দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ক্রমশ বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমণের ১ লক্ষের গণ্ডি পেরোনও যেন সময়ের অপেক্ষা। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টিকাকরণের উপর আরও বেশি জোর দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। সকলকে ভ্যাকসিনেশনের গুরুত্ব বুঝিয়ে প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে বলেন। যাতে করোনা হানায় রাশা টানা যায়।


প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানান হয়, যে সমস্ত রাজ্যে মারণ ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেখানে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হবে বিশেষ প্রচার। দিল্লিতে ক্যাবিনেট সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটরি, স্বাস্থ্যসচিব-সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিককে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। 


জনসচেতনাকে হাতিয়ার করেই কোভিড-১৯ ভাইরাস রোখার কথা জানান তিনি। মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বিধি কার্যত শিকেয় উঠেছে। সেই বিধি ফের কঠোরভাবে লাগু করার কথা জানান তিনি। যে সব রাজ্যে করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে সেখানকার জনতাকে সচেতন করতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসচেতন থাকার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক করা হবে এই বিশেষ প্রচারে।

সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় ‘ফাইভ-ফোল্ড স্ট্র্যাটেজি’র কথা। টেস্টিং, ট্রেসিং, চিকিৎসা, কোভিড প্রোটোকল পালন এবং টিকাকরণ সঠিকভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। যদি এরপরও করোনা কমানো না যায় সেক্ষেত্রে ফের হয়ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে কেন্দ্রকে, এমন আভাসও উঠে আসে বৈঠকে। মৃত্যুর হার কমানোর দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়ে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির ঘটনা সামনে এসেছে। নয়া ঢেউ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সজাগ করতে স্থানীয় ভলান্টিয়ারদের কাজে নামারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে। প্রতিটি রাজ্য কোভিডের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ রুখতে বিধিনিষেধ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। 


মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব এবং ছত্তিশগড়ের গুরুতর পরিস্থিতির দিকটি আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল। দেশের মোট আক্রান্তের মধ্যে মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের শতকরা হার ৫৭ শতাংশ। ৫৭ হাজার ছুঁয়েছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। এরপরই রয়েছে পাঞ্জাব। ছত্তিশগড়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। টিকাকরণ ঠিকমত হচ্ছে না এমন অভিযোগও ওঠে। যদিও টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি করে সেই পরিস্থিতি সামলানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ রুখতে কঠোর হচ্ছে মহারাষ্ট্র সরকার। দিনের বেলা ৫ জনের বেশি জমায়েতে রবিবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া, পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তে, অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউনের কথাও ঘোষণা করেছে উদ্ধব ঠাকরের প্রশাসন। তবে রবিবার প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত সম্পূর্ণ লকডাউন করার কোনও চিন্তা ভাবনা নেই। তাও আশঙ্কা কাজ করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মনে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সেই কারণেই মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহর থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।


পুণের পাশাপাশি মু্ম্বই শহরেও জারি করা হয়েছে রাত্রীকালীন কার্ফু। রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এই কার্ফু কার্যকর থাকবে। পুণের মতো এখানেও ছাড় থাকছে হোম ডেলিভারি, খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে। রেস্তোরাঁগুলিতে শুধু খাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া গণপরিবহণ চলবে ৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে। বন্ধ থাকবে শপিং মল, সিনেমা হল।

গোটা মহারাষ্ট্রে লকডাউন না ঘোষণা করা হলেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দিনে ৫ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশ কোথাও ৫ জনের বেশি মানুষ জমায়েত করতে পারবেন না। সরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চালাতে হবে। বেসরকারি যানবাহন ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী নিতে পারবে না, জানিয়েছেন মন্ত্রী নবাব মালিক। রবিবার মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


কিন্তু সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করায় আশঙ্কায় ভুগছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। সংবাদসংস্থার খবর, সম্পূর্ণ লকডাউনের আশঙ্কায় অনেক শ্রমিকই মহারাষ্ট্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। মুম্বইয়ের স্টেশনে অপেক্ষারত শ্রমিকদের মধ্যে একজন সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘আমাদের ভয়, আবার লকডাউন হতে পারে। শেষবার আমাদের টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। পরিবার অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন। আয় শূন্য হয়ে পড়েছিলাম। তাই এ বারে ঝুঁকি না নিয়ে আগে থেকেই বাড়ি ফিরতে চাই।’’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত কয়েক দিন ধরেই সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে দেশে। রবিবার একধাক্কায় দৈনিক সংক্রমণ ৯৩ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ ৭ মাস পর এই প্রথম সংক্রমণ ফের ৯০ হাজার পেরোল। এর আগে, গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর দেশে দৈনিক সংক্রমণ ছিল ৯৩ হাজার ৩৩৭। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে পরিসংখ্যান সামনে এনেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৩ হাজার ২৪৯ জন কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন। দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষের কাছাকাছি হওয়ায় সব মিলিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০৯ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। যে কারণেই এই প্রশাসনিক তৎপরতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here