নন্দীগ্রামে সম্মুখ সমরে মমতা-শুভেন্দু,‘দিদি আপকো নেতা বানাকেহি ছোড়েঙ্গি’, বললেন প্রধানমন্ত্রী

0
1549

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সব জল্পনার অবসান। নন্দীগ্রাম থেকেই প্রার্থী হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শুভেন্দু অধিকারী। ফলে সেখানে এবার সরাসরি লড়াই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর। শনিবার বাংলার প্রথম দু’দফার আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিজেপি। তালিকায় সেরা চমক সন্দেহাতীতভাবেই শুভেন্দুর নামই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন নন্দীগ্রামে মিছিল করেছেন বিজেপি-নেতা শুভেন্দু। বলেছেন, ‘মাননীয়া ভবানীপুর থেকে পালালেন কেন?’ নন্দীগ্রামে এবার প্রার্থী হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যাশা মতোই নন্দীগ্রামে এবার মমতা বনাম শুভেন্দু। যা একুশের ভোটে বাংলায় অন্যতম বড় চমক বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ। হাই ভোল্টেজ এই কেন্দ্রে এবার নজর থাকবে সবার। এই লড়াই দু পক্ষেরই ‘প্রেস্টিজ ফাইট।’

নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। একদা বাম দুর্গ বলে পরিচিত এই এলাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করার অভিযান চলেছিল তাঁরই হাত ধরে। সেখানকার মানুষ, শহিদ পরিবারের সদস্যরাই বলেন, গত প্রায় দেড় দশক ধরে নন্দীগ্রামকে তাঁর সকাল, সন্ধে, মধ্যরাত দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।


এ হেন নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলায় বিজেপি আর কাকে প্রার্থী করতে পারত! আর কে ছিলেন ‘মাননীয়াকে’ মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক চলাকালীন তাই নন্দীগ্রাম আসনের পাশে খস খস করে লেখা হয়ে গিয়েছিল শুভেন্দুর নামটাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা সকলেই উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নাকি হেসে বলেছিলেন, ‘শুভেন্দু মমতা দিদি আপকো নেতা বানাকেহি ছোড়েঙ্গি!’


সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় সেই সিদ্ধান্তই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হয়ে গেল বিজেপি সদর দফতর থেকে। দলের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহ জানালেন, নন্দীগ্রামে বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীই। বলতে গেলে, এ কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এক অমর রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা হয়ে গেল বাংলায়।

শুক্রবার দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন নন্দীগ্রামে তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন। ভবানীপুরে আর দাঁড়াচ্ছেন না। সেই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে তাঁর প্রচার তো অগ্রাধিকার পাবেই। কারণ, ‘নন্দীগ্রাম হল টপ অফ দ্য টপ’।


ওদিকে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর নামে দেওয়াল লেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। শনিবার বিকেলে নন্দীগ্রামের রায়া পাড়া থেকে পদযাত্রাও করেছেন এই তরুণ বিজেপি নেতা। সেই সঙ্গে আরও একবার বলেছেন, মাননীয়াকে হারাবই। নন্দীগ্রামে বহিরাগতরা জিততে পারবে না। যিনি ভবানীপুরে নিজের ওয়ার্ডেই তিনি এখানে জেতার প্রশ্নই নেই।

গতমাসে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে কার্যত মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রাম আমার সবথেকে লাকি জায়গা। নন্দীগ্রাম থেকে ২০২১-এ তৃণমূল জিতবে। নন্দীগ্রাম থেকেই শুরু হল তৃণমূলের জেতার পালা। কারও নাম এখনই বলছি না। পরে বলব। ভালো মানুষ দেব, যিনি সত্যিকারের আপনাদের পাশে থেকে কাজ করবেন। আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়। ভাবছিলাম। কথার কথা। একটু বললাম। একটু ইচ্ছে হল। একটু আমার মনের জায়গায়। সুব্রত বক্সিকে আমার নাম মনে রাখতে বলব।’ শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর দেখা যায়, শুধু নন্দীগ্রামকেই ‘ফোকাস’ করছেন তিনি। সেখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন মমতা।

মমতাকে পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক সভা থেকে হুঁশিয়ারির সুরে  শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে হাফ লাখের বেশি ভোটে মাননীয়াকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে শুভেন্দু আরও বলেছিলেন, ‘দিদিমণিকে নন্দীগ্রামেই দাঁড়াতে হবে। এক জায়গাতেই দাঁড়াতে হবে। কার ভরসায় আপনি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন? ৬২ হাজারের ভরসায়? আর পদ্ম জিতবে ২ লাখ ১৩-র ভরসায়। আমরা লড়তে জানি, জিতবই।


পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে থেকে যাবে এই লড়াইয়ের কাহিনী। তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ও ভাঙনে তৃণমূল যখন আক্রান্ত তখন গোটা আত্নবিশ্বাস জোগাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝুঁকি নিয়ে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাঁর পুরো রাজনৈতিক ওজন ও মর্যাদা ঢেলে দিতে চেয়েছেন এই লড়াইয়ে। শুভেন্দুও বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি কম যান না। নন্দীগ্রামের আন্দোলন ছিল তাঁর লড়াই। সেই লড়াই তাঁকে রাজনৈতিক উচ্চতা দিয়েছিল। এবারের লড়াইয়েও জিততে পারলে শুধু রাজ্য নয়, জাতীয় রাজনীতিতে উচ্চতা পেয়ে যাবেন তিনি। তাই সমস্ত শক্তি ঢেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন বিজেপিতে নবাগত এই তরুণ নেতা। একুশে এসপার ওসপার হবে নন্দীগ্রামেই।

Previous articleপ্রথম দুই দফার ভোটে ৫৭ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল বিজেপি,তালিকা দেখুন
Next articleরাজনৈতিক মুখেই ভরসা বিজেপি-র,প্রথম দু-দফার ৫৭টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল গেরুয়া শিবির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here