দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবারের রাত বেলুড় মঠেই কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দকে নিবেদন করা ভোগ-প্রসাদ গ্রহণ করেছেন। রবিবাসরীয় সকাল থেকেই এক অন্য মেজাজে দেখা গেল তাঁকে। এ দিন স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন অর্থাৎ জাতীয় যুব দিবস। আর সেই যুব দিবসে সেখানে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সাতসকাল থেকেই বেলুড় মঠের ব্যস্ততা তুঙ্গে। একগুচ্ছ অনুষ্ঠানের কর্মসূচী আছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই মঙ্গল আরতি দেখে বেলুড় মঠের প্রবীণ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে দেখা করেন মোদী।
এর পরে যোগ দেন প্রার্থণাসভায়। বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে প্রার্থণা করেন তিনি। স্বামী বিবেকানন্দের ছবিতে মালা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরমহংসকে নতমস্তকে প্রণাম করেন তিনি। এরপর পায়ে হেঁটে তিনি যান সভাস্থলে। সভামঞ্চে করজোড়ে স্বামীজিকে স্বরণ করেন মোদী।
স্বাগত ভাষণের পর যুবদের উদ্দেশে বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী। স্বরণ করেন স্বামীজিকেও। এ দিন তিনি বলেন, “বেলুড় মঠ তীর্থ যাত্রার চেয়ে কম নয়। আমার কাছে বেলুড়ে আসা মানেই ঘরে আসা। আমি ধন্য আমাকে এখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। স্বামীজির সংকল্পকে রূপায়ণের দ্বায়িত্ব আগামী প্রজন্মের। জনসেবাই জীবনের মূল মন্ত্র। এই ভূমিতে আসার পর মা সারদা দেবীর আঁচল মায়ের কথা মনে করায়। আমরা কখনই একা নই। আমাদের সঙ্গে আর একজন থাকেন। চোখে ধরা পড়েন না। কিন্তু সবসময় আমাদের সঙ্গেই থাকেন। তিনি ঈশ্বর। স্বামীজি চেয়েছিলেন একশো যুবক তাঁর হাতে থাকলে দেশকে পরিবর্তন করে দেবেন। আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যুবা ভারতে রয়েছেন। এই যুবার উপরই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বলে মনে করতেন স্বামীজি।
যুবার উপরই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বলে মনে করতেন স্বামীজি। ডিজিটাল অর্থব্যবস্থায় ভারত প্রথম সারিতে রয়েছে। ১৩০কোটি দেশবাসীর জন্য সংকল্প স্থাপন করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুবসমাজ পথে নমেছে। বেলুড়ে এলে নতুন শক্তি পাওয়া যায়। ”
এদিন নিজের বক্তব্যে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর – পূর্বের যুব সম্প্রদায়কে ভুল বোঝানো হচ্ছে বলেই মন্তব্য করেন মোদী। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব আইন কিন্তু কারও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার আইন নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন।
শনিবার বিকেলে কলকাতায় মোদী পা দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। অবরুদ্ধ কলকাতার রাজপথ। তারমধ্যেই রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর লঞ্চে করে বেলুড় মঠে যান মোদী। রাতে সেখানেই ছিলেন তিনি। রবিবার সকালে মূল মন্দিরে ও স্বামী বিবেকানন্দের ঘরে কিছুক্ষণ সময় কাটান মোদী। তারপরেই তিনি যোগ দেন অনুষ্ঠানে।
মোদী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর – পূর্বের যুব সম্প্রদায়কে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এই নাগরিকত্ব আইন কারও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। নাগরিকত্ব আইনে একটা সংশোধন করা হয়েছে। দেশভাগের পর পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে, তাঁদের সুরক্ষার জন্য এই আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।”
একথা বলার পরেই সেখানে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে মোদী প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কী মনে হয়, এদের ফের মরার জন্য পাঠানো উচিত ছিল। না সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কর্তব্য ছিল। অন্যের ভাল করা উচিত তো? মোদীর সঙ্গে আপনারা আছেন তো? হাত তুলে বলুন।” মোদীর এই আহ্বানের জবাব সেখানে উপস্থিত স্কুল পড়ুয়া ও অন্যান্য অতিথিরা চিৎকার করেই দেন।
বেলুড় মঠের মঞ্চ থেকে বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দাগেন মোদী। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজনীতির স্বার্থে এই আইনের ভাল দিক বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের মানুষ সবটা বুঝতে পারছেন। মানুষই সব জবাব দেবেন।