দেশের সময়ওয়েব ডেস্কঃ ধর্না চলবে আগামী আট তারিখ পর্যন্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।’ সোমবার ধর্নামঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত চিরকালই সংস্কৃতি, সভ্যতার প্রতীক। এখানে মানুষ নিজস্ব গণতান্ত্রিক, বাকস্বাধীনতার অধিকার নিয়ে বাঁচে। কেউ বিজেপির বিরোধিতা করলেই তাঁকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশের শত্রু বলা হচ্ছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এই ধর্না আসলে সত্যাগ্রহ। বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।আশা করব আইন আইনের পথেই চলবে।’ তাঁদের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন দেশের সব বিরোধী নেতৃত্ব বলে জানিয়ে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান মমতা। মমতার কটাক্ষ, ‘বিজেপি ভয় পেয়েছে, এই বুঝি ক্ষমতা চলে যায়। তাই বিরোধীদের শেষ করার অপারেশন শুরু করেছে বিজেপি। এরই বিরুদ্ধে আমাদের সত্যাগ্রহ চলছে, চলবে। আমাদের এই সত্যাগ্রহ কোনও সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, মোদীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে।’ধর্নামঞ্চে থাকার কারণে সোমবার কোনও সরকারি ঘোষিত অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। মঞ্চের পাশেই আলাদা জায়গা করে এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর নেতাজি ইন্ডোরে নির্ধারিত কৃষক আন্দোলনের অনুষ্ঠান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারেন।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃষক সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও, ধর্না মঞ্চ থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষকদের পাশে সবসময় আছেন বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার শহরে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাতের চাপান–উতোরে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিস কমিশনার রাজীব কুমারের পাশে দাঁড়াতে রবিবার রাত থেকেই অনশনে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ধর্না মঞ্চ থেকে বিজেপি সরকারকে তুলোধনা করে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রশাসনকে হেনস্থা করতে চাইছে। নোংরা রাজনীতি করতে নেমেছে কেন্দ্র। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তারা। প্রতিহিংসামূলক আচরণ মোদী সরকারের। এটা বরদাস্ত করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কৃষকদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। দেশে প্রায় ১২ হাজার কৃষক আক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক আন্দোলন হলেও হুঁশ ফেরনি বিজেপির। নোটবন্দীর পরেই কৃষকরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে জানান, এর আগেও তিনি কৃষকদের জন্যই টানা ২৬ দিন অনশনে বসেছিলেন। এরপরই কৃষকদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়। ‘নোটবন্দীর পর থেকে কৃষকদের অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বহু কৃষক না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন, কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারছেন না তাঁরা। কিন্তু আমরা কৃষি জমি নষ্ট করতে দিই না। অনশন করে আমি কৃষকদের সিঙ্গুর ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কৃষকদের শস্যবীমা প্রকল্পে রাজ্য ৮০ শতাংশ টাকা দেয়। কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা নেই তাতে। কেন্দ্র সরকারের টাকা রাজ্য নেবেও না। শুধু বক্তব্য বা প্রতিশ্রুতি দিলেই ক্ষমতায় থাকা যায় না। কৃষকদের জন্য সরকারের বহু প্রকল্প রয়েছে। কারণ কৃষি হল ভিত্তি।’ কৃষকদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘আপনাদের দুর্বলতা নিয়ে কেউ যেন রাজনীতি করতে না পারে। আমি আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে আন্দোলন করেছিলাম। আজও আপনাদের পাশে সবসময় আছি।’
কর্মসূচি অনুযায়ি মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার পাশাপাশি তাঁর ডাকে সোমবার রাজ্য জুড়ে,তৃণমূলের কর্মী সমর্থক এবং বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিকেরা জেলা ও শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন,সেই সব চিত্র ধরা পড়ল দেশের সময় এর ক্যামেরায়৷
বনগাঁয় বনগাঁ পুরসভার পুর প্রধানের নেতৃত্বে এদিন বিকালে যশোর রোডে পোড়ানো হয় প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশ পুতুল। হাবরায় নীলিমেশ দাসের নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করা হয়৷ সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে ভোটের আগে পারদ চড়ছে৷