দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়ার তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে তৃণমূলে। এবার নতুন সংযোজন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল কুমার মণ্ডল।
তাঁর সাফ কথা, “প্রশান্ত কিশোর বাংলার রাজনীতির বোঝেটা কী! যে তাঁর কথায় রাজনীতি করতে হবে?” তিনি আরও বলেন, “ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে কখনও যুদ্ধ জয় করা যায় না। ওই স্তাবকেরা কথা বলবে, আদেশ দেবে সেটা মেনে নেব না। ওর থেকে আমাদের লেখাপড়া ও রাজনৈতিক শিক্ষা বেশি। এইভাবে দল চলতে পারে না।” এখানেই থামেননি সুনীলবাবু। দলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর।
সুনীলবাবু বলেন, “যারা তোলাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা দলে পদ পাচ্ছে। আর যাঁরা দীর্ঘদিনের সৈনিক তাঁরা ব্রাত্য।” আসানসোলের পুর প্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির সাম্প্রতিক ক্ষোভ নিয়েও সরব হয়েছেন সুনীলবাবু। তাঁর কথায়, “জিতেন দলের লড়াকু সৈনিক। কেন আজকে ও ক্ষোভের বোমা ফাটাচ্ছে। এটা তো দলের দেখা উচিত। তা না করে দলের নেতারা ওর বিরুদ্ধেই বিবৃতি দিচ্ছে।”
নিজের বাড়ির সামনেই শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁরপোস্টার, কীসের ইঙ্গিত?
সুনীল মণ্ডলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সহ পোস্টার পড়েছিল দুর্গাপুরে। তাতে লেখা ছিল, আপনাকে শুভেন্দুদার সঙ্গে দেখতে চাই। সেই ঘটনা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন সুনীল মণ্ডল। বলেছিলেন, মানুষ তাঁদের ইচ্ছে মতো পোস্টার লাগাচ্ছে। আমি কী করতে পারি।
এর মধ্যেই খবর, আজ বুধবার বিকেলে শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন সুনীল মণ্ডল। কয়েক দিন আগে সুনীলবাবুর মা প্রয়াত হন। সোমবার তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান ছিল। দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু না গেলেও দূত মারফত পুষ্পার্ঘ্য পাঠিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে বর্ধমান পূর্বের সাংসদকে নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে। যদিও দল ছাড়া বা অন্য কোনও দলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, লোকসভায় ধাক্কা খাওয়ার পর যে প্রশান্ত কিশোরকে ক্ষত মেরামত করার জন্য নিয়োগ করেছিল তৃণমূল একুশের আগে সেই তিনিই ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠছেন। এবং সেই সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে তৃণমূল সাংসদের বাড়ির সামনেই পড়ল শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার। আর সেই পোস্টারে শুভেন্দুর সঙ্গে রয়েছে সাংসদেরও ছবি। দুর্গাপুর সংলগ্ন পানাগড় এলাকায় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একই পোস্টারে ছবি দেখা গেল সাংসদ সুনীলকুমার মণ্ডলের ছবি। বুধবার সকালে এলাকায় দেখা যায় ওই পোস্টারগুলি। তাতে লেখা, ‘সুনীলদা, আমরা শুভেন্দুদার সাথে তোমাকেও চাই।’ ওই পোস্টার নজরে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকার রাজনৈতিক মহলে। শুরু হয় নয়া গুঞ্জন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন আগেও একই পোস্টারে শুভেন্দু ও সুনীলের ছবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় দুর্গাপুর শহরজুড়ে। তারপরেই সুনীলবাবুর মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারীর পক্ষ থেকে ফল মিষ্টি আসায় জল্পনা আরও উষ্কে যায়। আর এবার খোদ সাংসদের বাড়ির সামনেই পোস্টার। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে সরাসরি কিছু না বললেও এই ধরনের পোস্টার কে বা কারা লাগিয়েছেন তা তাঁর জানা নেই বলেই দাবি সাংসদের।
সূত্রের খবর, এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে তৃণমূলের অন্দরে। যদিও প্রকাশ্যে সেই কথা স্বীকার করতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে কাঁকসা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবদাস বক্সী জানান, “দল কোনও অস্বস্তিতে নেই, কারণ এই দলে একজনই নেত্রী, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের কর্মী ও সাধারণ মানুষ সেদিকেই থাকবেন। কে গেল কে এল তাতে দলের কিছু যায় আসে না।”
অন্যদিকে কাঁকসা ২ নম্বর মন্ডলের বিজেপি সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঢালি জানাচ্ছেন, “শুভেন্দুবাবু বিজেপিতে আসবেন কি না সেটা আমাদের কাছে খবর নেই। আর সুনীলবাবু আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় ওনাকে চিনি ও জানি। কারা পোস্টার দিয়েছে সে সম্মন্ধে আমরা কিছুই জানি না। উনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও আমার জানা নেই। উচ্চ নেতৃত্ব যদি ওনাকে গ্রহণ করেন আমরাও মেনে নেব। তবে বিজেপিতে থাকতে গেলে নীতি আদর্শ মেনে চলতে হবে।”