‘নাকো লেক’
শম্পা গুহ মজুমদার:
হিমালয়ের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে মানুষ বার বার ছুটে যায় দুর্গম পথে ৷এবারের গন্তব্য স্পিতি ভ্যালি ৷ শতলুজ বা শতদ্রু নদী কে পশে রেখে অচেনা অজানা আকপা, মোরাং, স্পেলো, পু পেরিয়ে রুক্ষ পাহাড়ের গা বেয়ে আমাদের গাড়ি অনেক অনেক উচ্চতায় উঠছিলো ।
নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেখছি কত নিচে সাদা রেখার মতন নদী বয়ে চলেছে ৷রাস্তার উপর দিয়ে কখনও বয়ে চলেছে ঝর্ণার জল ৷ তার ওপর দিয়েই গাড়ি যাচ্ছে ।পাথুরে রুক্ষতার মাঝখানে হঠাৎই সবুজের সমারোহ ৷ সমুদ্রতল থেকে৩,৬৬২ মিটার (১২,০১৪ ফু) উচ্চতায় উইলো এবং উঁচু ও সরু পপলার বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত নাকো হ্রদ ।
এটি কিন্নর জেলার পু মহকুমার অবস্থিত একটি উচ্চতার হ্রদ। কাক চক্ষুর মতন টলটলে , কখনো সবুজ কখনো ঘন নীল লেকটি মনে শান্তি পাওয়া যায় । হ্রদটির কাছাকাছি চারটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। এই জায়গার কাছাকাছি সন্ত পদ্মসম্ভবের পায়ের মত চিহ্ন আছে। এখান থেকে কয়েক মাইল দূরে তাশিগাং নামক একটা গ্রামের আশেপাশে অনেকগুলি গুহা আছে বিশ্বাস করা হয় এই স্থানে গুরু পদ্মসম্ভব ধ্যান করেছিলেন এবং অনুসরণকারীদের বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
সেখানে একটি জলপ্রপাত আছে কাছাকাছি যেখান থেকে বরফ গলা জল, দুধের নদীর মত পড়ছে। এটা এই উপত্যকার মানুষের কাছে একটি পবিত্র স্থান। পর্যটক রা লাদাখ এবং স্পিতি উপত্যকা থেকেও এখানে আসেন। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের দু’পাশে পাইনের সারি। তারই ফাঁকে বরফে ঢাকা পবিত্র শৃঙ্গের শুভ্রতা ।রুক্ষতার মধ্যে নাকো গ্রাম যেন এক মরুদ্যান ৷
পাথর দিয়ে গাঁথা গ্রামের বাড়ি ঘর । মাঝে এমারেল্ড পাথরের রঙের এক পবিত্র লেক। ঘন আকাশে ভেসে বেরায় সাদা মেঘের দল । মাঝে পবিত্র নাকো লেক। লেকের জলে উইলোর জলছবি ৷ প্রাচীন লোটসাবা মনাস্ট্রি আর প্রতিটি বাড়িতে উড়ছে লাল-সাদা-নীল পতাকা ৷ কটি দোকান কয়েকটি রেস্টুরেন্ট র কিছু হোটেল ।
অক্টোবর থেকে বরফ পড়া শুরু হয় । সাদা চাদরের তলায় ঢাকা পড়ে যায় ছোট্ট জনপদটি৷ পাশের টিলার উপর থেকে নাকো গ্রামে ও লেকের জলে সূর্যাস্তর লালিমা পাহাড়ে ওঠার কষ্ট ভুলিয়ে দেয় ৷ গোধূলিতে গ্রামে একটি দুটি করে আলো জ্বলে ওঠে । অন্ধকার গভীর হতে থাকে ৷ পাহাড়ের বুক চিড়ে মিল্কিওয়ের ছায়া পড়ে হ্রদের জলে ৷ সেই অপার্থিব দৃশ্য মনের মণি কোঠায় অবিনশ্বর হয়ে থাকবে ।