রতন সিনহা, পুরী; করোনার থাবা৷ তাই গতবারের মতো এবারেও ভক্তশূন্য রথযাত্রার আয়োজন পুরীতে৷ বলা ভাল, গত বছরের থেকেও এ বছর পুরীতে কড়াকড়ি আরও বেশি৷ রবিবার রাত আটটা থেকেই পুরীতে জারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ কোনওভাবেই যাতে সাধারণ মানুষ বা পর্যটক রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে কোথাও ভিড় না করতে পারেন, তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশকর্মীকে৷

ছবি- তুলেছেন রতন সিনহা

গত বছরের মতো এবারেও শুধুমাত্র পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েতরাই রথের দড়ি টানবেন৷ যে সেবায়েতদের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে এবং যাঁরা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজই পেয়েছেন, শুধুমাত্র তাঁদেরকেই রথের দড়ি টানার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷

গত বছর রথযাত্রায় ভক্তদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ থাকলেও যে গ্র্যান্ড রোড ধরে পুরীর রথ যায়, তার দু’ ধারের হোটেল, লজগুলির ছাদ থেকে বহু পর্যটক এবং সাধারণ মানুষ রথযাত্রা দেখেছিলেন৷ নিয়মের ফাঁক গলে রথযাত্রার সময় পর্যটকদের সেই সুযোগ করে দিয়েছিল হোটেল, লজগুলি৷ এ বছর সমস্ত হোটেল, লজ কর্তৃপক্ষকে পুরী প্রশাসনের থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রথের যাওয়ার সময় পর্যটকদের ছাদে ভিড় করতে দেওয়া চলবে না৷ শনিবার বিকেলের মধ্যেই সমস্ত হোটেল, লজগুলিকে খালি করে করে দেওয়ার জন্য আগেই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল৷

তবে সাধারণ মানুষ যাতে টিভি এবং নেট মাধ্যমে রথযাত্রা সরাসরি দেখতে পারেন, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে ওড়িশা সরকার৷ সরকারের তরফেই সব টিভি চ্যানেল এবং ওয়েব পোর্টালগুলিকে রথযাত্রার সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বিনামূল্যে ফিড দেওয়া হবে৷

Happy Rath Yatra 2021: জয় জগন্নাথ! WhatsApp, Facebook, Instagram, Twitter-এ জানান রথযাত্রার উইশ বার্তা

প্রিয়জনেদের রথযাত্রার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে। জেনে নিন নিজের হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম কিংবা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া পেজে কী ভার্চুয়াল বার্তা শেয়ার করতে পারেন আপনি। 

  • মহাপ্রভু জগন্নাথ রথযাত্রার এই পবিত্র দিনে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে আনন্দ ও সুখে ভরিয়ে তুলুন। রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি ,শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!
  • “নীলাচলনিবাসায় নিতাই পরআত্মনে। বলভদ্র সুভদ্রারাং শ্রী জগন্নাথায়তে নমোঃ ।” রথযাত্রার অভিনন্দন ও শুভ কামনা। জয় জগন্নাথ!
  • পবিত্র রথযাত্রা উপলক্ষ্যে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ,অভিনন্দন ও ভালোবাসা। 
  • রথের দড়ির টানে ও রথের চাকার ঘূর্ণনের সঙ্গে আপনার ভাগ্যের চাকা ও ধাবমান হোক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে! মহাপ্রভু জগন্নাথ সহায়! 
  • কেটে যাক সব অন্ধকারময় দিন। শুভ হোক সব!  শুভ রথযাত্রা আপনার ও আপনার পরিবারকে। 
  • যে জগন্নাথ, তুমি সকলের মনের আশা পূরণ করে আলোময় করে দাও ভুবন ভরে। জয় জগন্নাথ! 
  •  জগন্নাথ হলেন রূপের জ্যোতি। জগৎ সংসারে রূপের মূরতি। দুঃখী তাপি পার করতে এসেছেন ভক্তের টানে পৃথিবীতে। শুভ রথযাত্রা!
  • প্রভ্য কৃপাময় তুমি, তোমার মনের কথা বলি। দূর করে দাও সকল ব্যথা। নিয়ে চলো আনন্দ যেথা। সকলকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা!   
  • রথযাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভাল হোক সকলের! 
  • রথযাত্রার পুণ্যতিথিতে আন্তরিকভাবে জগন্নাথদেবের কাছে এই প্রার্থনা করি আজ ও আগামী ভাল কাটুক সবার। শুভ রথযাত্রা!
  • এই পবিত্র তিথিতে মানুষের মধ্যে শান্তি সৌহার্দ্য ,সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অটুট মেলবন্ধন গড়ে উঠুক। রথযাত্রার শুভেচ্ছা! 
  • “জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে”! রথযাত্রার পূণ্য লগ্নে সকলকে জানাই শুভেচ্ছা। জয় জগন্নাথ! 

আজ রথের রশিতে টান পড়বে৷ যদিও করোনা আবহের জেরে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে৷ তবে ঘরে বসেই রথের দিন স্বাদ বদলানোর উপায় আছে। সৌজন্যে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। আজ তাই ঘরে বসেই অর্ডার করলে পেয়ে যাবেন পুরীর ভোগের স্বাদ। কী কী থাকছে স্পেশাল মেনুতে? থাকছে খিচুড়ি, ডালমা, লুচি, পটল রসা, পাঁপড়, জিভে গজা, রসবালি, ছানাপোড়া। কী ভাবে মিলবে এই স্পেশাল মেনু? ফোন করতে হবে বা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিতে হবে। নম্বরগুলি হল ৬২৯০২৫৫৮৫৯, ৮১৭০৮৮৭৭৯৪ ও ৯১৬৩১২৩৫৫৬।

সোজা রথ ও উলটো রথের দিন বাদে যদি দুপুরের খাবার চান তাহলে জানাতে হবে আগের দিন রাত ১০টার মধ্যে। আর যদি ডিনার করতে চান তাহলে জানাতে হবে দুপুর ১টার মধ্যে ওই দিনেই। খরচ কেমন? প্রতি প্যাকেট খরচ ধরা আছে ২৭৫ টাকা। আলাদা করে কোনও টাকা দিতে হবে না ডেলিভারি চার্জ বাবদ। রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট করপোরেশন এই স্পেশাল মেনু তৈরির দায়িত্ব নিয়েছে।

পঞ্চায়েত দফতরের পরিচালনাধীন যে সব স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে তাদের থেকে কেনা হবে সবজি। মূলত সরকারি উদ্যোগে থাকা খামার থেকেই এগুলি কেনা হবে৷ যারা এই সব রান্নায় সিদ্ধহস্ত তারাই এই সব পদ  বানাবেন। তাই পূর্ব মেদিনীপুর ও ওড়িশা  থেকেই নিয়ে আসা হচ্ছে পাচকদের৷ কারণ ছানাপোড়া, জিভে গজা আর পটলের রসার স্বাদ একমাত্র তাঁরাই দিতে পারবেন৷ কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে? এই স্পেশাল মেনু মিলবে ডানলপ থেকে বিমানবন্দর ১ নং গেট৷ গড়িয়ার কামালগাজি মোড় থেকে ঠাকুরপুকুর। নবান্ন সন্নিহিত এলাকাতেও যাঁরা থাকেন, তাঁরাও এই স্পেশাল মেনু পেয়ে যাবেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, করোনা বিধি নিষেধে অনেকেই যেতে পারছেন না পুরীতে। মানুষ ঘর বন্দি হয়ে আছেন। তাই সেই স্বাদ হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হল। আশা করি ‘জয় জগন্নাথ’ বলে মানুষ এতে উৎসাহ দেখাবেন।

রথযাত্রা উপলক্ষে, পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন হওয়া খুব শুভ বলে বিবেচিত। জগন্নাথ, শুভদ্রা ও বলভদ্রর জন্য তিনটি রথ তৈরি করা হয়। যা দেখার জন্য ফি বছর ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থী। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কোনও ব্যক্তি যদি রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অংশ নেন, তাহলে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে উঠতে পারেন তিনি। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব উপলক্ষে যাত্রাপালাও মঞ্চস্থের রীতি বেশ জনপ্রিয়। তবে গত বছর থেকে এই সব কিছুর আনন্দ – উদযাপনেই ভাঁটা পড়েছে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here