দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: ১৩ দিন ধরে সাইকেল চালিয়ে তামিলনাড়ু থেকে বাড়ি ফিরলেন ডায়মন্ডহারবারের যুবক। বুধবার ডায়মন্ডহারবার-২ ব্লকের সিমলা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছন আতিবুল শাহ। দুশ্চিন্তা মুক্ত হয় পরিবার। মনের জোর ছিল, তবে এই দীর্ঘ পথ বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ তাঁকে যেভাবে সাহায্য করেছে তা ভোলার নয় বলেই বারবার জানাচ্ছেন ২৩ বছরের এই যুবক।

বছর পাঁচেক ধরে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল সহ বিভিন্ন রাজ্যে নতুন সরকারি বা বেসরকারি ভবনে এসি মেশিন বসানো জন্য ঠিকাদারের অধীনে কাজ করছেন তিনি। এবার লকডাউন শুরু হওয়ার দিন পনেরো আগে তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য গিয়েছিলেন আতিবুল। সেখানে কাজ শুরু হওয়ার আগেই লকডাউন হয়ে যাওয়ায় সমসায় পড়ে যান তিনি। খাওয়ার টাকাও শেষ হয়ে যায়।

হতদরিদ্র পরিবার। তাঁর আয়ের ভরসাতেই চলে। তবু উপায় না দেখে বাবাকে ফোন করেন আতিবুল। ছেলের বিপদ বুঝে ধারদেনা করে কোনওমতে তিন হাজার টাকা জোগাড় করে ছেলেকে পাঠান। বাবার পাঠানো সেই টাকাতেই একটি সাইকেল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন ওই যুবক।

দীর্ঘ যাত্রাপথ সাইকেলে পারি দিতে হবে। পথে কী অপেক্ষা করে আছে তা একেবারেই অজানা। হাতে সামান্য কয়েকটা টাকা। শুধু মনের জোর সম্বল করেই রওনা হয়ে যান। এক সময় টাকা পয়সা সব শেষ হয়ে যায় তাঁর। খিদে পেলে রাস্তায় ধারে সাইকেল দাঁড় করিয়ে দিতেন। কোনও দোকান ভাগ্যক্রমে খোলা থাকলে খাবার চেয়ে খেতেন। রাস্তার ধারের বাড়ি থেকেও খাবার চেয়ে খেয়েছেন। সারা দিন সাইকেল চালিয়ে রাতে কোনও মন্দির বা ব্রিজের নিচে আশ্রয় নিতেন।

এই ভাবে ১৩ দিন সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছেছেন ওই যুবক। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছে আতিবুলের। এই ক’দিন ছেলের সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করতে না পারায় কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁরা। ছেলে ফেরায় স্বস্তি ফেরে ঘরে। দীর্ঘ পথের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আতিবুল বারবারই ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশকে। তিনি বলেন, ‘‘দিনের বেলাটা যতটা পারতাম সাইকেল চালাতাম। রাতে থেকে যেতাম কোনও মন্দিরে বা কোনও ছাউনির নীচে। রাস্তার অনেকবার পুলিশ আমাকে খাবার কিনে দিয়েছে। টাকা দিয়ে সাহায্যে করেছে। আমি কলকাতায় ফিরব বলে পুলিশের কাছে রাস্তা জানতে চাইলে ওরা বলে দিত। টাকা নেই, খাবার নেই জানতে পারলেই কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। না হলে হয়তো এতটা পথ এসে পৌঁছতেই পারতাম না।’’

ওই যুবক গ্রামে এসে পৌঁছেছে, এই খবর জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় গ্রামে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মেহেবুব গায়েন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই যুবককে নিয়ে যান ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালে। সেখানে শারীরিক পরীক্ষার পর ওই যুবককে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here