দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে সভা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। অরাজনৈতিক সভাটিকে ধুরন্ধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাঁধলেন নীচু তারে, স্বদেশীর আবেগে। শুধু একবারই মিলল ইশারা, শুভেন্দু যখন বললেন, তাম্রলিপ্তের ইতিহাস যাঁরা জানে না , তাঁরা ভোট চায়, বলে ভেঙে দেয় গুড়িয়ে দাও।
এদিন বক্তব্যের শুরুতে তিনি মাতঙ্গিনী হাজরার আত্মবলিদান, জাতীয় সরকার তৈরির ইতিহাস মনে করিয়ে দেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এই ইতিহাসের সমুজ্জ্বল অধ্যায়ের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন, মনে করিয়ে দেন তাও।
এর পরেই শুভেন্দু বলেন, আমাদের ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঐতিহ্য আমাদের দীর্ঘদিনের। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাঁর কথায়, “ক্ষুদিরাম, তাম্রলিপ্ত দিবস,মাতঙ্গিনী হাজরা এই অধ্যায়গুলি যাঁরা জানে না, তাঁরা ভোট চায়, বলে ভেঙে দেয় গুড়িয়ে দাও। পরিসরটা বাড়াতে হবে। আমরা গণ্ডীর মধ্যে বাঁধা থাক, তার বাইরেও একটা বড় জগত আছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মোৎসর্গ ব্যতীত এই জায়গায় আমরা আসতে পারতাম না।”
হাইলাইটস
- “যারা ইতিহাস জানে না, তারা ভোটের কথা বলে”
- অরাজনৈতিক মঞ্চে মন্তব্য শুভেন্দুর
- কাকে বিঁধলেন? উঠছে প্রশ্ন
“যাঁরা ইতিহাস জানে না, তাঁরা কেবল বলে ভোট চাই ভোট দাও, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও করে।” পূর্ব মেদিনীপুরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি আরও বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ, সেই ঐহিত্য আমাদের ধরে রেখে মানুষের কাছে অতীতটাকে বারেবারে তুলে ধরতে হবে। বহুদলীয় রাজনীতিতে একটা গণ্ডীর মধ্যে আমরা বাঁধা থাকি, তবে সেই গণ্ডীর বাইরেও একটা বৃহত্তর জগৎ আছে। সতীশ সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসুরা যদি আমাদের স্বাধীনতা না দিতে পারতেন তাহলে আজকে আমরা এই জায়গায় আসতে পারতাম না।
শুভেন্দুর এহেন মন্তব্যের পরেই আরও একবার জল্পনা শুরু হয়েছে, এর মধ্যে দিয়ে আদতে কাকে বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। কারণ তৃণমূলে সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর বিভিন্ন সময় শুভেন্দুর নানা মন্তব্যকে ঘিরে দাঁনা বেঁধেছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই বুধবার বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফা পত্রও পেশ করেছে এসেছেন তিনি। ইস্তফা পত্র পেশের পরেই তিনি যান তৃণমূল সাংসদ সুনীলকুমার মণ্ডলের বাড়িতে। এদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দুর সঙ্গে একই পোস্টারে সুনীলের ছবি দেখা যাওয়ায় শোনা যাচ্ছে নানা কানাঘুসো। আবার এদিন সুনীলের বাড়তেই শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা হয় আরও এক তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় সম্প্রতি জিতেন্দ্রও রয়েছেন সংবাদ শিরোনামে। সেক্ষেত্রে শুভেন্দু, সুনীল ও জিতেন্দ্রর একত্রে সাক্ষাৎ ইতিমধ্যেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। যদিও জিতেন্দ্র নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা নিছকই কাকতালীয়। তবে শুভেন্দু বিজেপি যাচ্ছেন বলেই দাবি করেছেন জিতেন্দ্র।
বক্তৃতার শেষে শুভেন্দু জানান, ওই পদযাত্রার পর তিনি প্রস্থান করবেন। কারণ, তাঁর কথায়, ‘‘আমার সারাদিন আরও নানা কর্মসূচি রয়েছে।’’ সূত্রের খবর, শুভেন্দু কলকাতায় আসতে পারেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের কয়েকজন ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল নেতার বৈঠক হওয়ার কথা।
অতি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শেষ করে শুভেন্দু হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। তাঁর একেবারে পাশে ছিলেন অধুনা তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত এবং তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ নেতা কণিষ্ক পণ্ডা। ছিলেন ঢাক-ঢোল-কাঁসরঘন্টা নিয়ে বহু মানুষ।
বক্তব্য শেষ করার সময়ে শুভেন্দু উবাচ, নিজস্ব কাজ রয়েছে। কোন কাজ? পদ্মাসনে থিতু হওয়ার প্রস্তুতি নাকি আরও একবার বিধানসভায় আসা, তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
এদিকে আগামী ১৯ ও ২০ তারিখ বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ সফরের মাঝেই শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির আকাশে বাতাসে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত কী করেন অধিকারী পরিবারের এই সদস্য।