দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নতুন শিক্ষা নীতি ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর তাতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাতেই আসতে চলেছে আমূল বদল। এতদিন চলে আসা ১০+২ ব্যবস্থা আর থাকবে না। এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যে শিক্ষা নীতিতে অনুমোদন দিয়েছে তাতে নতুন এক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। তাতে ১০+২ মিলিয়ে যে বারো বছরের জাতীয় শিক্ষানীতি ছিল সেটা বন্ধ করে দিয়ে মোট পনেরো বছরের নীতি হবে। এর ফলে ৩৪ বছর পরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নীতি আসছে তাতে দশম শ্রেণির পরীক্ষার গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাচ্ছে। তার বদলে জোর বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষায়।
এখন নতুন ব্যবস্থায় তিন বছর অতিরিক্ত যুক্ত করা হয়েছে। ৫+৩+৩+৪ ফর্মুলায় বলা হয়েছে, প্রথম তিন বছর প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা হবে। ৩ থেকে ৮ বছর বয়সের মধ্যে শেষ হবে প্রাক প্রাথমিকের তিন বছর এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ। ৮ থেকে ১১ বছরের পড়ুয়াদের জন্য এর পরে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হবে প্রিপেটারি স্টেজ। এর পরে মধ্যম বা মিডল স্টেজে ১১ থেকে ১৪ বছরের পড়ুয়াদের জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন বছরের পাঠ। সব শেষে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সেকেন্ডারি স্টেজের পাঠ চার বছরের।
পরিবর্তন আনা হয়েছে পাঠদানের পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রমের ধরনে। জানানো হয়েছে, প্রাক প্রাথমিকের পরের তিন বছরে অর্থাৎ প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে সাক্ষরতা ও অক্ষরজ্ঞানের পাঠ পর্যন্ত দেওয়া হবে। প্রি-প্রাইমারি স্তরের জন্য সারা দেশে একটি অ্যাকটিভিটি ও লার্নিং বেসড শিক্ষানীতি তৈরি হবে। তার জন্য জাতীয় শিক্ষা মিশন গঠিত হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে স্টেজ সেখান থেকেই বিষয়ভিত্তিক আলাদা করে পড়ানো হবে। এর পরে আসল বদল। নবম ও দশমের পরে যে পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। একেবারে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত একটাই স্টেজ। মোট আটটি সিমেস্টারে ভাগ করে পড়ানো হবে। এর ফলে দশম স্তরের পরীক্ষার গুরুত্ব বিশেষ থাকছে না। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কমানোর কথাও বলা হয়েছে।
আরও একটা বড় বদল রয়েছে এই সেকেন্ডারি স্টেজে। এখনকার মতো দশম স্তর পাশ করার পরেই কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য নিয়ে আলাদা আলাদা করে পড়ার ব্যবস্থাটাই আর থাকবে না। তার বদলে কেউ চাইলে পদার্থ বিদ্যার সঙ্গে বেকারি আর রসায়নের সঙ্গে ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে পড়তে পারবে। ভোকেশনাল বিষয় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই যুক্ত হবে। সঙ্গীত, খেলাও কারও বিষয় হতে পারে। রিপোর্ট কার্ডে শুধু শিক্ষকরাই নন, সেই সঙ্গে পড়ুয়া নিজে এবং সহপাঠীরাও মূল্যায়ন করবে।
বড় বদল আনা হয়েছে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও। মাল্টিপল এনট্রি অ্যান্ড এক্সিট সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এর মানে হল, পড়াশোনার মাঝে পড়ুয়ারা কিছু দিনের জন্য ছুটি নিতে পারবেন। কেউ কোনও কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিলে পরে আবার যেখানে ছেড়ে গেছেন সেখান থেকেই পাঠ শুরু করতে পারবেন। উচ্চশিক্ষা সচিব যা জানিয়েছেন তাতে নতুন শিক্ষা নীতিতে উচ্চশিক্ষায় কেউ প্রথম এক বছর সম্পূর্ণ করলে সার্টিফিকেট কোর্স, দু’বছরে ডিপ্লোমা এবং চার বছরে ডিগ্রি দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি এক বছর সম্পূর্ণ করে পড়া ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতে ফের পড়তে চায় তবে ওই প্রথম বছর আর তাঁকে পড়তে হবে না। দ্বিতীয় বছর থেকে শুরু করা যাবে। সেমিস্টার ভিত্তিক পঠনপাঠনেও একই নিয়ম হবে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফের ভর্তি হতে হবে পড়ুয়াদের। অনেক বেশি দিন ছেড়ে থাকা যাবে না।
স্নাতকোত্তর স্তরেও এসেছে বদল। নতুন নীতিতে কেউ গবেষণা করতে চাইলে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স করতে পারেন। তিন বছর স্নাতকস্তর এবং এক বছর স্নাতকোত্তর পড়ার পরেই চাইলে পিএইচডি করা যাবে। এমএ শেষ করার চাপ থাকবে না। আবার এম ফিল করার প্রয়োজনও পড়বে না। স্কুলের মতোই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এডুকেশন’ চালু হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ‘মেজর ও মাইনর’ ব্যবস্থা থাকবে।
অর্থাৎ মূল যে বিষয় তার সঙ্গে সহযোগী বিষয় হিসেবে সঙ্গীত, চিত্রকলার মতো বিষয়ও নেওয়া যাবে। এদিন নয়া শিক্ষানীতি ঘোষণার সময়ে জানানো হয়েছে, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন গঠন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণায় এই ফাউন্ডেশন অনুদান দেবে। সেই অনুদান বিজ্ঞানের জন্য যেমন মিলবে তেমনই মিলবে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও।
এখন দেশে উচ্চশিক্ষায় নিয়ন্ত্রক হিসেবে ইউজিসি, এআইসিটিই এবং ন্যাশনাল কনসার্ন ফর টিচার এডুকেশন— এই তিনটি সংস্থা রয়েছে। নয়া নীতিতে এত সংস্থা থাকবে না। তার বদলে একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে। কলেজের জন্য স্বায়ত্তশাসন বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। গ্রেড অনুযায়ী কলেজের স্বায়ত্তশাসন নির্ধারণ হবে। ফিজ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও নতুন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।