দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ঢাকের তালে মহিলাদের দেদার ধুনুচি নাচ। সেই ছন্দেই ফুরফুরে মেজাজে সোমবার মনোনয়ন পেশ করলেন ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ।প্রিয়াঙ্কার মনোনয়নে শুভেন্দু-অর্জুন-দীনেশ, বড় লড়াইয়ের বার্তা বিজেপির ৷
ভবানীপুর উপনির্বাচনকে যে বিজেপি হালকা ভাবে নিচ্ছে না তা গত কয়েকদিনেই স্পষ্ট করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। সোমবার বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের মনোনয়ন পর্বেও যাঁরা হাজির থাকলেন তাতে বার্তা দেওয়া হল, লড়াই হবে শেষ পর্যন্ত!
ভবানীপুরের গোল হনুমান মন্দিরে পুজো দিয়ে আলিপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে পৌঁছন প্রিয়াঙ্কা। সেখানে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের কাছে মনোনয়ন জমা দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনিই প্রিয়াঙ্কার নাম প্রস্তাব করেন।
সার্ভে বিল্ডিংয়ে যখন পৌঁছন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভবানীপুরের ক্যাম্পেন কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনীল ঘোষ , পর্যবেক্ষক অর্জুন সিং এবং সহ-পর্যবেক্ষক সৌমিত্র খাঁ। দীনেশ ত্রিবেদিকে নিয়ে জল্পনা চললেও তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনই নিজের ছোট ভাইকে হারালেন প্রিয়াঙ্কা। জানা গিয়েছে, তাঁর ভাই হায়দরাবাদে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছিল। আজ মৃত্যু হয়। আজ ছিল মনোনয়ন পেশের শেষ দিন, তাই মনোনয়ন জমা দিলেও প্রচারে বেরোবেন না প্রিয়াঙ্কা । এ দিন প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘পুজো এসে গিয়েছে। মা দুর্গা আবাহন এখন সময়ের অপেক্ষা। সেই বিশেষ সময়েই মনোনয়ন পেশ। ভবানীপুরের মানুষের জন্য ন্যয়ের লড়াই। দেবী দুর্গাকে স্মরণ করেই লড়াইয়ে নামছি।’
এদিন একটি মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যান আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা। সেখানে ঢাক-ঢোল নিয়ে কার্যত উৎসবের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল বিজেপি। আলিপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে বসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এ রাজ্যের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার নির্বাচন ভবানীপুরে। ভোট পরবর্তী হিংসার কথা উল্লেখ করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, যে পরিস্থিতি পশ্চিমবাংলায় কায়েম হয়েছে তা থেকে মুক্ত করতে পদ্মফুলে ভোট দিতে হবে। ভবানীপুরবাসীর উদ্দেশে শুভেন্দুর আবেদন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য আপনারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন। তাই মাস্ক পরে বেরিয়ে এসে ভোট দিন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে কলকাতার পুরনির্বাচনে প্রথমবার প্রার্থী হন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল । সেবার তাঁকে পরাজিত হতে হয়েছিল। এন্টালি আসনে প্রার্থী হয়েও খালি হাতেই ফিরতে হয় প্রিয়াঙ্কাকে। তৃণমূলের সঙ্গে ওই আসনে বিজেপির ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ৫৯ হাজার। অন্য দিকে, গোটা তৃণমূল দলটাই বারবার দাবি করে এসেছে বিধানসভা নির্বাচনের সব কেন্দ্রে একজন প্রার্থী, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
তবে মমতার বিরুদ্ধে লড়াই প্রিয়াঙ্কাকে যে কিছুটা লাইমলাইট দেবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাবুল সুপ্রিয় হোন বা শুভেন্দু অধিকারী বহু বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ প্রিয়াঙ্কা। সূত্রের খবর, স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শ মেনেই কেন্দ্র তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে। জীবনের তৃতীয় ভোট লড়াইয়ে প্রিয়াঙ্কার হার-জিত যাই জক না কেন, তিনি চাইবেন জমি তৈরি করতে, তাতে আর সন্দেহ কী। তবে মুখে প্রিয়াঙ্কা বলছেন, লড়ছি মানুষের জন্য।
এদিন ভবানীপুরের সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসও মনোনয়ন জমা দেন। তরুণ এই আইনজীবী বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ৩৬৫ দিনের। যেহেতু এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়ছেন সেহেতু ভবানীপুরের নির্বাচনটাও সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটা অন্যতম মাইলস্টোন। এই লড়াই চলবে।
বিজেপি অঙ্ক কষে দেখাতে চাইছিল, নন্দীগ্রামে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব হয়েছে তেমন ভবানীপুরেও অসম্ভব নয়। ২০১৯-এর লোকসভায় তৃণমূল-বিজেপির ভোট ব্যবধান, সংখ্যালঘু ভোটের বিন্যাসের তথ্য তুলে গেরুয়া শিবির বোঝাতে চাইছে যাহা নন্দীগ্রাম তাহাই ভবানীপুর।
এদিন বাম-বিজেপির মনোনয়নকে কটাক্ষ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, যিনি ভবানীপুরে জিতবেন তিনি শুক্রবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যাঁরা দ্বিতীয় আর তৃতীয় হবেন তাঁরা সোমবার মনোনয়ন দিলেন।