দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হায়দরাবাদ হাউজের ঢাউস ব্যাঙ্কোয়েট হলের মেজাজই তখন অন্যরকম। এক কোণের ছোট মঞ্চে তখন ধ্রুপদী সরোদে বাজছে বৈষ্ণব জন তু..। দেবাঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে তখন পাখোয়াজ আর খঞ্জরীতে সঙ্গত করছেন নিশান্ত সিংহ, তবলায় রোহেন বোস। সেই সুর ঘরের আনাচ কানাচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে রোমহর্ষ ঘটাচ্ছে। ঘরের মাঝ বরাবরে লম্বা টেবিলের ওপারে সপারিষদ বসেছেন, সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমান বিন আবদুল্লাহ আজিজ আল-সৌদ। এপারে সপারিষদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিদেশি অভ্যাগতদের জন্য রাজভোজের আয়োজন নতুন নয়। রাষ্ট্রপতি ব্যাঙ্কোয়েটের আয়োজন করলে তা সাধারণত রাষ্ট্রপতি ভবনেই হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের রন্ধনশালার রাঁধুনিদের পাশাপাশি তখন শহরের অভিজাত হোটেলের নামী শেফদেরও আনা হয় রান্নার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ভোজসভার আয়োজন করলে তা সাধারণত হয় ইন্ডিয়া গেট লাগোয়া হায়দরাবাদ হাউজে। এক সময় হায়দরাবাদের নিজামদের প্রাসাদ ছিল এটি। স্বাধীনতার পর কেন্দ্রের সরকার সেটি অধিগ্রহণ করে।
শুরুটা কমন। খেজুরের তৈরি এক পদ মিষ্টি। তার পর গোলগাপ্পা ও ঢাকাই চাট। তার পর একে একে এদিকে, সৌদি যুবরাজের পাতে পড়ল তন্দুরি গুলাবি মচ্ছি, জটর কেশরি টিক্কা, ইয়াখনি শোরবা…। ও দিকে তখন প্রধানমন্ত্রীর পাতে পড়ছে রাভা টোস্ট,গুচ্চি চিলগোজা বাদাম, জাইতুনি সুর্খ শোরবা…।
কূটনৈতিক ভাবে সৌদির যুবরাজের এ বারের ভারত সফর যে যারপরনাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল সংশয় নেই। রিয়াধের সঙ্গে নয়াদিল্লির কৌশলগত সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক কী, কতটা গভীর তা বিচার না করেই স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। কেন না জ্বালানি চাহিদা মেটানোর ব্যাপারে সৌদির উপর নয়াদিল্লির বরাবরের নির্ভরশীলতাও রয়েছে। আবার সৌদি আরবও গোটা দেশের যে আটটি দেশকে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বেছে নিয়েছে তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
অনেকের মতে, এর নেপথ্যে ঘরোয়া রাজনীতিতে বার্তা দেওয়ারও একটা সূক্ষ চেষ্টা হয়তো রয়েছে মোদীর। লোকসভা ভোটের আগে দেশের সংখ্যালঘুদের হয়তো তিনি দেখাতে চাইছেন, মুসলিমদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। নিন্দুকেরা বাজে কথা বলে। আবার হায়দরাবাদ হাউজের ব্যাঙ্কোয়েট হলে এ দিন গানের সুর বেজেছে, তাতেও গেরুয়া শিবিরের খুশি হওয়ার কথা। ‘বৈষ্ণব জন তু..’ দিয়ে শুরু হওয়ার পর কখনও বেজে উঠেছে ‘আজ রঙ্গ হ্যায়রে মা’ কিংবা ‘আল্লাহ তেরো নাম, ঈশ্বর তেরো নাম’।
বস্তুত দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার বার্তা দিতেই মঙ্গলবার রাতে সৌদির যুবরাজকে অভ্যর্থনা জানাতে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে পর্যন্ত চলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে তাঁর জন্য ভোজসভার আয়োজনে যে কোনও ত্রুটি থাকবে না তা বলাবাহুল্য
ছবি- সংগৃহীত