দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিরোধিতার মধ্যেই রবিবার কেন্দ্রীয় সরকারের আনা তিনটি কৃষি বিলে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তারপরেই দেশজুড়ে কৃষকদের বিক্ষোভ আরও বেড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ হলেও তার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়। এই বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে রাজধানী দিল্লিতেও। সোমবার সকালেই বিক্ষোভ দেখা গেল ইন্ডিয়া গেটের সামনে। জ্বালানো হল ট্রাক্টর। এদিকে বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে কর্নাটকে।
সূত্রের খবর, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ১৫ থেকে ২০ জন জড়ো হন ইন্ডিয়া গেটের সামনে। তারপরে একটি পুরনো ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে ধর্নাতে বসতেও দেখা যায় তাঁদের। বিজেপি বরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। অবশ্য পুলিশ জানিয়েছে, কারা এই কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এই বিক্ষোভ সবথেকে বেশি বেড়েছে। এই কৃষি আইনের প্রতিবাদে এবার অনশনে বসতে চলেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। স্বাধীনতার সংগ্রামী ভগত সিংয়ের গ্রাম খাটকার কালানে আজ অনশনে বসবেন তিনি। রবিবারও অমৃতসর- দিল্লি রেললাইনে বসে বিক্ষোভ দেখান কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সদস্যরা। গত বুধবার থেকে এভাবে রেললাইনে বসেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
পাঞ্জাবের কৃষকরা গত সপ্তাহ থেকেই রেল রোকো কর্মসূচি নিয়েছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের রফতানিতে সমস্যা হচ্ছে। উত্তর এবং উত্তর-মধ্যে রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাজীব চৌধরী সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, “এভাবে রেল রোকো আন্দোলনের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও যাত্রীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এর প্রভাব গোটা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর পড়ছে।”
কর্নাটকে সোমবার কৃষকদের একটি সংগঠন বনধের ডাক দিয়েছে। এই বনধে সমর্থন জানিয়েছে কর্নাটকের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। সকাল থেকেই বনধ শুরু হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় তার প্রভাব পড়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
গত সপ্তাহ ধরেই কৃষি বিলের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছিলেন কৃষকরা। সংসদেও সুর চড়িয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষেই ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গিয়েছে বিল। রবিবার রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা আইনে পরিণত হয়েও গিয়েছে।
অবশ্য নিজেদের বিরোধিতা থেকে সরে আসতে নারাজ কৃষকরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিরোধী দলগুলি। সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি অলিখিত জোট তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন বিজেপির সবথেকে পুরনো সঙ্গী অকালি দল। এক বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়েছে তারা। মন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অকালি দল নেত্রী হরসিমরত কউর বাদলও। অকালি দল এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসায় ভালরকমের ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার বারবার বলছেন, এই আইন করা হয়েছে কৃষকদের ভালর জন্যই। বিরোধীরা তাঁদের ভুল বোঝাচ্ছেন। এই কারণে কৃষকদের কাছে যাতে সঠিক বার্তা যায় তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের উপর। তাদের বলা হয়েছে কৃষকদের মধ্যে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক কথা তাঁদের বোঝাতে হবে। তাহলেই বিক্ষোভের রাস্তা থেকে তাঁরা সরে আসবেন বলে আসা প্রধানমন্ত্রীর।