দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ সফর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার সেরে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর গন্তব্য ছিল গঙ্গারামপুর। সেখানে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বৈঠকেই জেলাপরিষদের কাজ না হওয়া নিয়ে জেলা শাসক নিখিল নির্মলকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা জানতে চান জেলাপরিষদের কাজ কেমন হচ্ছে? কোনও সমস্যা আছে কিনা। জেলাশাসক জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু ম্যাডাম, ওঁরা কাজ করতে দিচ্ছেন না!” এই কথা শুনেই যেন আগুনে ঘি পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তার মানে? কাজ করতে দিচ্ছে না মানেটা কী? তুমি তো সারেন্ডার করছো! না পারলে ছেড়ে দাও।” এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। ভর্ৎসনার সুর আরও চড়িয়ে বলেন, “এই শোনো, পাবলিক কাজ না পেলে তোমায় ধরবে না। তারা আমায় ধরবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমি কারও সঙ্গে আপস করব না।”
কিন্তু এই ‘ওঁরা’ কারা?
‘ওঁরা’ হলেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জেলাপরিষদ সদস্য। মনে পড়ে লোকসভা ভোটের পরের কথা? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একটিই লোকসভা আসন। সেটা বালুরঘাট। সেই আসনে এবার হারতে হয়েছে তৃণমূলের গতবারের সাংসদ তথা নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকে।
ভোটে জিতে বালুরঘাটের সাংসদ হয়েছেন বিজেপির সুকান্ত মজুমদার। আর তার পরই দলবদল শুরু হয়। ভোটের পরই দলের জেলা সভাপতি বদল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে ওই জায়গায় বসানো হয় অর্পিতা ঘোষকে। এরপর জেলা পরিষদের ১০জনকে নিয়ে দিল্লি চলে যান বিপ্লববাবু। যোগ দেন বিজেপিতে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদে মোট আসন সংখ্যা ১৮। বিজেপিতে যোগ দেওয়া ১০ জনের মধ্যে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন পাঁচ জন জেলাপরিষদ সদস্য। ফলে তৃণমূলের পক্ষে এখন ১৩ জন হলেও গোল বেঁধেছে অন্য জায়গায়। বিজেপিতে যোগ দেওয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায় এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, তাতে সভাধিপতি যা বলছেন তা তৃণমূলের সদস্যরা মানছেন না। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য যা চাইছেন তা উড়িয়ে দিচ্ছেন বিজেপিতে থাকা সভাধিপতি। ফলে সমস্ত কাজ ঝুলে রয়েছে। এদিন মমতা জেলা শাসককে নির্দেশ দেন, “কোনও সমস্যা হলে সেটা তোমাকেই মেটাতে হবে। এই জন্যই জেলা প্রশাসন থাকে!” জেলাপরিষদের টাকা খরচ হচ্ছে না শুনে ব্যাপক চটে যান মুখ্যমন্ত্রী।
গঙ্গারামপুর থেকেই মালদহের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মমতা। সেখানে এদিন সন্ধেবেলা প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা তাঁর। তারপর আগামীকাল মুর্শিদাবাদ সফর রয়েছে।