বাসের উদ্বোধনী মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কলকাতা থেকে লন্ডনে সরাসরি উড়ান-পরিষেবা চালু করার ব্যাপারেও তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিমান মন্ত্রককে অনুরোধ করা হবে বিমানের সংখ্যা বাড়াতে এবং তা সরাসরি করতে। এ বিষয়ে প্রাক্তন মুখ্যসচিব আগেই অ্যাভিয়েশনকে চিঠি লিখেছিলেন এ বিষয়ে।

পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, দুর্গাপুজোয় সর্বোচ্চ ২০০ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠান বা জমায়েত করা যাবে। তার বেশি অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে মণ্ডপ খোলামেলা থাকতে হবে, দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, মাস্কও পরতে হবে।

উল্লেখ্য,সরকারি ভাবে ২০০৫ সাল থেকে দোতলা বাস  তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আবার ফিরে এল আধুনিকতার পূর্ণ ছোঁয়ায় । চালু করা হল কলকাতা কানেক্ট পর্যটন ২০২০। লন্ডনের ধাঁচে হুডখোলা বাস চালু হল কলকাতায়। উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বিভিন্ন বিশিষ্ট জায়গায়, হেরিটেজ সাইটে এই বাস যাবে। বাসে থাকবেন রাজ্যের লোকশিল্পীরা। এমনকী বিশেষ জায়গার তালিকায় থাকবে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নও। প্রায় দেড় দশক বছর পরে ফের কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস দেখা যাবে এবার। তবে জনপরিবহণের জন্য নয়, দোতলা বাস ফিরছে পর্যটনের আকর্ষণ হিসেবে। এবং সম্পূর্ণ অন্য চেহারায়।

এদিন দোতলা বাসের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন দুটো করে বাস চলবে আপাতত। সকাল ১০.৩০ ও সকাল ১১.৩০টায় বাস ছাড়বে, শেষ হবে দুপুর আড়াইটের সময়।’ সেইসঙ্গেই তিনি জানান, ‘সম্পতি থেকেই এই বাসের জন্যে অনলাইনে বুকিং করা যাবে। এই বাসের মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকার কলকাতা-লন্ডন উড়ান আরও বাড়াক ও তা বজায় থাকুক। মুখ্যসচিব আবার এ বিষয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেবেন।’

২০০৫-এ পাকাপাকি ভাবে দোতলা বাস উঠে যাওয়ার ঢের আগে থেকেই অবশ্য শহরের রাস্তায় কমে আসছিল দোতলা বাস। যদিও কল্লোলিনী তিলোত্তমার সঙ্গে দোতলা বাসের প্রায় আট দশকের সম্পর্ক। তাই বন্ধ হয়ে গেলেও লাল দোতলা বাসের সঙ্গে নাড়ির টান ভুলতে পারেনি কলকাতা। সব মিলিয়ে বাসের উঁচু জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে শহর দেখার সেই সোনালি দিন আবার ফিরে আসছে শহরের বুকে। তবে বাস কোথা থেকে ছাড়বে, কোথায় যাবে- সে বিষয়ে এখনও সবিস্তারে কিছু জানানো হয়নি।

তবে নিশ্চিত ভাবেই পুজোর আগে দোতলা বাস ঘিরে নানা আবেগ উস্কে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে দু’টি বাসের যাত্রার সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই বাঘ-মুখ আঁকা লোগো আর লাল রং নয়, দোতলা বাস ফিরল একদম অন্য মোড়কে, নীল-সাদা রঙে। আর অতি অবশ্যই অত্যাধুনিক সাজে। কলকাতা লন্ডন না হলেও, লন্ডন সিটি ট্যুরের আদলে শহর ঘোরার জন্যই আনা হল এই হুড খোলা দোতলা বাস।

ওই বাসে থাকছে সিসিটিভি, প্যানিক বাটন, অটোম্যাটিক দরজা, ডেস্টিনেশন বোর্ড। পুরোনো দোতলা বাসে দু’টি দরজা থাকত- একটি নীচের আর একটি উপরে ওঠার। কিন্তু নতুন এই দোতলা বাসে একটিই দরজা থাকছে। বাসের ভিতরে থাকছে ছাদে ওঠার সিঁড়ি। বাসের মোট আসন ৫১টি, আর তার মধ্যে দোতলায় থাকছে ১৭টি আসন। ভারত স্টেজ ফোর গোত্রের এই নতুন বাস নির্মাণ করেছে জামশেদপুরের সংস্থা বেবকো।

বাসের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ রোড ট্রান্সপোর্ট। ৯০ লক্ষ টাকা দিয়ে দুটি বাস কিনেছে রাজ্য সরকার।

বাস দু’টি কিনেছিল পশ্চিবঙ্গ পরিবহণ নিগম। গত মার্চে কেন্দ্রের থেকে ছাড়পত্র এনে বাস দু’টি নিগমের হাতে তুলে দেয় বেবকো। তখন অবশ্য পরিকল্পনা ছিল অন্য। ভাবনা ছিল পর্যটকদের জন্যে নিউ টাউনে বাস দু’টি চালাবে পরিবহণ নিগমই। লকডাউনে নিগমের ডিপোয় বাসগুলি রাখাও হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, পরিবহণ নিগম নয়, পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন এই বাস চালাবে।

সেইমতো নিগমকে বলে দেওয়া হয় বাস পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিতে। অবশ্য ড্রাইভার ও কন্ডাক্টার দিচ্ছে নিগম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করবে পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনই। তাহলে আর কী, এবার আবার নস্টালজিয়ায় ভর করে পুজোর আগেই কলকাতা শহর ভ্রমণ শুরু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here