দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলার পর এবার মহারাষ্ট্র। সপ্তাহখানেক আগে দেশের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। তছনছ করে দিয়েছিল গোটা বাংলাকে। প্রভাব পড়েছিল পার্শ্ববর্তী ওডিশাতেও। এবার পালা দেশের পশ্চিম উপকূলের।  এগিয়ে আসছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ।

বর্তমানে আলিবাগ এবং মুম্বইয়ের খুব কাছে অবস্থান অতিশক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিবর্তিত হওয়া নিসর্গের। এর আগে ১৮৮২ সালে তৎকালীন বোম্বাইয়ে আছড়ে পড়েছিল বোম্বাই সাইক্লোন। প্রাণ গিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষের।  বুধবার দুপুরেই ল্যান্ডফল হওয়ার কথা তার। নিসর্গের জেরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকায়। সেইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে গুজরাত উপকূলকেও। লাল সতর্কতা জারি হয়েছে মুম্বইয়ে। কারণ আইএমডি জানিয়েছে, মুম্বই থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আলিবাগে ল্যান্ডফল হওয়ার কথা নিসর্গের। ইতিমধ্যেই র‍্যাডারে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে আইএমডি। নজর রাখা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতিতে।

আইএমডি জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে নিসর্গ। এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই ১০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্র, গুজরাত, দমন ও দিউ এবং দাদরা ও নগর হাভেলির প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেন্দ্র সবরকম ভাবে পাশে রয়েছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতরে থাকার আবেদন করেছেন। এখনও পর্যন্ত মুম্বইয়ের দেখা সবথেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আছড়ে পড়তে চলেছে নিসর্গ। লকডাউনের পঞ্চম পর্যায়ে যেসব অর্থনৈতিক কাজ শুরু হয়েছিল, তার অনেক কিছুই মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ল্যান্ডফলের সময় নিসর্গের গতিবেগ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। এর ফলে প্রায় সাড়ে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস দেখা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপকূলবর্তী এলাকায় ৩০টির বেশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল তৈরি রাখা হয়েছে। এক একটি দলে ৪৫ জন করে কর্মী রয়েছেন। আরও দলকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনডিআরএফ প্ররধান এস এন ঠাকুর।

বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। নিম্ন উপকূলবর্তী এলাকা ও বস্তি এলাকা থেকে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলিকে বলা হয়েছে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে। বিদ্যুৎ পর্ষদকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে। পালঘরের পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রকে সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঠাকরের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের সচিবালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। সেনা, বায়ুসেনা, নৌবাহিনীকে আইএমডির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। আইএমডির পূর্বাভাস অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছে তাদের।

ইতিমধ্যেই গুজরাত সরকারও উপকূলবর্তী ৪৭টি গ্রাম থেকে ২০ হাজারের মতো গ্রামবাসীকে সরিয়ে এনেছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের নৌকো ও মার্চেন্ট নেভির জাহাজদের ফিরে আসার  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের জন্য খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত। মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবথেকে বেশি। খুব বেশি পিছিয়ে নেই গুজরাতও। এই পরিস্থিতিতে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে এসেছে নিসর্গ। এখন দেখার কয়েক দিন আগে সুপার সাইক্লোন আমপানের দাপটে পশ্চিমবঙ্গের যা ক্ষতি হয়েছে, সেখান থেকে এই দুই রাজ্য কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারে কিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here