নক্ষএ পরিচয়: রাতের আকাশে এখন উজ্জ্বল তারার মেলা দেখতে ভিড় করছে খুদেরা

0
2612

স্নিগ্ধা সামন্ত: দশদিন অতিক্রম করল লকডাউন তার জেরে শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা কমে গেছে অনেক। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যানুযায়ী বাতাসের গুণাগুণ সূচক ৪০ থেকে ৬০–‌এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। পরিবেশ থেকে ধোঁয়াশাটা প্রায় উধাও হয়ে যাওয়ায় দৃশ্যমানতা বেড়েছে অনেকটাই। ফলে আকাশ হয়েছে ঝকঝকে, নির্মল। সুনীল আকাশে সন্ধে হতেই চোখে পড়ছে তারার মেলা।

যে সব অঞ্চলে বাড়ির ছাদ থেকে সন্ধ্যাকাশে চাঁদেরই দেখা পাওয়া যেত না ধোঁয়াশার কারণে, এখন শুক্লপক্ষের চাঁদ তার মহাজাগতিক পরিবার নিয়ে সীমান্তের কোন শহর থেকে কলকাতার আকাশে রূপের পশরা সাজিয়ে বসে আছে। সন্ধে হতেই তাই পাড়ায় পাড়ায় উঁচু আবাসন ও সাবেকি বাড়ির ছাদে বাবু–‌বিবিদের আনাগোনা। ঝকঝকে আকাশে ছাচি কুমড়োর ফালির মতো চাঁদের পাশে জ্বলজ্বলে সন্ধ্যাতারা দেখতে দেখতে চা–‌পানের পর্বও সারছেন অনেকেই।

সন্ধে গাঢ় হতেই উত্তর–‌পশ্চিম আকাশে চোখে পড়ছে সপ্তর্ষি মণ্ডলের অস্তিত্ব। ক্লাস ফাইভের নয়না সল্টলেকের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে চিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে সপ্তর্ষি মণ্ডলের সাতটি তারাকে। কিন্তু কোনটা পুলস্ত, কোনটাই–‌বা পুনহ, ক্রতু বা অঙ্গীরা তা ঠিক ঠাহর করতে পারছে না নয়না।

বনগাঁর বাসিন্দা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক দেবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম আকাশে শুক্র গ্রহ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ওই সময়টার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে থাকি। সন্ধে নামলেই নাতি নাতনিদেরকে নিয়ে বসে যাই তিন তলার বারান্দায়, সাধ্যমতো তাদেরকে তারা চেনানোর চেষ্টা করি৷
জ্যোতির্বিজ্ঞানী (বিড়লা তারামণ্ডলের পরিচালক) দেবীপ্রসাদ দুয়ারির মতে, এই লকডাউন পরিস্থিতিতে কলকাতার আকাশের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এমন পরিষ্কার আকাশ গত দশ বছরেও কলকাতাবাসী কখনও দেখেনি। এখন এই নির্ভার আকাশে সপ্তর্ষি মণ্ডলকে তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাত আটটার পর উত্তর–‌পূর্ব আকাশে দেখা যাচ্ছে কালপুরুষকেও। ৩টে তারা এক সরলরেখায় কোমরবন্ধের মতো ভেসে থাকে।

কিন্তু কোমরবন্ধের কিছুটা ওপরে লালচে যে তারা দেখা যায় জ্বলজ্বল করতে, তা হল আদ্রা নক্ষত্র। এসবই খালি চোখে দেখা যাচ্ছে এখন শহর কলকাতার আকাশে। একটু রাতের দিকে ক্যাসিওপিয়াকেও দেখা যায়, পাঁচটা তারার সমষ্টি এই তারা মণ্ডল সপ্তর্ষি মণ্ডলের থেকে খানিকটা বাঁদিকে অবস্থান করে।

যাদবপুরের বাসিন্দা মোহিনী বিশ্বাস পেশায় চিত্র শিল্পী তিনি জানান সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরও পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ তাঁকে হাতছানি দেয়।যে নির্মল আকাশের খোঁজে আমি আমার গ্রামের বাড়ি চাঁদপাড়ায় যাই, সেই আকাশ তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের হাতের মুঠোয় এখন । তাই ছেলে আর্যকে নিয়ে মোহিনী দেবী রাতে ছাদে উঠে যান। সঙ্গে থাকে স্বয়ংক্রিয় দূরবিন। দূরবিনে চোখ রেখে অপার বিস্ময়ে দেখতে থাকেন বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গলের গতিবিধি।

রাত তিনটে থেকে ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত পূর্ব আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র বৃহস্পতির অবস্থান। তার ঠিক নীচে ডানদিক ও বাঁদিকে কানের দুলের মতো ঝোলে মঙ্গল ও শনি গ্রহ। মঙ্গল একটু লালচে, শনি থাকে বাঁদিকে তার জ্যোতির্বলয়–‌সহ। আগামী মাস দুয়েক সূর্য ওঠার আগে পর্যন্ত এই তিন গ্রহকে পূর্ব থেকে উত্তর–‌পূর্বের আকাশে দেখা যাবে বলে জানাগেছে বিড়লা তারামণ্ডলের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে৷

Previous articleঅভুক্তকে নিজেদের খাবার দিল পুলিশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও শেয়ার করলেন যুবরাজ সিং
Next articleজাতির উদ্দেশে বিরল ভাষণ রানি এলিজাবেথের! দেখুন ভিডিও:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here