দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে যাদবপুরের বাঘাযতীন এলাকা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে এগোতে থাকা মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। বাঘাযতীন মোড়ে রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান শুরু করেন শিক্ষকরা।
এরপর শিক্ষামন্ত্রী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার কথা জানান। শিক্ষক প্রতিনিধিরা যান পার্থবাবুর বাড়ি। কিন্তু সেই বৈঠকেও মিটল না ক্ষোভ। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বললেন, “রাস্তায় বসে পড়াটা কোনও পথ হতে পারে না। যুক্তিযুক্ত দাবি হলে সরকার শুনবে। কিন্তু তা যথপোযুক্ত জায়গায় বলতে হবে।” পাল্টা শিক্ষক প্রতিনিধিরা বললেন, রাস্তাতেই থাকবেন তাঁরা।
পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সীমাবদ্ধ আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষকদের বিষয়টি দেখেছেন। দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল। নতুন করে আর দাবি মানা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “ঘোষণা সংক্রান্ত ব্যাপারে যদি ওঁদের কিছু বলার থাকে তাহলে তা নিশ্চয়ই বলতে পারেন। কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে। রাস্তায় বসে পড়লে হয় না। মানুষের অসুবিধে করে এই ধরনের আন্দোলন একেবারেই ঠিক হচ্ছে না।”
গত কয়েক মাসে একাধিক শিক্ষক বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে শহর কলকাতা। কখনও প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন তো কখনও পার্শ্বশিক্ষকদের আন্দোলন। বুধবার ফের প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে উত্তাল কলকাতা।
গত জুলাই মাসে দীর্ঘ অনশনের পর জয় পেয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। দাবি ছিল গ্রেড পে বাড়াতে হবে। শেষমেশ আন্দোলনের তীব্রতার সামনে মাথা ঝোঁকাতে হয় সরকারকে। ২৬০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড হয় ৩৬০০টাকা। কিন্তু তারপর দেখা দিয়েছে অন্য সমস্যা।
প্রাথমিক শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী পৃথা বিশ্বাস জানিয়েছেন, গ্রেড পে বাড়লেও পে-ব্যান্ডের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ যার ভিত্তিতে বেতনের বেসিক বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তা প্রায় কিছুই হয়নি। তাঁর বক্তব্য, এতে প্রতিমাসে অসংখ্য প্রাথমিক শিক্ষক কয়েক হাজার টাকা হাতে কম পাচ্ছেন। হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, আসলে গ্রেড পে বেড়েছে ৩০০টাকা। বলা হয়েছিল মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনে বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন উস্থির দাবি, এই বেতন কাঠামো নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা হয়েছিল। তাঁদের সমস্যার কথা তাঁরা জানিয়েছিলেন। মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা সহমতও হয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।
শিক্ষকদের অবস্থানের ফলে যাদবপুর-গড়িয়া যোগাযোগ সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি থেকে বৈঠক করে ফিরে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন শিক্ষক নেতৃত্ব। সেখানে ঠিক হয়েছে, অবস্থান চলবে। তবে রাস্তা থেকে লাগোয়া একটি পার্কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।