পার্থ সারথি নন্দী,দেশের সময় : এপার বাংলা ওপার বাংলার বাঙালির এবছরের নববর্ষ উদযাপন টাই কেড়ে নিল করোনা ভাইরাস৷
সোমবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্তের মূল গেটে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায়-ওপার বাংলার দিকে তাকিয়ে দেখা গেল জনশূণ্য যশোর রোড, দু’এক জন বিজিবি জওয়ান ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না।আর এপার বাংলারও একই চিত্র মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে হাতে গোনা দু’জন বিএসএফ জওয়ান, ব্যাস মানুষের চিহ্ন বলতে এই টুকুই ,আর সারা দিনে বাংলাদেশে ফিরদে হাতে গোনা কয়েক জন যাত্রী৷ এরই মধ্যে রাত পেরলেই বাঙালির নববর্ষ।
এবার কী লকডাউনের মধ্যেই বাঙালি বর্ষবরণ করবে চার দেওয়ালের মধ্যেই!হাঁ একদম ঠিক, তাই তার প্রস্তুতিও প্রায় পাকা। চৈত্রের সেল শুকিয়ে গিয়েছে করোনার কারণে। সারি সারি বন্ধ দোকানের মুখ ছাড়া আর কিছু দেখার নেই। তবে, বাংলা বছরের প্রথম দিন এত চাপের মুখেও কিছু না কিছু করবেই এই দেশ ও বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি পরিবার। এবার পঞ্জিকা এবং বাংলা ক্যালেন্ডার সেভাবে হাতে আসেনি। কিছু কিছু জায়গায় ছাপা হলেও পঞ্জিকা কেনার হুড়োহুড়ি একেবারেই ছিল না। কারণ কলেজ স্ট্রিটই তালা বন্ধ।
নববর্ষকে সামনে রেখে বাঙালি ব্যবসায়ীরা বহু টাকা লগ্নি করেন। দেশ–দুনিয়া লকডাউনের খাঁচায় আটকে গেছে। তাই লগ্নিও নেই, বিক্রি নেই, লাভও নেই। এত কিছু নেই নেই–এর মধ্যেও বাঙালির মনে ও মননে নতুন বছর রয়েগেছে।
দোকান–বাজারে নতুন জামাকাপড় কেনার ভিড় নেই। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই নেই। পাড়ায় ঘোরাও বিপদ। অনেকেই সেদিনটা অন্যান্য দিনের মতো বাড়িতেই দু–চার পদ বেশি রেঁধে আর শুভেচ্ছা বিনিময় করে কাটানো ছাড়া আর কী বা করার আছে।
মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত কেনাকাটার বাজার তুঙ্গে থাকে। ২২ মার্চ থেকেই সব গ্রাস করেছে স্তব্ধতা। ১০০ বছরে এমন কোনও দিন এসেছিল কিনা মনে করতে পারছেন না কেউই।
নববর্ষের মূল বিষয় হালখাতা। সারা বছরের কেনাকাটার শুভ সূচনা। দোকানে ঝাড়পোছ করে জিনিসপত্র সাজিয়ে পাকাপাকি ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি কার্ড পৌঁছে দেওয়া।
পয়লা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই ব্যস্ততা থাকে দোকানে দোকানে। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটে পুজোর লম্বা লাইন থাকে। এ বছর সে–সমস্ত চিত্রের দেখা মিলবেনা ।ছবি-কুন্তল চক্রবর্তী।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান হয়। বাংলায় কৃষ্টি–সংস্কৃতির একটা বাৎসরিক পার্বণ হয়। হচ্ছে না। কিন্তু, ‘না’–তেই থেমে থাকবে না বাঙালি। এখন সোশ্যাল মিডিয়া তার কাছে বড় অস্ত্র। প্রণাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করোনা আটকাতে পারবে না।
নতুন বছরে যে–পোশাক ঘরে ঘরে ঝলমল করে, তা উঠে আসে চৈত্র সেলের বাজার থেকেই। অগত্যা যদি কিছু নতুন থেকে থাকে, সে পোশাকই এই সময়ে নববর্ষের পোশাক হিসেবেই পড়বে বাঙালি।
প্রতিবারই নববর্ষের গান তৈরি হয়। পুরনো দিনের গানও গাওয়া হয়। সারা বিশ্বে বাঙালিরা যে যেখানেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকুক আগের দিন রাত ১২টার পর থেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা মেসেজের ইনবক্স ভরিয়ে দেয়। এখন হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে ভরে যায় শুভেচ্ছা বার্তা। আশা করাই যায়, শুভেচ্ছা জানানোর স্রোত আটকাতে পারবে না করোনা!
দুনিয়া কাঁপানো লকডাউনের দিনে বাঙালি হারবে না। সে জিতবে। এখন তার হাতে এসেছে ভিডিও কল। দূরত্ব যা–ই হোক, ভিডিও কলে প্রিয়জনকে দেখে শুভেচ্ছা তো জানানোই যায়। করোনা আটকাতে পারে না!
বাজারে হয়তো মনের মতো মাছ, মিষ্টি, ফলমূল পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে কী? বাঙালি রবিবার থেকেই এই দিনটার জন্য কেনাকাটা শুরু করেছে। একেবারে শূন্য হাতে সে বসে থাকে না। এবছরটাই একটা যুদ্ধক্ষেত্রে নববর্ষ আবাহনের আয়োজন হচ্ছে।