দেশের সময় ওয়েব ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, আর আক্রমনাত্বক হয়ে উঠছেন ইউনাইটেড ইন্ডিয়া জোটের নেতারা৷তার সাথে পাল্লা দিয়ে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আরও বেশি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷তাঁর আক্রমনের তিরে সবচেয়ে বেশি বিদ্ধ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বুধবার দিল্লিতে কেজরিওয়ালের ধর্না মঞ্চ থেকেও একইভাবে আক্রমণ বজায় রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বক্তৃতা রাখতে গিয়ে স্পষ্ট জানালেন, মোদী সরকারের দিন শেষ হয়ে এসেছে। পরের বার আর ক্ষমতায় আসবে না তাঁরা। পাশাপাশি বিরোধীদের প্যাঁচে ফেলতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তারও নিন্দা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই। সংসদে নরেন্দ্র মোদীর আজই শেষদিন ছিল। ৩–৪ মাসের কথা নয়। আর একমাস। মোদীর এক্সপায়েরি ডেট ওভার। আর একমাস পরই নির্বাচনী বিধি চালু হয়ে যাবে। তখন আর তিনি কিছু করতে পারবেন না। আর মাত্র ৩০ দিনের ব্যাপার। তখন আর সিবিআই, ইডি ব্যবহার করে ভয় দেখাতে পারবেন না। আর আমরা কাউকে ভয় পাইনা। কী করবে? মেরে ফেলবে, জেলে পাঠাবে? আমরা ভয় পাই না। সিবিআই থেকে শুরু করে অন্যান্য এজেন্সির ভয় দেখানো হচ্ছে। আরবিআই–সিবিআইকে শেষ করে দিয়েছে। আবার ফোন করে মিডিয়াকে বলবে এটা দেখিও না, সেটা দেখিও না। এভাবে গণতন্ত্রকে শেষ করে ফেলছে মোদদী সরকার।’ এরপরই তিনি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ুক। দিল্লিতে কেজরি লড়াই করবে আমরা সমর্থন করব। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু শক্তিশালী তিনি সেখানে লড়বেন। বাংলায় আমরা ৪২–এ ৪২ করব। তবে রাজ্যে রাজ্যে আলাদা লড়লেও জাতীয় স্তরে আমরা সবাই একসঙ্গে লড়ব।’ এরপর মোদী সরকারের চূড়ান্ত সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এর আগে অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু এরকম নিচু সরকার কখনও দেখিনি। সবাই চোর আর আপনারা সাধু!
গান্ধীজী, নেতাজি, আম্বেদকর, রাজেন্দ্রপ্রসাদ এরা কাউকে মানে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যে পুলিসকে খুন করা হচ্ছে। মিটিংয়ে যোগ দিতে যাওয়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে (অখিলেশ যাদব) আটকে দিচ্ছে। বাংলায় গিয়ে বলছে পুলিসের পদক কেড়ে নেবে। দেখি কতগুলি পদক কেড়ে নেয়। এখন দেশে দু’টি গব্বর সিং। একটি মোদী এবং অপরটি অমিত শাহ। ওদের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে। অথচ এরাই দেশে রাজত্ব করছে। একটি টাকাও না দিয়ে বলছে সব মোদী দিয়েছে, তাহলে আমরা কী করেছি? আসলে এটা এমার্জেন্সি থেকেও অনেক খারাপ সময়। মোদীবাবু, আপনি দেশকে ভাঙতে পারেন। কিন্তু আমরা দেশকে জুড়তে জানি। ‘ডেমোক্রেসি’ এখন ‘মোদীক্রেসি’ হয়ে গিয়েছে। দেশকে তাই একসঙ্গে থাকতে হবে। একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে।’
যন্তর মন্তরে ধর্নার পরেই রাতে দিল্লিতে শরদ পাওয়ারের বাড়িতে বৈঠকে বসেন মহাজোটের নেতারা। ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রাবাবু নাইডু, ফারুক আবদুল্লাহ এবং শরদ পাওয়ার। ঘণ্টা খানেক বৈঠকের পর সকলে মিলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেই সব নেতারাই একজোট হয়ে জতীয় স্তরে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন। বৈঠক অত্যন্ত গঠন মূলক হয়েছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। মোদীকে হঠাতে ভোটের আগেই জোট করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তিনি। মহাজোটে যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয় সেজন্য অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ২৬, ২৭ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি ফের দিল্লিতে মহাজোটের বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ফারুক আবদুল্লাহ, চন্দ্রবাবু নাইডু সকলেই একজোটে বলেছেন, এবারের লোকসভা ভোটে একটাই লক্ষ্য মোদী হঠাও। দেশের সংবিধান এবং গণতমন্ত্র রক্ষা করতে মোদী এবং অমিত শাহের নেতৃত্বে গঠিত বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আর এসএস এবং বিজেপির হাত থেকে দেশ থেকে বাঁচাতেই এই মহাজোট কাজ করবে। তার জন্য যেকোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ফারুক আবদুল্লাহ। দিল্লিতে ধর্না মঞ্চে সামিল হওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এই ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেস বা তৃণমূল যখন নিজেদের পৃথক নির্বাচনী ইস্তেহার তৈরির চেষ্টা করছে, তখন এই ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির গুরুত্ত্ব কোথায়। জাতীয় স্তরে যাই হোক না কেন, তৃণমূল স্তরের রাজনীতিতে তো ভিন্ন লড়াই, ভিন্ন জোট। তাই তৃণমূল স্তরের রাজনীতিতে এই কর্মসূচি খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেই তাঁদের মত। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের অন্য একটি অংশের মতে, এই কর্মসূচির একমাত্র গুরুত্ব হলো নির্বাচনের আগে জনসাধারণের মনে একটা ধারণা তৈরি করা। কী সেই ধারণা? সেই ধারণা হলো, এই বিরোধী দলগুলোও একসঙ্গে একটা ভালো ও জনকল্যাণমূলক সরকার গড়তে পারবে। মোদী বিরোধী বেশ কিছু বিষয়, যেমন দেশের অর্থনীতি, শিল্প, কৃষির দুরবস্থা, মেরুকরণের রাজনীতি দেশের মানুষের সামনে তুলে আনা। তবেই মোদী বিরোধিতাকে আরও বৃহত্তরভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে দেশের মানুষের কাছে বিরোধী জোটের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।